ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নার্সের ভুল চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কলেজছাত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫২ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০১৯
নার্সের ভুল চিকিৎসায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কলেজছাত্রী

ঢাকা: গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে এক রোগীকে অপারেশনের আগে কেবিন থেকে নার্সদের দিয়ে এনেসথেসিয়া ইঞ্জেকশন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে ওই রোগী কলেজছাত্রী মরিয়ম সুলতানা মুন্নি (২১) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।

মরিয়ম সুলতানা মুন্নি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

বর্তমানে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শনিবার (২৫ মে) বিকেলে ঢামেক হাসপাতালে অবস্থিত বাংলাদেশ মেডিকেল রিপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে এসে ওই ছাত্রীর ভাই বিএম মুহিবুল হাসান এমন অভিযোগ করেন।

বিএম মুহিবুল হাসান বাংলনিউজকে বলেন, দুই মাস আগে মুন্নি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওখানে পরীক্ষা পর চিকিৎসকেরা জানান, মুন্নির পিত্তথলিতে পাথর হয়েছে। পরে অপারেশনের উদ্যোগ নিলে মুন্নির জন্ডিস দেখা দেওয়ায় তা স্থগিত করে দেওয়া হয়। তখন চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাসায় নেওয়া হয়।  

কিছুদিন পর মুন্নির আবারও ব্যথা শুরু হয়। পুনরায় তাকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে চিকিৎসকেরা আবারও কিছু পরীক্ষা করে মুন্নির পিত্তথলির পাশাপাশি পিত্তনালীতে পাথর দেখা গেছে বলে জানায় এবং জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে পরামর্শ দেয় সেখানকার চিকিৎসকেরা।  

পরে অন্য চিকিৎসকদের পরামর্শে মুন্নিকে ঢাকায় এনে পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারি তার পিত্তনালিতে কোনো পাথর নেই। পরে বিষয়টি গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তপন কুমার মণ্ডলকে জানালে তিনি ক্ষেপে যান এবং চ্যালেঞ্জ ছুড়ে তিনি অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে ডা. তপন অপারেশন থিয়েটারে নিয়েও মুন্নিকে অপারেশন না করে ফিরিয়ে দেন।

একপর্যায়ে চলিত মাসের মঙ্গলবার (২১ মে) আবারও মুন্নিকে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অপারেশনের জন্য চিকিৎসকেরা একটি ওষুধের লিস্ট আমাদের কাছে দেয়। সে অনুযায়ী ওষুধগুলো কিনে আনা হয়। সেই লিস্টে এনেসথেসিয়া ওষুধ ছিল।

ওইদিন ভোর সাড়ে ৬টার দিকে দায়িত্বরত নার্স কোহিলিকা ও শাহনাজ কেবিনে ঢুকে মুন্নিকে এনেসথেসিয়া ইনজেকশন দেন। এরপর মুন্নি ছটফট করতে করতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

মুহিবুল হাসান আরও বলেন, এনেসথেসিয়া ইনজেকশন পুশ করবে অপারেশন কক্ষে নেওয়ার পরে। তাও আবার সেটি দিবে চিকিৎসকেরা। এমন প্রশ্ন দুই নার্সকে করা হলে তারা জানান, ‘আমাদের ভুল হয়ে গেছে তবে ইনজেকশন পুশ চিকিৎসকই করতে বলেছেন’।

সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি চিকিৎসকদের জানালে, চিকিৎসকদের পরামর্শে চার তলার কেবিন থেকে মুন্নিকে দ্বিতীয় তলার ওটিতে নেওয়া হয়। ওটিতে নেওয়ার সময় বেশ কয়েক মিনিট পর মুন্নির অবস্থা আরও অবনতি হয়। কোনোমতে ওটিতে নেওয়ার পরে কিছুটা শান্ত হলে, দ্রুত তাকে খুলনা আবু নাসের হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে বুধবার (২২ মে) হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনার পরে সেখান থেকে ঢামেক আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।  

কন্নাজড়িত কণ্ঠে ভাই বিএম মুহিবুল হাসান বাংলনিউজকে বলেন, আমার বোন এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। এর দায় কে নেবে। যারা আমার বোনের করুণ অবস্থার জন্য দায়ী তাদের আমি বিচার চাই।

এ বিষয়ে ঢামেক হাসপাতালের কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া বিভাগের ডা. সাইফুল মাহমুদ তুষার বাংলনিউজকে বলেন, মুন্নি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৯
এজেডএস/এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।