ফরিদপুর: ফরিদপুরে তীব্র গরমে হঠাৎ বেড়েছে ডায়রিয়ার ভয়াবহতা। পুরো হাসপাতাল ভরা রোগীদের আর্তনাদ।
ডায়রিয়ায় ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স গোলাপী বেগম এবং সিনিয়র স্টাফ নার্স মর্জিনা খানম বাংলানিউজকে জানান, রোজা রেখে রোগীর পিছনে খাটতে সেবা দিতে আপত্তি নাই আমাদের কিন্তু নোংরা মলমূত্র, বমি, কাশি, পায়খানা পরিষ্কার করা ক্লিনার ও আয়ার খুবই অভাব।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত নতুন আরো ৭০ জন ডায়রিয়ার রোগী ভর্তি হয়। অন্যদিকে, দুপুর ২টা পর্যন্ত নতুন আরো ৯৬ জন ডায়রিয়ায় রোগী চিকিৎসা নিয়ে বাসায় চলে যায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১৭ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৮০ জন নারী ৩৩ জন শিশু ৪ জন। তারা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরছেন। তবে ৪০-৫৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ৩০-৪০ বছর বয়সী নারী ডায়েরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।
সরেজমিনে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ফরিদপুরের একমাত্র ডায়েরিয়া চিকিৎসা দেওয়া জেনারেল হাসপাতালের ১০ বেডের ডায়রিয়ায় ওয়ার্ডটিতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমপক্ষে ১৫০ জন। এক বেডে দুইজন করে, বারান্দা-খোলা জায়গায় কোথাও স্বজনদের দাঁড়ানোর কোনো জায়গাই ছিলো না।
গত ৪৮ ঘণ্টায় ডায়রিয়ার ভয়াবহতা বৃদ্ধির কারণে পুরো জেনারেল হাসপাতালের পুরো ওয়ার্ডকেই ডায়েরিয়া ওয়ার্ডের আওতায় আনা হয়েছে।
এর মধ্যে, মেইল মেডিসিন, ফিমেল মেডিসিন, মেইল সার্জারি, ফিমেল সার্জারি ডায়রিয়ায় ওয়ার্ড করা হয়েছে। এরপরও হাসপাতালের নোংরা পরিবেশ থাকার কারণে অনেকেই গাছতলা বসে স্যালাইন নিতে দেখা গেছে।
অপরদিকে, জেনারেল হাসপতালের শিশু ও মেডিসিন ডাক্তারের কক্ষের বারান্দা- ওটির বারান্দা ফ্লোর, পুরো সার্জারি ওয়ার্ড, সার্জারি ফ্লোর বারান্দায় তিল রাখার কোনো ফাঁকা নাই।
রোগী আর স্বজনদের ঠাসাঠাসি, পাশে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর মলমূত্র বমি ও নোংরা ছড়ানো ছিটানো ফ্লোরে মাছি ভনভন করে উড়ছে। কোনো কোনো রোগীর মলমূত্র ত্যাগ করা মাখানো শরীরের শাতাধিক মাছি পড়ে শরীর জড়িয়ে রাখছে। যেখানে সেখানে নোংরা কাপড় চোপড় পড়ে আছে। পরিস্কার করা বা একটু ধোঁয়া মোছার কোনো লোক নেই। এই পঁচা দুর্গন্ধে রোগীর সঙ্গে আগত স্বজনরা তারও অসুস্থ হয়ে পড়ছে।
ডায়রিয়ার ওয়ার্ডের সিনিয়র নার্স গোলাপী বেগম বাংলানিউজকে জানান, রোগীরা যে পরিমাণে হাসপাতাল নোংরা করছে তাতে ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৩ জন ক্লিনার ও ৩ জন আয়া দরকার। সেখানে মাত্র একজন ক্লিনার ও একজন আয়া কাজ করছে; কখনো আবার এক বেলা করেও না।
এ কারণে পুরো হাসপাতালে গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। অপরদিকে, ২০-২৫ মিনিট পর পর বিদ্যুৎ আসে-যায়। আবার কখনও ৩০-৪০ মিনিট পরও আসে। এতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীরা আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি স্বজনরা তালের পাখা দিয়ে বাতাস দিতে দিতে তারাও ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। অপরদিকে, ডায়রিয়ায় রোগীদের এমন পরিবেশ পরিস্থিতিতে খাবার পানির যেটুকু ব্যবস্থা করা হয়েছে তা একেবারেই নগণ্য।
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক গণেশ কুমার আগরওয়ালা বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালটিতে ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি ডায়েরিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক ও জনবল সংকটের কারণে আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০২২
এনটি