কলকাতা: বাঙালি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত বিতর্ক কমার কোনো লক্ষণ নেই। বরং আরও বেড়ে চলেছে।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শান্তিনিকেতনে নোবেলজয়ীর বাসভবন প্রতীচীতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে রাজ্য সরকারের ভূমি সংস্কার দফতর থেকে সংগ্রহ করা নথি অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এরপরই রীতিমতো হুংকার দিয়ে বলেন, আমি এর শেষ দেখে ছাড়ব। অমর্ত্যদা’কে অপমান করার অধিকার কারো নেই।
মমতার দাবি, বিশ্বভারতীকে জমি দিয়েছিল রাজ্য সরকার। বিশ্বভারতী জমি পেয়েছে বিনা পয়সায়, আবার খবরদারি করছে। ওনাকে জমি নিয়ে মিথ্যা বলছে।
মমতা বলেছেন, অমর্ত্যদা’কে বিজেপি যেন অপমানের চেষ্টা না করে। আর বিজেপির লোকরাও যেন এসব না করেন। ওনাকে বিজেপি সম্মানের চেষ্টা তো করে না, উপরন্তু ১৩ ডেসিবেল জায়গার জন্য অপমান করে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে, এদিন থেকে অমর্ত্য সেনকে রাজ্য সরকারের তরফে জেড প্লাস নিরাপত্তা দেওয়া হবে। সেই মতো পুলিশ প্রশাসনকে শিগগিরই পদক্ষেপ নিতে বলেন মমতা। এসময় তিনি বিশ্বভারতীর উপচার্যকে বিজেপি গৈরিকীকরণ করেছে বলে অভিযোগ তোলেন।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর কথার পরও বিশ্বভারতী নিজের অবস্থান থেকে সরছে না বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন উপাচার্য ড. বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বরং লড়াই জারি রাখার বার্তা দিয়েছেন তিনি।
উপাচার্য বলেছেন, আমরা মামলা করব। উনি (অমর্ত্য) যদি আদালতে যান, ভালো তো। আমরাও চাইছি আদালতে কাগজপত্র জমা দিক। জমি সংক্রান্ত বিষয়টা পরিষ্কার হোক। তাতে ওনারও অসম্মান হবে না, আমাদেরও অসম্মান হবে না। আমাদেরও তো খারাপ লাগছে, আমাদের কি ভালো লাগছে এসব করতে? আমাদের কাছে জমির কাগজ আছে। জমি তো বিশ্বভারতীর।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, জমি কি রাজ্য সরকারের? জমি তো বিশ্বভারতীর। আর উনি (অমর্ত্য) লিজ হোল্ডার। ওনারও ব্যক্তিগত জমি নয়। আমরা ইচ্ছা করলে লিজ রিনিউ করতে পারি আবার নাও করতে পারি। জমির নথিতে তো এখনও অমর্ত্য সেনের নাম নেই। তার বাবা আশুতোষ সেনের নামেই রয়েছে। ওনার বাবা তো মৃত। ২০০৬ সালে শেষ রিনিউ হয়েছে। লিজ হোল্ডার জমিতে কী করে থাকতে পারে মৃত ব্যক্তির নাম? অবশ্য গায়ের জোরে সব কিছু হয়।
এ বিষয়ে বিজেপির জাতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরার অভিমত, মুখ্যমন্ত্রীর দাবি যদি সঠিক হয়, তাহলে উপাচার্যের ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত। পাশাপাশি মমতার উদ্দেশে অনুপম বলেন, বিশ্বভারতী স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান। উপাচার্য কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তার দায় কখনোই বিজেপির নয়।
মুখ্যমন্ত্রীর গৈরিকীকরণের অভিযোগ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেছেন, গৈরিকীকরণ কোথায় হয়েছে? উনি (মমতা) উদাহরণ দিক। মুখ্যমন্ত্রী যাই বলুক, জমি নিয়ে আমরা আমাদের দাবিতে অনড়।
অমর্ত্য সেন বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে যে সব বিতর্ক মিটে যাবে, তা আমি মনে করি না। আমাকে যারা ভিটে ছাড়া করতে চাইছে, তাদের উদ্দেশ্য অন্য রকম। এর মধ্যে রাজনীতি, সমাজনীতি রয়েছে। আমার বাবার কেনা এবং লিজ নেওয়া জমি, ওদের মতে নানা কারণে আমার প্রাপ্য নয়। আসলে রাজনীতিগতভাবে আমার মত ওদের থেকে আলাদা। আমি সাম্প্রদায়িকতার বিরোধী। যারা প্রধানত সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করেন, তাদের কাছে অসাম্প্রদায়িকতা বাঞ্ছনীয় পরিস্থিতি নয়। তাই তারা আমাকে বাধা দেবেনই।
প্রসঙ্গত, বিশ্বভারতীর দাবি, ১ একর ৩৮ শতক জমি অর্থাৎ ৩ বিঘা ৩৮ শতক জমিতে অমর্ত্য সেনের প্রতীচী অবস্থিত। তাতে অমর্ত্য সেনের জমি ১ একর ২৫ শতক। বাড়তি ১৩ শতক জমি বিশ্বভারতীর। যা তিনি দখল করে রেখেছেন। অমর্ত্য সেনের দাবি, জমি পৈত্রিক সম্পত্তি। বিশ্বভারতীর দাবি, লিজ হোল্ডার প্রয়াত। এ নিয়েই অমর্ত্য সেন ও বিশ্বভারতীর মধ্যে সমস্যা চলছে। তবে পরিস্থিতি যেদিকে এগুচ্ছে, এ সমস্যার সহজে নিষ্পত্তি হবে না বলেই মনে করছেন রাজ্যবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ০১২৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩১, ২০২২
ভিএস/এসআই