ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ভ্যাকসিন কিনতে দুই দফায় ১৪৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
ভ্যাকসিন কিনতে দুই দফায় ১৪৫৫ কোটি টাকা বরাদ্দ

ঢাকা: করোনা মহামারিরোধে জনগণকে বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তির আওতায় প্রথম ধাপে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আনবে সরকার। এ ভ্যাকসিন কিনতে ১ হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে প্রথম ধাপে ৭৩৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে অর্থবিভাগ। বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দ্বিতীয় ধাপে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দিলো অর্থবিভাগ। এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৪৫৫ কোটি ৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) সূত্রে জানা যায়, দেশে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসবে। বেক্সিমকো ২৭ জানুয়ারি ডিজিএইচএসর কাছে ভ্যাকসিন হস্তান্তর করবে। সরকার ২৬ জানুয়ারি থেকে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য অনলাইন নিবন্ধন শুরু করবে। এ ছাড়া ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী টিকা দেওয়া শুরু হতে পারে।

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রথম ধাপে জনগণের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন কিনতে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এরপর স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রস্তাবিত বরাদ্দ থেকে প্রথম ধাপে অর্ধেক বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর অর্থবিভাগ (বাজেট অনুবিভাগ-১) থেকে অর্থ বরাদ্দের মঞ্জুরি আদেশ জারি করা হয়। পরে আজ অর্থবিভাগের যুগ্ম সচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে দ্বিতীয় ধাপে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিভিন্ন খাতে এ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

দ্বিতীয় ধাপে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রস্তাবিত করোনা ভ্যাকসিনের ডোজ (ওষুধ ও প্রতিষেধক) বাবদ ৮০৯ কোটি ৬৮ লাখ ২৯ হাজার টাকার বিপরীতে ৭১৯ কোটি ৩১ লাখ ৪৫ হাজারটাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে দুই ধাপের বাজেটে আপ্যায়ন, প্রচার, ব্যবস্থাপনা, সম্মানি, জরিপ এবং চিকিৎসা খাতে বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করা হলেও তা বরাদ্দ রাখা হয়নি।

এছাড়া আপ্যায়ন ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ৬৩ কোটি ৪৫ লাখ ২২ হাজার টাকার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। প্রচার ও বিজ্ঞাপন ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ১৪ কোটি ১৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকার পরিপ্রেক্ষিতে কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ১ কোটি ২ লাখ টাকার পরিপ্রেক্ষিতেও কোনো টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ভ্রমণ ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ছয় কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার টাকার পরিপ্রেক্ষিতেও কোনো বরাদ্দ হয়নি। বরাদ্দ হয়নি চিকিৎসা ব্যয় খাতেও।

ওষুধ ও প্রতিষেধক বাবদ ৬২৮ কোটি ৪৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, পণ্যের ভাড়া ও পরিবহন ব্যয়ের প্রস্তাবিত ৭২ কোটি ৭২ লাখ ২৮ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য বিধান সামগ্রীর জন্য ৩ কোটি ৩৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণ ব্যয়ের জন্য প্রস্তাবিত ২ কোটি ৩৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ভ্রমণ খাতে ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা, চিকিৎসা ও শল্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বাবদ প্রস্তাবিত ১ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার টাকার বিপরীতে পুরোটাই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশলী এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি বাবদ প্রস্তাবিত ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার পুরোটাই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দ্বিতীয় ধাপে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শর্তগুলো হলো- ভ্যাকসিন ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। অগ্রিম অর্থ দেওয়ার ক্ষেত্রে সমপরিমাণ অর্থের ব্যাংক গ্যারান্টি নিতে হবে।   অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট-২০০৬ এবং দ্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ অনুসরণসহ যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে পালন করতে হবে এবং ভ্যাকসিন ক্রয় ও কোল্ড চেইন ইকুয়েপমেন্ট, এডি সাইরিংগস বক্সেস ক্রয় বাবদ ব্যয় সম্পাদনের এক মাসের মধ্যে ব্যয় করা অর্থের সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নসহ বিল-ভাউচার ও ব্যয় প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।

গত বছরের ৫ নভেম্বর যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের তৈরি এ টিকার ভারতীয় উৎপাদক সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চুক্তি স্বাক্ষর করে। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে অক্সফোর্ডের তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে সিরাম ইনস্টিটিউট। এরআগে সিরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের পরিবহন ব্যয়সহ প্রতি ডোজের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫ মার্কিন ডলার। ভ্যাকসিনের আনুষঙ্গিক উপকরণের জন্য ব্যয় ১ দশমিক ২৫ ডলার ধার্য করা হয়। এতে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন বাবদ মোট খরচ দাঁড়ায় ৬ ডলার ২৫ সেন্ট। প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নেওয়া তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের মোট মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ৫৮৯ কোটি ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সরকারিভাবে এ ভ্যাকসিন ক্রয়, পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসাবে এ টাকা বরাদ্দ চেয়েছিলো স্বাস্থ্য অধিদফতর।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২১
জিসিজি/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।