ঢাকা: দেশে প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুরোগী। রাজধানীসহ সারা দেশেই ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাসজনিত এ রোগ।
সাধারণত এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। তবে জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ চার মাস হলো ডেঙ্গুর মূল মৌসুম। চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এবার নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেও ডেঙ্গু রোগের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার দেরিতে এসেছে বর্ষা। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতে কারণে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকায় এডিস মশার প্রজনন বেশি হয়েছে। ফলে দীর্ঘায়িত হয়েছে ডেঙ্গু মৌসুম।
দেশে সর্বোচ্চ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ সালে। ওই বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ রোগী এবং মারা যান ১৭৯ জন। ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গুরোগীর সংখ্যা কম হলেও মৃত্যুর হার অনেক বেশি। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর দিক দিয়ে ইতোমধ্যে ২০১৯ সালের কাছাকাছি পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
শনিবার (৫ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৪৯৮ জন নতুন রোগী দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৩৭৪ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ৪১৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ৪২ হাজার ১৯৯ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ২৮ হাজার ২৭৫ জন এবং ঢাকার বাইরে সারাদেশে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সর্বমোট ১৩ হাজার ৯২৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও পাঁচজন মারা গেছেন। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ১৬৭ জন মারা গেছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু এবং ভয়াবহতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, এবারে ডেঙ্গুরোগী ২০১৯ সালের তুলনায় সংখ্যায় কম, তবে রোগের তীব্রতা এবং ভয়াবহতা অনেক বেশি। এবারে ডেঙ্গুর টাইপ ৩-৪ বেশি জটিলতা তৈরি করছে এবং এ দুই ধরনের ইনফেকশন বেশি হচ্ছে, এর ফলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বা মৃত্যু বেশি দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও করোনার কারণে অনেকের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে, তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তুলনামূলক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি অন্যান্য বছর থেকে চলতি বছর ডেঙ্গুতে শিশু ও বৃদ্ধরা তুলনামূলক বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এ দুই বয়সীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম। সব মিলে বলা যায়, এবারের ডেঙ্গু ২০১৯ সালের তুলনায় হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কম হলেও, মৃত্যু ভয়াবহতা বেশি।
এবারে ডেঙ্গুতে মৃত্যু বেশি কেন জানতে চাইলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যারা দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অবস্থা বেশি গুরুত্বর হচ্ছে। চলতি বছর ডেঙ্গুর টাইপ চার দ্বারা বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ডেঙ্গুর চারটি ধরনের মধ্যে দুটি দ্বারা আক্রান্ত হলে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। যে কোনো জ্বরকেই অনেক গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু চিকিৎসার বিভিন্ন খরচের কারণে অনেকে পরীক্ষা করাতে চান না। জ্বর বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন ডেঙ্গু, করোনা, টাইফয়েড বা ইনফ্লুয়েঞ্জার কারণেও হতে পারে। জ্বর হলে ইনফ্লুয়েঞ্জা বা করোনা মনে করে অনেকে পরীক্ষা না করেই থাকছে। অবস্থা বেশি গুরুতর হলে তখন হাসপাতালে যাচ্ছেন। ফলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২২
আরকেআর/আরআইএস