ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত আর সাধারণ হৃদরোগ এক নয়

মাসুদ আজীম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০১৯
হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত আর সাধারণ হৃদরোগ এক নয় প্রতীকী ছবি

ঢাকা: সাধারণ মানুষের মধ্যে বেশিরভাগই তাদের কার্ডিও ভাসকুলার ডিজিজ বা হৃদরোগ প্রোফাইল সম্পর্কে জানেন না। তারা সাধারণ হৃদরোগ ও হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। অর্থাৎ, এগুলো শরীরের একই অঙ্গের দু’টি ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা।

চিকিৎসকদের মতে, হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া আসলে ধমনি ব্লক হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তের সংবহনজনিত একটি সমস্যা। এর লক্ষণ তৎক্ষণাৎ কিংবা অ্যাটাকের কয়েক ঘণ্টা আগে দেখা যায়।

এর লক্ষণগুলোর মধ্যে প্রধানত রয়েছে অ্যাঞ্জাইনা পেইন, যা কয়েক মাস ধরে চলতে পারে, এমনকি বছর ভরও। যদিও হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে এটি অনেকটা ‘ইলেক্ট্রিক্যাল’ সমস্যা, যা হঠাৎ হৃদযন্ত্রের কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার কারণে হয়। যদি স্বল্প সময়ের মধ্যে এর উপযুক্ত চিকিৎসা না করা যায়, তাহলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

এ বিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মহসিন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বেশিরভাগ হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে দেখা যায় হৃদযন্ত্রের অনিয়মিত স্পন্দন এর পেছনে দায়ী। এর আরেকটি নাম হলো অ্যারিদমিয়াস। অস্বাভাবিক ও অনিয়মিত হৃদস্পন্দন প্রাণঘাতী হতে পারে, যা হৃদয়ের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এতে কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর মৃত্যু হতে পারে, যদি উপযুক্ত সময়ে তার চিকিৎসা করা না হয়। যদিও এই ধরনের প্রাণঘাতী অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চিকিৎসা করে থাকি তাদের, যারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব রোগী হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও ওবেসিটি বা স্থূলতার মতো সমস্যার শিকার এবং উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করেন, তারা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এই ধরনের রোগীদের নিয়মিত হার্ট চেকআপ ও বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া প্রয়োজন। তবে, যেসব রোগী হৃদযন্ত্র থেকে কম রক্ত পাম্প হওয়ার সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, যাদের এই সক্ষমতা মাত্র ৩৫৫ অথবা তারও কম (এজেকসন ফ্র্যাকশন) এবং ইতোমধ্যেই বাইপাস সার্জারি হয়েছে অথবা স্টেন্টিং করা হয়েছে করোনারি আর্টারি ডিজিজ এর কারণে, তারা এধরনের হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, যা কিনা খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই জীবনঘাতী হতে পারে।

তাছাড়া এই ধরনের রোগীদের জন্য যারা হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, তাদের এর হাত থেকে রক্ষার জন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিও ভাসকুলার ডিফাইব্রিলেটর (আইসিডি) মেশিন স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।  

আইসিডি একটি ছোট আকারের মেশিন যা পেসমেকারের মতো হয় এবং অ্যারিদমিয়াসের সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করা হয়। এটি হৃদগতি নিয়ন্ত্রণ করে। আইসিডি ধারাবাহিকভাবে হৃদগতির ওপর নজর রাখে। যখন এই হার অতি দ্রুত হয় বা অস্বাভাবিক ছন্দে চলে, তখন এটি  হৃদ পেশীতে এনার্জি ডেলিভার করে (ক্ষুদ্র, কিনতি শক্তিশালী শক)। ফলে হৃদগতি ফের স্বাভাবিক হয়ে যায়।  

তাছাড়া, আইসিডি এই ধরনের প্রতিটি ঘটনার ডেটা রেকর্ড করে যা চিকিৎসকরা হাসপাতালে রাখা সিস্টেমের তৃতীয় একটি অংশ দিয়ে প্রত্যক্ষ করবেন।  

আইসিডির বিষয়ে অধ্যাপক ডা. মহসিন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, যেসব রোগীদের আইসিডি ব্যবহার করা হয়েছে, তাদের হৃদগতি ধারাবাহিকভাবে নজরে রাখা হয়। এটিকে অনিয়মিত হৃদগতির সমস্যা রোধে পেসমেকারের সঙ্গে একযোগে ব্যবহার করা যায়। কাজেই যেসব রোগীর হৃদয়ের কার্যক্ষমতা কমে এসেছে (এজেকসন ফ্র্যাকশন) এবং অনিয়মিত হৃদগতি রয়েছে, তাদের জন্য একটি পৃথক ডিভাইস সিআরটি-পি ব্যবহার করতে হয়।  

‘যদিও হৃদগতির ছন্দের প্যাটার্নের ভিত্তিতে একজন রোগীকে আরও উন্নত ডিভাইস কার্ডিয়াক রিসিঙ্ক্রোনাইজেশন থেরাপি ডিফাইব্রিলেটর (সিআরটি-ডি) ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ডিভাইসটি কম্বো ডিভাইস নামেও পরিচিত। একে পেসমেকার ও আইসিডির কম্বিনেশন হিসেবেও গণ্য করা যায়। কারণ, তা অনিয়মিত হৃদগতি সমস্যা সিঙ্ক্রোনাইজেশনের মাধ্যমে সমাধান করে হৃদগতি মনিটর করে এবং প্রয়োজন হলে হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থেকে রোগীর জীবন রক্ষায় বৈদ্যুতিক শক দেয়।

ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির ক্ষেত্রে একধাপ অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে এই ডিভাইসে রয়েছে বিল্ট-ইন ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিও ভাসকুলার ডেইফাইব্রিলেটর (আইসিডি)। বুকের ত্বকের ভেতর এটি ইমপ্ল্যান্ট করা হয় এবং শিরার মধ্য দিয়ে হৃদযন্ত্রের সঙ্গে সংযোগসাধন করে। ফলে হৃদগতির ওপর নজরদারি সম্ভব হয়। যদি কোনো সময় অনিয়মিত অথবা কোনো ছন্দ না দেখা যায়, তাহলে এই ডিভাইস হস্তক্ষেপ করে এবং হৃদযন্ত্রকে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে আসতে সাহায্য করে।   

বাংলাদেশ সময়: ০৯১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৯
এমএএম/এইচএডি/একে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।