ঢাকা: গতকাল পর্যন্ত দেশের সাড়ে ১৮ লাখ অর্থাৎ, মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের কিছু বেশি মানুষ টিকাদান কর্মসূচির আওতায় এসেছে। যা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর তোপখানা রোডের বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলনায়তনে বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত ‘করোনা সংক্রমণের গতিবিধি ও টিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় একথা বলেন সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর।
তিনি বলেন, এখনই মাঠ লেভেলে (পথে-ঘাটে) ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না। আমরা হাসপাতালভিত্তিক ভ্যাকসিনেশন করছি। আমাদের রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী একসঙ্গে ধাপে ধাপে ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর আগে কাউকেই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হচ্ছে না।
‘বাংলাদেশ তিন কোটি ভ্যাকসিন কিনেছে। ভারত থেকে ২০ লাখ উপহার পেয়েছি। আমাদের হাতে তিন কোটি ২০ লাখ ভ্যাকসিন আছে। বিশ্বজুড়ে ন্যায্যতার ভিত্তিতে সুষ্ঠুভাবে টিকা সরবরাহের প্রতিশ্রুতি নিয়ে গড়া জোট কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যা ২০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার জন্য সহায়তা দেবে। তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে ৩০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য। তারা ৩০ শতাংশ না দিলেও হয়তো ২৭ শতাংশ করতে চেষ্টা করছে। ’
তিনি বলেন, আগামী জুনের মধ্যেই কোভ্যাক্সের এক কোটি ২৮ লাখ ভ্যাকসিন পাবো। এর প্রথম চালান মার্চে ৫০ লাখ এসে যাবে। এর মধ্যে ২২ ফেব্রুয়ারি ভারত থেকে কেনা আরো ২০ লাখ ভ্যাকসিন আসবে।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ও জাতীয় কারিগরি উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান বলেন, দেশে সরকারিভাবে যে ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে এর প্রথম চালানের ৫০ লাখ টিকা এনেছে। এগুলো ম্যানুফ্যাকচারিং হয়েছে অক্টোবর মাসে। এর কার্যকরী মেয়াদ ছয় মাস। এটি সরকার এনেছে জানুয়ারি শেষের দিকে। দেওয়া শুরু হয়েছে ফেব্রুয়ারির শুরুতে। এর মেয়াদকাল এপ্রিলের শেষের দিকে শেষ হয়ে যাবে।
‘উপহার হিসেবে যে ভ্যাকসিন বাংলাদেশে এসেছে। তা তৈরি হয়েছে জানুয়ারিতে, মেয়াদ শেষ হবে জুনে। তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ভ্যাকসিন শেষ করার জন্য সরকার চিন্তা করেছিল প্রথম ডোজ নেওয়ার চার সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে প্রথম ডোজ দেওয়ার আট থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হলে ইমিউমিনিটি তৈরি হয়। সেই চিন্তা করে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয় আট সপ্তাহ পরে। এতে মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তবে ১২ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারলে সবচেয়ে উত্তম। ’
তিনি আরও বলেন, অক্টোবরের উৎপাদন করা ভ্যাকসিন আমদানি করলাম জানুয়ারিতে। আমাদের হাতে সময় খুব কম। সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আমাদের বারবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হলো। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার মেয়াদকাল মাত্র ছয় মাস। এজন্য এটি আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের যারা জড়িত তাদের অবশ্যই এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, গত চার সপ্তাহ যাবৎ আমাদের দেশের সংক্রমণ পাঁচ শতাংশের নিচে। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির খবর। তবে আমরা যেন আত্মতৃপ্তিতে না ভুগি। কারণ করোনা সংক্রমণ কমছে এটি ভালো খবর। এটি ধরে রাখতে হবে। একটি বৈশ্বিক সমস্যা। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেছে। যারা বিদেশ থেকে আসছে তাদের থেকেও নজর রাখতে হবে।
এসময় অনলাইনে যুক্ত ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অনুজীব বিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. সমীর কুমার সাহা, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ডা. আবু জামিল ফয়সাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২১
পিএস/এএ