বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের অডিটোরিয়ামে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে।
‘অপরদিকে, বিভিন্ন জাঙ্কফুডের চমকপ্রদ বিজ্ঞাপন দিয়ে সবাইকে আকৃষ্ট করা হয়। এসব বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, একটা আইন দরকার। তা নাহলে ডায়বেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলবে। ’
বিশ্বের ১৭০টি দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য হলো- ‘আসুন, প্রতিটি পরিবারকে ডায়াবেটিস মুক্ত রাখি। ’
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. একে আজাদ বলেন, দেশে এইচআইভি এইডস, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া, এ তিন রোগে যত মানুষ আক্রান্ত হয়, তার চেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় কেবল এক ডায়াবেটিসে। অথচ ডায়াবেটিস নিয়ে যে পরিমাণ সচেতনতা তৈরি হওয়ার কথা ছিল, সেটা হয়নি। এটা আমরা যারা ডায়াবেটিস নিয়ে কাজ করি তাদের ব্যর্থতা। ডায়াবেটিস বহুলাংশে প্রতিরোধযোগ্য। ডায়াবেটিস পুরো বিশ্বেই রয়েছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বের চেয়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডায়াবেটিসের প্রকোপ বেশি।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এক কোটি পার হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন এটা কোনো ধনী দেশের পক্ষেও ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না। তাই একে প্রতিরোধ করতে হবে। এখন এটির নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত অন্য কোনো উপায় নেই। দেশে বর্তমানে ৭০ লাখ ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী রয়েছে। এটা যদি এখনই প্রতিরোধ করা না যায়, তাহলে কয়েক বছরের মধ্যেই এ সংখ্যা এক কোটি পার হয়ে যাবে।
বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড ডায়াবেটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান বলেন, যখন জেনেটিক কারণসহ অন্যান্য কারণ যোগ হয়, তখন এই রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। এই রোগের ব্যবস্থাপনায় দু’টি বিষয়ের ওপর জোর দিতে হয়। প্রথমত, যাদের ডায়াবেটিস হয়নি, তারা যেন ডায়াবেটিস মুক্ত থাকতে পারে সেজন্য আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দ্বিতীয়ত, যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে, তাদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করা এবং ডায়াবেটিসজনিত যেসব জটিলতা সৃষ্টি হয় সেগুলো থেকে দূরে রাখা।
প্রতিরোধ নিঃসন্দেহে সাশ্রয়ী উল্লেখ করে অধ্যাপক ডা. ফারুক পাঠান বলেন, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এটাও দেখা গেছে যে, সুশৃঙ্খল এবং স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। যাদের ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি থাকে, যেমন- ওজন বাড়া, কম কায়িক পরিশ্রম করা, বংশে কারো ডায়াবেটিস থাকা-এগুলো কারও থাকলে তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
‘এধরনের ইতিহাস যাদের রয়েছে তাদের আগে শনাক্ত করতে হবে। একইসঙ্গে তাদেরকে স্বাস্থ্যসম্মত জীবন যাপন করতে হবে। ভোজন-ভ্রমণ এবং ওজন, এ তিন বিষয়ে খেয়াল রাখলে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা অবশ্যই সম্ভব হবে। আবার যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তাকে নিয়মের ভেতরে থাকতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
এদিকে এই দিবস পালন উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে ডায়াবেটিক সমিতি। সকাল সাড়ে ৮টায় শাহবাগস্থ বারডেম কার পার্কিং থেকে রমনা পার্কের গেট পর্যন্ত পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এছাড়া সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে, রমনা পার্কের গেটের পাশে, ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবর এবং ন্যাশনাল হেলথ কেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন) ও বিআইএইচএস জেনারেল হাসপাতালের বিভিন্ন কেন্দ্র সংলগ্ন স্থানে বিনামূল্যে ডায়াবেটিস পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে (৪র্থ তলা) হ্রাসকৃত মূল্যে হার্ট ক্যাম্পও অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৯
এমএএম/এসএ