কক্সবাজার: ডেঙ্গু এখন শুধু ঢাকা শহরের রোগ নয়, দেশের নগর মহানগর ছাড়িয়ে জেলা এমনকি উপজেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব। গত দুই সপ্তাহে কক্সবাজারের রামু উপজেলায় তিন জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের ধারণা, পরিবেশগত কারণে কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে ডেঙ্গু রোগের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে এখন সেখানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেশি। রোহিঙ্গাদের সংস্পর্শে যাওয়া হয় এমন লোকজনের মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ রোগ ছড়াতে পারে।
রামু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালের ল্যাবে গত সপ্তাহে একজন এবং চলতি সপ্তাহে রামুতে দুইজন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। তিন জনই ফতেখাঁরকুল সদর ইউনিয়নের। বিষয়টি আমাদের জন্য উদ্বেগের। তাই আগাম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা না নিলে হয়ত ব্যাপক আকারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তিনি আরও জানান, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়ায় হাসপাতালের মেডিসিন কনসালটেন্ট ডা. অলিউর রহমানকে সভাপতি এবং এমওডিসি ডা. এফাজুল হককে সদস্য করে ৬ সদস্যর মেডিক্যাল টিম গঠনের পাশাপাশি আগাম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রামু উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়েছে।
ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত কীট মজুদ রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে দুপুর দুইটা পর্যন্ত হাসপাতারের ল্যাবে এরপর ও পরদিন সকাল পর্যন্ত অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
কেউ জ্বরে আক্রান্ত হলে জ্বর না কমলে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করার আগে হাসপাতালে আসার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া।
তিনি জানান, সম্প্রতি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। এমন পরিস্থিতিতে ফুলের টব, প্লাস্টিকের পাত্র, ভাঙা হাড়ি-পাতিল, টিনের কৌটা, গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার, ভাঙা কলস, ড্রাম, নারকেল ও ডাবের খোসা, ফাস্টফুডের কন্টেইনার, এয়ারকন্ডিশনার ও রেফ্রিজারেটরের তলা এবং যেসব স্থানে মশা জন্মায় সেসব স্থানে পানি জমতে দেওয়া এবং বাড়ির ভেতর ও আশপাশ সব সময় পরিষ্কার রাখা এবং অবশ্যই মশারী ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. নোবেল কুমার বড়ুয়া।
ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন কক্সবাজার সদর হাসপাতালের পাঁচতলার ৫০৮ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এমএ কালাম সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও রামুর শ্রীধন পাড়ার বাসিন্দা নীলোৎপল বড়ুয়া।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আগে আমরা মনে করতাম ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুধুমাত্র ঢাকা-শহরে দেখা দেয়। আমাদের সেই ধারণা ভুল। এখন গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। এটি আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে আগে থেকে সতর্কতা এবং সচেতনতামূলক উদ্যোগ নেওয়া না হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহীন আব্দুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন উপজেলা থেকে কিছু কিছু ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছে। এখনো উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হারে দেখা যায়নি। তবে, রোহিঙ্গা শিবিরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেড়েছে।
তিনি বলেন, অবস্থান এবং পরিবেশগত কারণে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘিঞ্জি পরিবেশে অবস্থিত। এছাড়াও পানি জমে নিষ্কাশনের যথাযত ব্যবস্থা না থাকায় সেখানে মশা জন্মানোর সুযোগ বেশি। যে কারণে ক্যাম্পগুলোতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবও বেশি দেখা দিয়েছে।
রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে প্রতিনিয়ত যারা আসা-যাওয়া করে বিশেষ করে মানবিক সেবা কার্যক্রমে বিভিন্ন সংস্থায় কর্মরত লোকজন যারা প্রতিনিয়ত রোহিঙ্গাদের সংস্পর্শে যান তাদের মাধ্যমে হয়ত এ রোগটি এখানে ছড়াচ্ছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় থাকতেই এ বিষয়ে যথাযত ব্যবস্থা নিতে হবে বলে জানান ডা. আব্দুর রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০২১
এএটি