ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

স্বাস্থ্য

জলবায়ু পরিবর্তনে রোগের ধরন বদলাচ্ছে: ডা. লিয়াকত

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৭, ২০২২
জলবায়ু পরিবর্তনে রোগের ধরন বদলাচ্ছে: ডা. লিয়াকত

ঢাকা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের বিভিন্ন রোগের ধরন বদলে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসাবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী।

বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস।

এ বছর বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আওয়ার প্ল্যানেট, আওয়ার হেলথ’ (আমাদের গ্রহ, আমাদের স্বাস্থ্য)।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী পরিবেশগত কারণে প্রতিবছর ১৩ বিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। জলবায়ু সংকট মানব স্বাস্থ্যের জন্যও বর্তমানে একক বৃহত্তম হুমকি। তাই জলবায়ু সংকটও স্বাস্থ্য সংকট।

জলবায়ু সংকটের কারণে মানুষের কী ধরনের রোগব্যাধির সৃষ্টি হয় জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উষ্ণতা বাড়ছে, এতে রোগ জীবাণুর ধরণ বদলে যাচ্ছে। নিত্য নতুন ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া উদ্ভবের সঙ্গে আবহাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। ফলে সংক্রামক রোগগুলো নতুন মাত্রা লাভ করছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশানসহ ক্রনিক ডিজিজগুলোর প্রত্যক্ষ একটি প্রভাব রয়েছে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় শরীরের নানান পদ্ধতির পরিবর্তন হয়, এসব পরিবর্তন আমাদের ক্রনিক বা লাইফ স্টাইল ডিজিজগুলোকে বাড়িয়ে দেয়। ’

পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কোন প্রাণীর শরীর থেকে মানুষের শরীরে যদি কোন রোগ জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস বা ফাঙ্গাস বাসা বাঁধে তাকে জুনোটিক ডিজিজ বলা হয়। অর্থাৎ আগে যে রোগগুলো বন বাদাড়ে সীমাবদ্ধ থাকতো, বন বাদাড় পরিবেশ প্রকৃতি ধ্বংসের ফলে সেগুলো এখন মানুষের শরীরে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ’

ডা. লিয়াকত বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের আরেকটা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব হচ্ছে লবণাক্ত পানি। আমাদের খাদ্য চক্রেও লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়ছে। লবণ বাড়লে হাইপার টেনশন বাড়বে। বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়ছে। এসব কীটনাশক আবার বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের শরীরেই প্রবেশ করছে। ফলে আবার বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার জাতীয় রোগ বাড়ছে। বর্তমানে পরিবেশের জন্য প্ল্যাস্টিক একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা, আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। এসব প্লাস্টিকে আবার শরীরের নানা বায়োক্যামিক্যাল সমস্যার সৃষ্টি করে।

অন্যদিকে আবার বায়ুদূষণের ফলে আমাদের বিভিন্ন ধরনের বক্ষব্যাধি রোগের প্রকোপ বাড়ছে। নিশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থ আমাদের শরীরে প্রবেশ করছে। এসব ক্ষতিকর পদার্থ আবার শরীর থেকে বের করতে কিডনি এবং লিভারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। ফলে শরীরে টক্সিসিক ইফেক্ট বেড়ে যায়। অনেক পদার্থ আবার শরীরেই থেকে যায়, বের করতে পারে না। বিভিন্ন দূষিত পদার্থ বা খাদ্য আমরা যখন গ্রহণ করি, তখন আমাদের শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা কমে যায়। দূষণের ফলে আমাদের মানসিক অশান্তিও বেড়ে যায়। সুতরাং দৈহিক, মানসিক এবং সংক্রামক বা অসংক্রামক সব রোগ শোকের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। ’

পরিবেশ দূষণসহ বিভিন্ন দূষণ কমিয়ে কীভাবে মানুষের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমানো যায়, জানতে চাইলে এ চিকিৎসা বিজ্ঞানী বলেন, ‘পৃথিবীব্যাপী এখন চলছে উন্নয়নের নেশা। এই উন্নয়নের নেশাকে পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে হবে। স্বাস্থ্য বিষয়টা শুধু মাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ না। স্বাস্থ্য বিষয়টা শুধু হাসপাতাল ডাক্তার, নার্স আর সেবাদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। স্বাস্থ্য একটা বহুমুখী বিষয়, যা করোনা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে, স্বাস্থ্যের বিষয়টা ঠিক না থাকলে সব উন্নয়ন কাজ এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থমকে যায়। প্রতিটা উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে স্বাস্থ্যের বিষয়টাকে প্রাধান্য দিতে হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৭২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০২২
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।