শনিবার (১১ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (সমন্বয়) ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি করোনা ইস্যুতে রিজেন্ট হাসপাতালের প্রতারণার বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
‘ওই অবস্থায় বেসরকারি পর্যায়ে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সুবিধা সৃষ্টির মহতী উদ্দেশ্য নিয়ে অপরাপর বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও উৎসাহ দানের লক্ষ্যে লাইসেন্স নবায়নের শর্ত দিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে ২১ মার্চ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়। ওই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পরিচয় থাকা তো দূরের কথা টক-শো ছাড়া আগে কখনও মো. শাহেদকে দেখেননি। তবে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর বেশ ক’বার শাহেদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এসেছিলেন। ’
‘সে সময় মো. শাহেদ তার সঙ্গে বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তির যোগাযোগ আছে ও তার ক্লিনিকগুলোতে কোন কোন বিশিষ্ট ব্যক্তির কোভিড আক্রান্ত আত্মীয় ভর্তি আছেন সেসব তথ্য জানানোর চেষ্টা করতেন। এদিকে এরই মাঝে গোয়েন্দা ও অন্যান্য সূত্রে রিজেন্ট হাসপাতালের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে কিছু অভিযোগ আসছিল। সে সবের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুলাই আকস্মিকভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে রিজেন্টের ক্লিনিকে র্যাব নিয়ে এক যৌথ অভিযান চালানো হয়। তাতে ক্লিনিকের নানা অনিয়ম ও প্রতারণার বিষয় ধরা পড়ে। রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমঝোতা স্মারকের বিষয়ে অধিদপ্তরের অবস্থান পরিষ্কার। একটি মহতী উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রতারিত হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৭ জুলাই আইনানুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। ’
বিজ্ঞতিতে আরও বলা হয়, স্বাভাবিকভাবেই এসবের পড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও রিজেন্ট কর্তৃপক্ষের সমঝোতা স্মারকের আর কোনো মূল্য নেই। আমাদের প্রত্যাশা, যারা এই প্রতারণার সঙ্গে জড়িত তারা আইনের অধীনে যথাযথ শাস্তি পাবেন। এ প্রসঙ্গে আরও জানানো যাচ্ছে যে, সার্বিক বাস্তবতায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় ও নিজস্ব উদ্যোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ঝটিকা পরিদর্শন কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছে, যা চলমান থাকবে।
করোনা ঘিরে বেসরকারি হাসপাতালের প্রতারণার ইস্যুতে বিজ্ঞতিতে আরও বলা হয়, জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামে অপর একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার বিষয়েও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে চাই। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক আরিফুল চৌধুরী ওভাল গ্রুপ লিমিটেড নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট গ্রুপেরও স্বত্ত্বাধিকারি। ওভাল গ্রুপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত স্বাস্থ্য সেবা সপ্তাহ ২০১৮-এর ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে। এছাড়া বিভিন্ন সময় চিকিৎসা পেশাজীবীদের সংগঠন বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনেরও একাধিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব পালন করে তারা।
‘দেশে কোভিড সংকট শুরু হওয়ার পর উক্ত আরিফুল চৌধুরী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আসেন এবং জানান যে, তিনি জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার (জেকেজি) নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়ক। জেকেজি গ্রুপ দক্ষিণ কোরিয়ার মডেলে করোনার নমুনা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে কিছু বুথ স্থাপন করতে চায়। এসব বুথের মাধ্যমে পরীক্ষা করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পিসিআর ল্যাবরেটরিগুলোকে সরবরাহ করা হবে। এ জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সরকারকে কোনো অর্থ দিতে হবে না। ধারণাটি ভালো এবং করোনার নমুনা সংগ্রহ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন এই বিবেচনা থেকে ওভাল গ্রুপের সঙ্গে কাজের পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় জেকেজি গ্রুপকে বুথ স্থাপনে অনুমতি দেওয়া যায় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মনে হয়। ’
‘একটি ভালো কাজের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার মানসে ঐতিহ্যবাহী তিতুমীর কলেজ কর্তৃপক্ষও জেকেজি গ্রুপের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ায়। পরবর্তীতে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জেকেজি গ্রুপকে প্রদত্ত বুথ পরিচালনার অনুমতি বাতিল করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। তাই দ্রুত কোভিড স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য ও সদিচ্ছা নিয়ে জেকেজিকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটি প্রতারণা করতে পারে এমন ধারণা আদৌ ছিল না। ’
এ সূত্রে বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, ইদানিং কোনো কোনো স্বার্থান্বেষী মহল কল্পিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে গণমাধ্যমকে বিভ্রান্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনাম নষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে সর্বোচ্চ শক্তি ও নিষ্ঠা দিয়ে কোভিডের মতো মহাদুর্যোগ মোকাবিলা করছেন। এই রোগের বিষয়ে কারও কোনো পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাদের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি অসততা বা অন্যায়ের আশ্রয় নেন সে ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের অবস্থান স্পষ্ট। অপরাধ প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী অপরাধীর যথাযথ শাস্তি হোক তা সবারই প্রত্যাশা। কিন্তু, অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগত সাধারণ সীমাবদ্ধতাগুলোকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না। সহানুভূতির বদলে তীর্যক মন্তব্য ও খণ্ডিত এবং বিকৃতভাবে তথ্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। অশালীনভাবে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে ব্যক্তিগত চরিত্র হননের প্রচেষ্টাও দেখা যাচ্ছে। এসবের পেছনে হীন ব্যক্তিস্বার্থও কাজ করছে বলে আমরা মনে করি।
বাংলাদেশ সময়: ০২৪৯ ঘণ্টা, জুলাই ১২, ২০২০
পিএস/এইচজে