ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাটে ডায়রিয়ায় ৩০ শিশু ভর্তি

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
২৪ ঘণ্টায় লালমনিরহাটে ডায়রিয়ায় ৩০ শিশু ভর্তি

লালমনিরহাট: ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। হিমালয়ের পাদদেশের জেলা লালমনিরহাটে ঠাণ্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩০ শিশু। 

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বাংলানিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করেন।  

জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে লালমনিরহাটে শীতের প্রকোপ বেড়ে গেছে।

ঘন কুয়াশায় ঢাকা আকাশে গত দু’দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই। বৃষ্টির মতো পড়া কুয়াশার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে হিমেল হাওয়া। ফলে ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে মানুষসহ গৃহপালিত পশুপাখি। এ অবস্থায় নিদারুণ কষ্টে পড়েছেন তিস্তা ও ধরলার চরাঞ্চলের ছিন্নমুল মানুষ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউই বের হচ্ছে না। জনজীবনে বিপর্যস্থ নেমে এসেছে। সব থেকে কষ্টে পড়েছেন বৃদ্ধ, শিশু, প্রতিবন্ধীরা। সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসাবে কম্বল বিতরণ শুরু করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এছাড়াও শিশুদের জন্য নেই শীতবস্ত্র সোয়েটার। ফলে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগে।  


এদিকে, গত এক সপ্তাহে শীতজনিত রোগে প্রায় দেড়শ’ রোগী জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। যার অধিকাংশই শিশু ও বৃদ্ধ। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ৩০ শিশু ও শীতজনিত অন্যরোগে ২৫ জন বিভিন্ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।  
এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক রোগী। হাসপাতালগুলোর বহি বিভাগেও বেড়েছে শীতজনিত রোগীর ভিড়।  

তিস্তা চরাঞ্চল ঘেঁষা আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে জান্নাতি (১), সূর্য বাবু (৯ মাস) ও জান্নাত আরা জেরিন (২) নামে তিন শিশু ভর্তি হয়েছে।  

ভর্তি শিশু জান্নাতির বাবা জাহাঙ্গীর আলম বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচ/ছয় দিন ধরে বমিসহ পাতলা পায়খানা করছে জান্নাতি। পল্লী চিকিৎসকদের দেওয়া চিকিৎসাপত্রে কোনো কাজ না হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা ভর্তি করেন।  

কুয়াশার কারণে সব ধরনে দূরপাল্লার বাসের সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ধীরগতির কারণে এমনটাই ঘটছে বলে বাস চালকদের দাবি। ভোরে পৌঁছার কথা থাকলেও ঢাকা থেকে লালমনিরহাটমুখী সব নৈশ্যকোচ দুপুরে জেলার টার্মিনালে পৌঁছেছে।  

রংপুর আবহাওয়া কার্যালয়ের কন্ট্রোল রুম থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার রংপুর অঞ্চলের তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও লালমনিরহাটের সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া কার্যালয় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা সন্ধ্যায় আরও কমতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া পর্যবেক্ষকরা। সব মিলে ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে লালমনিরহাটসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে মানুষ।

জেলা ত্রাণ ও পুনবাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বাংলানিউজকে বলেন, সরকারিভাবে শীতবস্ত্র হিসেবে ২৮ হাজার ৭০০ পিস কম্বল বরাদ্দ এলে তা উপজেলা পর্যয়ে বিতরণ করা হয়েছে। মজুদ রয়েছে মাত্র ৪০০ পিস। এছাড়া শিশুদের জন্য সোয়েটার চেয়ে  মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হবে।  

সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বাংলানিউজকে বলেন, গত এক সপ্তাহে ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে ১২২ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার পাঁচটি হাসপাতালে ৩০ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। শীতজনিত রোগের চিকিৎসার সব ধরনের ওষুধ হাসপাতালগুলোতে মজুদ রয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর বাংলানিউজকে বলেন, শীতার্ত ছিন্নমুল মানুষের মধ্যে কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। নতুন করে শীতবস্ত্রের কম্বল ও শিশুদের জন্য সোয়েটার চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা বিতরণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৯
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।