ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

শহরের ৮৫ শতাংশ নাগরিকই অন্তত একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৯
শহরের ৮৫ শতাংশ নাগরিকই অন্তত একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ডিএনসিসি এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে নাগরিক অ্যাডভোকেসি সভা

ঢাকা: শহর এলাকার ৮৫ শতাংশ নাগরিকই জীবনে অন্তত একবার ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক সময় জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তি এটিকে স্বাভাবিক জ্বর মনে করে থাকেন বলে ৮৫ শতাংশের অনেকেই এ বিষয়ে অজ্ঞ থাকেন যে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এমনটাই বলছে জাতীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
 

মঙ্গলবার (২১ মে) রাজধানীর মিরপুরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে নাগরিক অ্যাডভোকেসি সভা আয়োজিত হয়। ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৪ এর জন্য ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন অধিদপ্তরের অধীন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচির মেডিকেল অফিসার ডা. রাশেদুজ্জামান খান।

 

তিনি বলেন, শহর এলাকায় বসবাস করা নাগরিকদের মধ্যে ৮৫ শতাংশই জীবনে অন্তত একবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক সময়েই এটিকে সাধারণ জ্বর মনে করে অনেকেই গুরুত্ব দেয় না। তাই একজন রোগী হয়তো জানেন না যে তিনি ডেঙ্গু আক্রান্ত। ভয়ের কথা হচ্ছে যে, ডেঙ্গুর চারটি টাইপের মধ্যে একটি টাইপে আগে থেকেই আক্রান্ত হওয়া ব্যক্তি আরেকটি টাইপে আক্রান্ত হলে তার মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়। চিকুনগুনিয়া থেকেও ডেঙ্গু ভয়াবহ। কারণ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হবে না, কিন্তু ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু ঝুঁকি অনেক।
 
শরীরে জ্বর হলে সেটিকে সাধারণ জ্বর মনে করে অবহেলা না করার পরামর্শ দিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, দেশের সবগুলো সরকারি হাসপাতালে এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি হাসপাতালে আমরা ‘ডেঙ্গু কিটস’ সরবরাহ করেছি। এই কিটস দিয়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা করা হলে অতি সহজেই তা শনাক্ত করা যায়। তবে তিন দিন পর টেস্ট করা হলে সেটি শনাক্ত হবে না। এছাড়াও ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকেন জ্বর চলে যাওয়ার পর। অনেকেই এটিকে সাধারণ জ্বর ভেবে মনে করেন যে, জ্বর ছেড়ে দিয়েছে। আসলে এমনটা নয়। জ্বরের পর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকৃত লক্ষণ দেখা যায় যেমন হাতে র‌্যাশ ওঠা, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি। তাই জ্বর যেমনই হোক, সেটাকে অবহেলা করার ফলাফল জীবনঘাতী হতে পারে।
 
ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে ডা. রাশেদুজ্জামান খান বলেন, সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে থাকা। এডিস মশা পরিষ্কার এবং ঠাণ্ডা পানিতে জন্ম ও বংশ বিস্তার করে। তাই আমাদের আশেপাশে পরিষ্কার জায়গাতেও যেন পানি না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর ডেঙ্গু রোগে যদি আক্রান্ত হয়েই যায় কোনো ব্যক্তি তাহলে তার মূল চিকিৎসা হচ্ছে স্যালাইন পানি পান করানো। ওষুধের পাশাপাশি পরিমিত পরিমাণে স্যালাইন বা লবণ দেওয়া পানি, ডাবের পানি, জুস এবং স্যুপ খাওয়াতে হবে।
 
অ্যাডভোকেসি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মমিনুর রহমান। উপস্থিত নাগরিক প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি এবং করে যাবো। আমাদের সীমিত সামর্থ্য দিয়েই এডিস মশা নির্মূলে কাজ করছি। আমরা মশা ও মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন করছি। এক্ষেত্রে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসবে আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা দরকার। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যম আমাদেরকে যথেষ্ট সাহায্য করে যাচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইন গণমাধ্যমগুলো আমাদের কথাগুলো নিয়মিত প্রকাশের মাধ্যমে গণমানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।  

ডিএসসিসি’র ঊর্ধ্বতন এই কর্মকর্তা আরও বলেন, মশা কোথায় জন্মে সেগুলো আমরা সবাই জানি। এগুলো ধ্বংস করতে হবে। এজন্য দায়িত্ব আমাদের নিজেদেরকেই নিতে হবে। কারণ এর ক্ষতিকর প্রভাব আমাদের ওপরেই পড়বে; আমাদের সন্তানদের ওপর পড়বে।
 
সভায় ডিএনসিসি’র অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা গুল্লাল সিংহসহ অঞ্চলের আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।  
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৯
এসএইচএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।