ঢাকা: দেশে শুরু হচ্ছে করোনা ভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রম। বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সর্বপ্রথম ভ্যাকসিন নেবেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। তার সঙ্গে আরও দুজন সিনিয়র স্টাফ নার্স মুন্নী খাতুন ও রিনা সরকারও টিকা নেবেন। পাশাপাশি একই হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে প্রথম ভ্যাকসিন নেবেনে মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আহমেদ লুৎফর মবিন।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ভ্যাকসিনেটর হিসেবে ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনা আক্তার ও দীপালি ইয়াসমিনের নাম রয়েছে।
সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা গণমাধ্যমকে বলেন, ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। তবে দেশের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে আমি ভ্যাকসিন নেব। অনেকেই ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলছেন। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে— এই ভ্যাকসিনটি কিন্তু তৈরি করা হয়েছে একটি ভালো উদ্দেশ্যেই।
তিনি বলেন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে যদি কেউ ভ্যাকসিন না নেয়, তবে সেটা ভুল হবে। কারণ অনেক ওষুধেও কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। আবার অনেকের শরীরে অনেক ধরনের ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। যদি আমার শরীরে অন্যান্য রোগ বেশি মাত্রায় না থাকে, তবে ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনো সমস্যা নেই।
২০১৩ সাল থেকে রুনু ভেরোনিকা কস্তা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নার্সিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেওয়া কস্তা আগে ইউনাইটেড হাসপাতালে কাজ করতেন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, প্রথমদিন বুধবারে শুধু কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালেই টিকা দেওয়া হবে। বাকি চার হাসপাতালে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে প্রাথমিক পর্যায়ের টিকাদান কর্মসূচি।
তিনি জানান, চিকিৎসক, নার্স, সেনাবাহিনীর সদস্য, পুলিশ, খেলোয়াড় ও সাংবাদিকসহ ২০-২৫ জনের টিকা দেওয়া হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা হাসপাতালে ২৮ জানুয়ারি থেকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এসব হাসপাতালের ৪০০ থেকে ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মী সবার আগে টিকা দেওয়া হবে। টিকাদানের পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে প্রতিটি হাসপাতালেই আলাদাভাবে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
২০ জানুয়ারি ভারত সরকারের উপহার দেওয়া অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড দেশে পৌঁছায়। সোমবার (২১ জানুয়ারি) দেশে আসে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা তিন কোটি ভ্যাকসিনের প্রথম ৫০ লাখ ডোজ। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত এই টিকা আনা হচ্ছে বাংলাদেশে সেরাম ইনস্টিটিউটের এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মাধ্যমে।
৬০ লাখ টিকা দেওয়া হবে প্রথম মাসে, দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ, তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ। প্রথম মাসে যারা পাবেন তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে তৃতীয় মাসে। চুক্তি অনুযায়ী বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস ঢাকা থেকে দেশের ৬৪ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে সব টিকা পৌঁছে দেবে।
কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল আহমদ জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে টিকা দেওয়ার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার বিকাল ৩টায় প্রাথমিক ড্রাই রান করা হবে। টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০২১
পিএস/এমজেএফ