কলকাতা: দুর্গাপূজায় কলকাতায় যেমন মানুষের ঢল নামে, যেমনভাবে রেড রোডে হয় ঈদের নামাজ, তেমনি বড়দিন উপলক্ষে শহরের পার্কস্ট্রিট অঞ্চলে নেমেছে মানুষের ঢল। বিভেদ ভুলে বড়দিনের উৎসবে শামিল হয়েছে শহরবাসী।
শহরে উৎসবের সূচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। শনিবার রাতে ঘড়ির ঘণ্টায় যখন বারোটা বাজার শব্দ, ঠিক তখনই ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকা স্যান্টা হঠাৎ আবির্ভাব হন রাজপথে। ঘণ্টা বাজিয়ে স্মরণ করিয়ে দেন, বড়দিন মানে প্রভু যিশুর জন্মদিন। এক মুহূর্তের মধ্যে সেই জনজোয়ার থেকে একটাই শব্দ, শহরের আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হতে লাগল ‘মেরি ক্রিসমাস’।
ঠিক সেই লগ্নে ভাতিজা অভিষেককে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগমন ঘটল কলকাতার রবীন্দ্র সদন সংলগ্ন ক্যাথিড্রাল চার্চে। নিজের ভঙ্গিতে প্রার্থনা সারলেন তিনি। সাদরে গ্রহণ করলেন চার্চের ফাদারের দোয়া। বোধহয় তিনি জানান দিলেন, ব্যাক্তি মমতা যাই বিশ্বাস করুক না কেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা সব ধর্মের, সব মানুষের।
তবে রোববার (২৫ ডিসেম্বর) দিনের শুরুতেই গির্জায় গির্জায় খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা নিজেদের পরিবারের উদ্দেশ্যে যিশুর কাছে প্রার্থনা করেন। সেন্ট পলস থেকে ব্যান্ডেল চার্চ, সব চার্চেই সকাল থেকে ভিড় লেগে রয়েছে। রোববার ভারতে সাপ্তাহিক ছুটি থাকার কারণে মমতা ঘোষণা দিয়েছেন, সোমবার পশ্চিমবঙ্গে পালিত হবে বড়দিনের ছুটি। ফলে শনি-রবি-সোম পরপর ছুটি থাকায় শহরবাসী এখন ফেস্টিভ মুডে।
শহরবাসীর সাথে উৎসবে শামিল হয়েছে বাংলাদেশিরাও। ঢাকার একটি স্কুলের শিক্ষক জনি রহমান বলেন, বাংলাদেশে এরকমভাবে বড়দিন পালন হয় না। দুর্গাপূজা অনেক বড় করে হয়। অবশ্যই আমাদের ঈদ তো আছেই। কিন্তু বড়দিনটা এরকম হয় না। এখানে এসে যেটা দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে যে, আমি কোনো ইউরোপ কান্ট্রিতে ক্রিসমাস উদযাপনে শামিল হয়েছি। এক কথায় অনবদ্য।
খুলনাবাসী অরিন্দম একজন ইউনিভার্সিটি অধ্যাপক। তার অভিমত, কলকাতায় বড়দিন পালন করতে এসেছি তা নয়, ছুটি আছে তাই কলকাতায় আসা। সেই সঙ্গে সেলিব্রেশনে শামিল হয়েছি। এখানে থাকার বিষয় ছাড়া সব কিছুই ভালো। থাকার অবস্থাটায় এমন সমস্যায় পড়েছিলাম যে, প্রায় দশ থেকে বারোটা হোটেল খোঁজার পর একটা হোটেল পেয়েছি, সেখানে ১২শ রুপির ভাড়া দুই হাজার চেয়েছিল, ১৮শ-তে ফাইনাল করি। আগে যতবার এসেছি একটা ভাড়া নির্ধারিত থাকত। এবার দেখলাম নেই। তা ছাড়া সব কিছুই ভালো।
তবে অরিন্দমের মত, সড়কপথে বেনাপোল-পেট্রাপোল এখন ভারতে আসতে হয় খুব সকালে, নয় দিন শেষে। যদি দশটা নাগাদ বেনাপোল ইমিগ্রেশন করা হয়, তাহলে নোম্যান্সল্যান্ডে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লেগে যাবে।
শুধু বাংলাদেশি নয়, কলকাতায় এখন বিদেশিদেরও ভিড়। কলকাতা থেকে দার্জিলিং, সিকিম সর্বত্রই এখন মানুষের জনজোয়ার। পাহাড়েও এখন উৎসবের ঢল। ফলে সেখানেও হোটেল পেতে বড় সমস্যায় পড়ছেন, এমন বাংলাদেশিদেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২২
ভিএস/আরএইচ