বারবার হাত ধোয়ার বিকল্প হিসেবে নভেল করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। বাজারে তাই প্রচুর চাহিদা এই পণ্যটির।
খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে ২০০ মিলি লিটার স্যানিটাইজার ১৩০ টাকা দিয়ে কেনা প্রায় অসম্ভব, আর এই সুযোগটিই নিচ্ছে অসাধু চক্র। বর্তমানে প্রায় সবখানেই ফেরি করে, ভ্যানে, ফুটপাতে বসে অনেকেই নামহীন কোম্পানির স্যানিটাইজার বিক্রি করছে। দাম কম হওয়ায় নিম্নআয়ের মানুষ সেগুলোই কিনে ব্যবহার করছেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলো স্যানিটাইজার নয়, বরং ক্ষতিকারক পদার্থ দিয়ে তৈরি। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এতে স্যানিটাইজারের কোনো উপাদানই নেই। কেবল মিথাইল অ্যালকোহল বা কাঠের বার্নিশে ব্যবহারযোগ্য স্পিরিট দিয়ে বোতল ভরে রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের ইব্রাহিম কার্ডিয়াক সেন্টার থেকে খোলাবাজারের ওই স্যানিটাইজারগুলোর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে যে ফলাফল আসে তাতে চোখ কপালে ওঠার জোগাড়!
বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) বা সায়েন্সল্যাব থেকে ওই পরীক্ষাটি করান ইব্রাহীম কার্ডিয়ার সেন্টারের সহযোগী অধ্যাপক ও কনসালট্যান্ট ডা. সাকলায়েন রাসেল।
তিনি জানান, শাহবাগ থেকে ২টি, ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে সাপ্লাই করা একটি; মোট তিনটা হ্যান্ড স্যানিটাইজার সায়েন্সল্যাবে নিজ উদ্যোগে পরীক্ষা করতে দিয়েছিলাম। এতে খোলাবাজার থেকে কেনা স্যানিটাইজার দু'টিতে ৯৩ দশমিক ০৪ শতাংশ মিথানলের উপস্থিতি পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে বিসিএসআইআর। এটা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
আশ্চর্য্যের বিষয় হলো- স্যানিটাইজার তৈরির মূল উপাদান হলো ইথানল বা ইথাইল অ্যালকোহল। খোলাবাজারের স্যানিটাইজার দু'টিতে ইথানলের কোনো উপস্থিতিই নেই।
তিনি বলেন, ইব্রাহিম কার্ডিয়াকে সাপ্লাই করা হ্যান্ড স্যানিটাইজারে প্রয়োজনীয় সব উপাদান নির্দিষ্ট মাত্রায় পাওয়া গেছে। আর খোলাবাজারের স্যানিটাইজারে ইথানল তো নেই-ই, বরং মিথানল পাওয়া গেছে। এই মিথানল রংয়ে মেশানো হয়। কাঠে বার্নিশ করতে ব্যবহার করা হয়।
মিথানল ব্যবহারের কারণে অন্ধত্ব, পঙ্গু হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিবছরই শোনা যায়, ভেজাল মদ বা স্পিরিট খেয়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই স্পিরিটই হচ্ছে মিথাইল অ্যালকোহল, যা ব্যাপক বিষাক্ত।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০২০
ইইউডি/এমএইচএম