শনিবার (২০ জুন) বিকেলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, খুলনার ডা. রকিব হত্যার বিচার, বিয়ানীবাজারের ডা. জোবায়ের আহমেদের মুক্তি ও চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দাবিতে এফডিএসআর'র অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি এ দাবি জানায়।
সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা আবুল হাসনাৎ মিল্টন লিখিত বক্তব্যে বলেন, বর্তমান সময়ে মানুষের সুচিকিৎসা নিশ্চিত, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও কর্মক্ষেত্রকে নিরাপদ করতে সরকারের কাছে আমরা ১০ দফা দাবি জানাচ্ছি।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ১. করোনা মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শগুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করা এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আরও কার্যকর পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। শুধু তাই নয় প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি নেতৃত্বে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি করে তাদের সুপারিশ সময় বেঁধে দিয়ে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে সবধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
২. করোনা মোকাবিলায় সফল দেশগুলোর উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। প্রয়োজনে সেই দেশগুলো থেকে সহায়তা নিতে হবে।
৩. একই শহরের ভেতরে তিন রঙের জোন না করে বরং পুরো শহর/জেলা যেমন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রামসহ হটস্পট শহর/জেলাসমূহে কঠোরভাবে চার সপ্তাহের জন্য সম্পূর্ণ লকডাউন পালন করতে হবে। এসময়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্বেচ্ছাসেবক, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। দরিদ্র এবং চিকিৎসাসেবা প্রত্যাশী মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। যতটা সম্ভব টেস্ট করতে হবে। চার সপ্তাহের শেষ দিকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে লকডাউনের পরবর্তী সম্প্রসারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৪. কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে যে সব ডাক্তাররা ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের প্রণোদনার অর্থ দ্রুত দেওয়ার জন্য সরকারকে অনুরোধ করছি। কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণকারি বেসরকারি ডাক্তারদের জন্যও প্রণোদনা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। পরিবারের প্রধান উপার্জনকারীকে হারিয়ে ইতোমধ্যেই বেশকিছু পরিবার অর্থনৈতিকভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।
৫. কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার লক্ষ্যে ‘চিকিৎসকসহ সব স্বাস্থ্যকর্মী সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করুন। এ আইনে সকলের মতামত নিন এবং পৃথক আইন করুন। এর সঙ্গে কোনো ক্লিনিক , প্যাথলজি ল্যাব বা ব্যবসা পরিচালনাকে সংযুক্ত না করে কেবল স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা বিধান করুন। সেইসঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ‘হেলথ পুলিশ’ গঠন এখন সময়ের দাবি।
৬. কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মানসম্মত ‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী’ বা পিপিই দিতে হবে। পিপিইর ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে তা সহজলভ্য করতে হবে ও মুনাফালোভীদের অসাধু ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. সব চিকিৎসকের ন্যায্য বেতনভাতা নিশ্চিত করতে হবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে বেতন ও বোনাস কর্তন, অন্যায় ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। কম বেতন দিয়ে অতিরিক্ত শ্রম ঘণ্টা কাজ করানো বন্ধ করতে হবে।
৮. জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যখাতকে ঢেলে সাজাবার লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি মেডিক্যাল শিক্ষাকেও আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে।
৯. সারাদেশব্যাপী দরিদ্রদের মধ্যে/চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও অন্যান্য সম্মুখযোদ্ধাদের জন্য বিনামূল্যে/অন্যদের জন্য ন্যায্যমূল্যে মাস্ক, সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করতে হবে।
১০. স্বাস্থ্যখাতের বিরাজমান অব্যবস্থা জনগণের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি অবিশ্বাস ও অনাস্থা তৈরি করছে। স্বাস্থ্যখাতের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের গণমাধ্যমে স্ববিরোধী বক্তব্য মানুষকে হতাশ করে এবং এ কারণেই জনগণ লকডাউনসহ নানা বিষয় অমান্য করে। কারণ তারা আস্থাহীনতায় ভুগছে।
দীর্ঘদিন ধরে আমরা লক্ষ্য করছি যে, প্রধানমন্ত্রী যেখানেই হস্তক্ষেপ করেন সেখানে অব্যবস্থা দূর হয়। অথচ তাকে নানা বিষয়ে সম্যকভাবে অবহিত করা হয় না। আমরা দেখেছি তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে মানহীন মাস্ক, ডাক্তারদের আবাসন, গরিবদের মধ্যে সরাসরি অর্থবিতরণসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, যা সারাদেশে প্রশংসিত হয়েছে। শুধু তাই নয় তিনি সরাসরি চিকিৎসকদের প্রণোদনা দিয়েছেন এবং সামনে থেকে চিকিৎসকদের উৎসাহ দিয়েছেন, অভিভাবকের মতো সতর্ক করেছেন আবার স্নেহভরে প্রশংসা করেছেন। স্বাস্থ্যখাতের উচ্চপদগুলোতে কিছু পরিবর্তনও এনেছেন। আমরা এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।
আশা করি তিনি পুরো স্বাস্থ্যখাতকে আধুনিক বিশ্বের মতো করে ঢেলে সাজাবেন। এ কাজে তাকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবাখাতে জড়িত সবাই আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
এফডিএসআর ও তার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৪৬ হাজার চিকিৎসক বিশ্বাস করে তিনি বাংলাদেশকে ২১ শতকের স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে দিতে সক্ষম। এ কাজে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা তার নেতৃত্বে কাজ করতে প্রস্তুত বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২০
এসএমএকে/পিএস/আরবি/