সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে গিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা এ তথ্য জানা যায়।
রোগীর স্বজন ও রোগীরা বলছেন, আমরা এখানে মশারিবিহীন অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছি।
গত আটদিন ধরে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র গৌরিককে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন তার মা কবিতা সাহা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সন্তান নিয়ে খুব কষ্ট করে এখানে আছি। সিট পাইনি। বারান্দাতেই অবস্থান করছি। বারান্দার বাইরের পরিবেশ অত্যন্ত নোংরা। গত আটদিনে কাউকেই এখানে মশক নিধন বা ময়লা পরিষ্কার করতে দেখিনি।
তিনি বলেন, ছেলের চিকিৎসা চলছে। আগের চেয়ে তার অবস্থা ভালো। কিন্তু আমাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে। আবার এখান থেকেই না নতুন করে এই রোগে আক্রান্ত হই। বারান্দায় অত্যাধিক গরমে ফ্যান নেই, মশারি টাঙানোর ব্যবস্থাও নেই। সন্ধ্যা হলে প্রচুর মশা দেখা যায় হাসপাতালের ভিতরে। এখানে মশার ওষুধ দিয়েও মশা নিধন করা যাচ্ছে না। আর বারান্দা পুরোটাই খোলা। মশার ওষুধ কাজ করে না। তাই আমাদের মধ্যে সব সময় নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় কাজ করছে।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ায় মোহাম্মদপুর থেকে সাড়ে সাত বছরের মেয়ে খুশিকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন জান্নাত বেগম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত পাঁচদিন ধরে মেয়েকে নিয়ে ভর্তি আছি। প্রচণ্ড গরম এখানে। সারারাত ধরে মেয়েকে পাহারা দিচ্ছি তারপরও মশা নিয়ে আতঙ্কে আছি। এখানের পরিবেশ অনেকটাই নোংরা। এত লোকের ভীড়ে দারুণ বেগ পেতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাথরুমের সমস্যাটাও প্রচুর এখানে। দীর্ঘ লাইনে থেকেও বাথরুম খালি পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া হাসপাতালে রোগীর চেয়ে রোগীর স্বজনদের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। তাই এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক প্রফেসর ডাক্তার উত্তম কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, সার্বিক পরিস্থিতি বেটার হওয়ার সম্ভাবনা নেই। প্রতিদিনই আমাদের এখানে রোগী বাড়ছে।
তিনি বলেন, ৯৯, ১০৫, ১১২, ১৩০, ১৬৫, ১৭৯, ২০৭ ও ২১৭ গত এক সপ্তাহে এই হিসাব। ক্রমান্বয়ে রোগী বাড়ছে এখানে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি রোগীকে ভালো সেবা দিতে। কিন্তু সিট ক্যাপাসিটির চেয়ে দু’তিনগুণ রোগী হওয়ায় আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে আমরা নিজেরাও উদ্বিগ্ন। আমাদের ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীরাও না এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ধারণক্ষমতার অনেক বেশি রোগী আসায় বারান্দায় সিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
‘হাসপাতাল থেকে মশারি সরবরাহ করা হচ্ছে, তবে ফ্যানের ব্যবস্থা কম থাকায় গরমের কারণে অনেকে মশারি টাঙান না। এই পরিস্থিতিতে বারান্দা বা করিডোরে ফ্যান দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ’
উত্তম কুমার বলেন, এমনিতেই হাসপাতলে রোগীর ধারণক্ষমতার ডাবল ট্রিপলে চলে যায়। তারমধ্যে এরকম আতঙ্কিত মানুষজনসহ ডেঙ্গু রোগী যদি ২শ জন থাকে আর তাদের সঙ্গে যদি আরও ৮ থেকে ১০ জন করে স্বজ থাকে তাহলে পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের কী পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারছেন আপনারা।
তিনি বলেন, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি তাদের পাশে থাকার। আমরা ডাক্তার, নার্স, কর্মচারী এমনকী ছাত্রদেরও এ কাজে লাগাচ্ছি।
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, জ্বর হলেই হাসপাতালে চলে আসেন। রোগ নির্ণয় করে প্রথম দিন থেকে যদি চিকিৎসা করা যায় তাহলে রোগী অনেক দ্রুত সেরে উঠে। জ্বর হলে আমি যদি বড় ধরনের ঝুঁকিতে যেতে না চান তাহলে আমি অবশ্যই হাসপাতলে আসবো- এমনটাই হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগের আগের যে সিমটমগুলো ছিল সেগুলো এখন পরিবর্তন হয়েছে। বমি, ডায়রিয়ার সঙ্গে সামান্য জ্বর থাকলে ডেঙ্গু ধরা পড়ছে। তাই পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো ডেঙ্গু আছে কিনা।
সর্তকতা জরুরি, জ্বর হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে জ্বর নিয়ে যে সব রোগী এসেছেন এদের পঞ্চাশ শতাংশেরও কম রোগীর মধ্যে ডেঙ্গু ধরা পড়েছে। বাকিরা পঞ্চাশ শতাংশের অধিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন। তাই জ্বর হওয়া মাত্রই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৯
এসএমএকে/এএ