ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

খসে পড়ছে পলেস্তারা, শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আতঙ্ক!

শেখ তানজির আহমেদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৯
খসে পড়ছে পলেস্তারা, শ্যামনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আতঙ্ক! খসে পড়ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদের পলেস্তারা। ছবি: বাংলানিউজ

সাতক্ষীরা: ছাদের পলেস্তারা খসে বেরিয়ে এসেছে রড। কার্নিশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় ফাটল। সিলিং ফ্যানের সংযোগস্থলেও একই অবস্থা। আর পলেস্তারা খসে পড়ছে সবসময়। এমনই জীর্ণশীর্ণ ভবনে চিকিৎসাসেবা চলছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। রীতিমতো আতঙ্ক নিয়েই এখানে ভর্তি হতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। কোনোভাবেই যেন ভবন ধসের আতঙ্ক পিছু ছাড়ছে না তাদের।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে, ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ায় এবং সিলিং ফ্যানের সংযোগস্থলের ফাটল বাড়ায় রোগী বেড ছেড়ে অনতিদূরের ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।   নারী ও শিশু ওয়ার্ডসহ এক্স-রে বিভাগ, স্টোর রুম এবং দোতলায় ওঠানামা স্থলের ছাদ সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থায় পৌঁছেছে।

খসে পড়ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদের পলেস্তারা।  ছবি: বাংলানিউজএছাড়া পুরুষ ওয়ার্ডসহ জরুরি বিভাগ, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সেবা সেন্টারের অবস্থান থাকা ভবনের কার্নিশে বড় বড় ফাটল সৃষ্টির পাশাপাশি আগাছা জন্মে রীতিমতো জঙ্গলের দৃশ্য ধারণ করেছে।  

আয়তনে দেশের সর্ববৃহৎ এ উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের জন্য নির্ধারিত একমাত্র এ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ভবন চার দশকেরও বেশি সময় আগে নির্মিত হয়। পরবর্তীতে মাঝেমধ্যে নামমাত্র সংস্কার কাজ করা হলেও কাজের গুণগত মান রক্ষা না হওয়াতে বর্তমানে তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।  

প্রতিনিয়ত আতঙ্ক ছড়াচ্ছে উল্লেখ করে মোস্তফা কামাল ও আবু মুছাসহ কয়েকজন সেবা গ্রহীতা বলেন, মানুষ চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসে। কিন্তু উল্টো হাসপাতালে এসে যদি দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় তবে, সে হাসপাতালের দরকার কী? 

প্রায় অভিন্ন অভিযোগ মাজাট গ্রামের রওশানা বেগম ও তারানীপুর গ্রামের আক্তার হোসেনের। আরও অসংখ্য সেবাপ্রত্যাশীর মত তারাও জানান, এক্স-রে রুম আর নারী ও শিশু ওয়ার্ডের দিকে গেলে শরীরের লোম খাড়া হয়ে যায়। খসে পড়ছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ছাদের পলেস্তারা।  ছবি: বাংলানিউজপুরাতন ভবনের দোতলার ওপর নিচে উভয় স্থানের ছাদ খুবই ভীতিকর অবস্থায় রয়েছে বলে দাবি তাদের।

নারী ওয়ার্ডে বোনকে ভর্তি করানো ভুরুলিয়া গ্রামের আশিকুর রহমান জানান, গ্রামে মারমারিতে তার বোন আহত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। কিন্তু তার জন্য নির্ধারিত বেডের ওপরের ছাদে ধস নামায় তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।  

শিশু ওয়ার্ডে চার মাসের সন্তানকে ভর্তি করানো মরিয়ম বিবি জানান, ছাদের পলেস্তারা ধসে লোহা বের হয়ে থাকার কারণে তিনি তার সন্তানকে নিয়ে মারাত্মক ভয়ের মধ্যে রয়েছেন। এমন দুরাবস্থা সেবা প্রার্থীসহ খোদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্যও আকঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমান শুষ্ক মৌসুমেও পুরাতন ভবনের পূর্ব ও উত্তরপ্রান্তে মলমূত্রবাহীসহ শৌচাগারের দূষিত পানি জমে রীতিমতো জলাকারে পরিণত হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্ষের তত্ত্বাবধায়ক উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অজয় কুমার সাহা বাংলানিউজকে জানান, মাত্র কয়েক মাস আগে দায়িত্ব নিয়েই তিনি শুরুতে চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধিসহ চিকিৎসক সংকটের সমাধানের চেষ্টা করেছেন।

পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে জীর্ণশীর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ৫০ শয্যার এ হাসপাতালকে একশ শয্যার উপযোগী করে গড়ে তুলতে নতুন ভবন নির্মাণসহ নানান চাহিদার কথা কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৯
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।