প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের থাবায় ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা বিশ্ব। এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭ কোটি ৭১ লাখ ৭২ হাজার মানুষ।
এই ভাইরাসের তাণ্ডবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যেসব দেশ সেগুলোর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্যও। মাঝে সংক্রমণ কিছুটা কমলেও এবার সেদেশে হানা দিয়েছে নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস।
নতুন বৈশিষ্ট্যের এই করোভাইরাস আসলে কী?
নতুন বৈশিষ্ট্যের এই ভাইরাস অন্যান্য সংস্করণের তুলানায় নিজেকে দ্রুত প্রতিস্থাপন করছে। মূল ভাইরাসের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়ায়।
এই ভাইরাসে এমন মিউটেশন রয়েছে যা ভাইরাসের কোনও অংশকে প্রভাবিত করে, যা আরও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
এই মিউটেশনগুলোর কিছু পরিবর্তন ইতিমধ্যে ল্যাবে ধরা পড়েছে, যাতে দেখা গেছে এটি কোষগুলোতে সংক্রামিত হওয়ার পর ভাইরাসটির ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তবে ব্রিটিশ গবেষকরা বলছেন, এটি যে আগেরটির চেয়ে অনেক বেশি প্রাণঘাতী বা মারাত্মক, সেরকম প্রমাণ তারা এখনও পাননি। আর এটিকে মোকাবেলার ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের নতুন টিকা যে ভিন্ন ফল দিচ্ছে, সেটাও তারা বলছেন না।
করোনাভাইরাসের মহামারী শুরুর পর থেকেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, অন্য যেকোনও ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসের এই নতুন ভাইরাসটিও মিউটেশনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হতে পারে। তার বৈশিষ্ট্য এবং আচরণে পরিবর্তন ঘটতে পারে। লন্ডন এবং আশেপাশের অঞ্চলের ভাইরাসটি নতুন করোনাভাইরাসের এরকম এক পরিবর্তিত রূপ বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
যেটি গবেষকদের অবাক করেছে, তা হল, এই ভাইরাসটি অনেক বেশি সহজে এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে। আগেরটির তুলনায় এই নতুন করোনাভাইরাস ৭০ শতাংশ বেশি হারে ছড়াচ্ছে। ব্রিটিশ সরকারকে যে শুক্রবার আচমকা আবারও কঠোর লকডাউন জারি করতে হল, তার পেছনে এটাই কারণ। এটি সরকারের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ তৈরি করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা বলছে, এই নতুন বৈশিষ্ট্যের করোনাভাইরাস এখন নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়াতেও নাকি পাওয়া গেছে। এটা নিয়ে তারা তাই ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
যুক্তরাজ্যে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের এক করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর অনেক দেশ এখন ব্রিটেনের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বা নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বিবেচনা করছে।
নেদারল্যান্ডস এবং বেলজিয়াম এরই মধ্যে ব্রিটেনের সঙ্গে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লন্ডন হতে বেলজিয়াম পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিসও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার সরকার ফ্লাইট নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছে। ফ্রান্স এবং জার্মানিও একই ব্যবস্থা নেয়ার কথা বিবেচনা করছে।
ব্রিটেনে আবার কঠোর লকডাউন
ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক স্বীকার করেছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছিল বলে এই কঠোর বিধিনিষেধ জারি করতে হয়েছে। তিনি এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে এবারের কঠোর লকডাউন দুইমাস ধরে চলতে পারে।
ক্রিসমাসের আগের সপ্তাহে সরকারের এই পদক্ষেপ থেকে বোঝা যায়, সরকার পরিস্থিতিকে খুবই উদ্বেগজনক বলে মনে করছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন মাত্র কয়েকদিন আগে বলেছিলেন, ক্রিসমাসের সময় যদি বিধিনিষেধ শিথিল করা না হয়, সেটা হবে অমানবিক এবং তখন তিনি বিধিনিষেধ শিথিল করার কথাই বলেছিলেন।
কিন্তু তিনদিনের মাথায়, তাকে সেই পরিকল্পনা শুধু বাদই দিতে হলো না, উল্টো আর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে হলো।
এর কারণ একটাই, এখানে সংক্রমণ আবারও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সূত্র: বিবিসি
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০২০
নিউজ ডেস্ক