ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ভারত

চিৎপুর স্টেশনে ভিসা তথ্যকেন্দ্র চালু করলো বাংলাদেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
চিৎপুর স্টেশনে ভিসা তথ্যকেন্দ্র চালু করলো বাংলাদেশ

কলকাতা: ভারতে এই প্রথম যাত্রী পরিবহন এলাকায় একক দেশ হিসেবে ভিসা তথ্যকেন্দ্র চালু করলো বাংলাদেশ।

সোমবার (১৩ মার্চ) ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে রেল চলাচল অঞ্চল কলকাতা (চিৎপুর) স্টেশনে তথ্যকেন্দ্রটির উদ্বোধন করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস, ডিইউ ডিজিটাল গ্লোবালের চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র রাই এবং ভারতের পূর্ব শাখার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার দীপক নিগম।

ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক যাত্রী চলাচল অঞ্চলে (স্থল-রেল-বিমান) এ ধরনের ভিসা তথ্যকেন্দ্র পরিষেবা কোনো দেশই এখনও চালু করেনি। সেদিক থেকে এ ধরনের অভিনব উদ্যোগ বাংলাদেশই প্রথম নিলো।

বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, ভারতীয়দের মধ্যে বাংলাদেশ যাওয়ার প্রবণতা আগের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। প্রত্যেক বছরই আমরা বিগত বছরের তুলনায় বেশি ভিসা ইস্যু করছি। অপরদিকে, ভারতীয় হাইকমিশনও বাংলাদেশিদের ভিসা আগের তুলনায় অনেকটাই বাড়িয়েছে। দুই দেশের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ দ্রুত হারে বাড়ছে। আর তার জন্য দুই দেশের ভিসার প্রয়োজন। ভিসা করার জন্য তথ্য থাকাটা খুবই জরুরি। আগ্রহী ভারতীয়দের সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশ ভিসা তথ্যকেন্দ্র খোলা হলো। আমরা আশাবাদী যে উদ্দেশ্যে এই কাজ শুরু করলাম, এতে ভারতীয়দের পাশাপাশি বা অন্য দেশের মানুষ যারা কলকাতা থেকে বাংলাদেশ ভ্রমণে যান তাদের জন্য বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এখান থেকে তথ্য নিয়ে বাংলাদেশের ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন সবাই।



মিশনের ভিসা প্রধান আলমাস হোসেন জানিয়েছেন, কলকাতার বাংলাদেশ মিশন থেকে গড়ে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ ভারতীয়কে ভিসা দেওয়া হচ্ছে। অর্থাৎ আমরা যদি মাসিক হিসাব করি সেক্ষেত্রে প্রায় ২০-২১ হাজার ভিসা দেওয়া হচ্ছে। আমরা যেই ভিসাগুলো দিচ্ছি তার অধিকাংশই টুরিস্ট ভিসা। এর সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। গত বছর আমরা এক লাখ কুড়ি থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার ভারতীয়দের ভিসা দিয়েছি। আমি ধারণা করছি, চলতি বছরের শেষে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।

তিনি আরও বলেন, ভিসার সংখ্যা বাড়ায় এর ভালো প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়ছে। সে কারণে বড়সড়ো সমস্যা না থাকলে আমরা ভিসা ক্যানসেল করি না।

উদ্বোধনের দিন থেকেই বহু ভারতীয় বাংলাদেশ ভ্রমণের ভিসার জন্য তথ্যকেন্দ্র থেকে আবেদনের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। কীভাবে ভিসার আবেদন করতে হয়, আনলাইন ভিসার ফর্ম কীভাবে পূরণ করতে হয়, কোথায় আবেদনের জন্য পাসপোর্ট জমা দিতে হবে—এসব তথ্য জেনে নিয়েছেন।

ডিইউ ডিজিটাল গ্লোবাল কর্তৃক বাংলাদেশ ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের অপারেশন ম্যানেজার সরফরাজ বলেন, ইতোমধ্যে সল্টলেকে ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টার চালু হয়েছে। সেখান থেকেও অনেকেই তথ্য সংগ্রহ করছেন। সেখানেও চাপ বাড়ায় আমরা বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসকে জানাই। অনুমোদন পাওয়ার পরই কলকাতা স্টেশনে ভিসা তথ্যকেন্দ্র চালু করি। খোলা মাত্রই অনেক সাড়া পাচ্ছি। আমরা লক্ষ্য করেছি, শুধু তথ্যের জন্য অনেকেই সল্টলেক আসতে চাইতেন না। কলকাতা স্টেশনে হওয়ায় অনেকের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি আগামীতে বহু ভারতীয় বাংলাদেশে যাওয়ার আবেদন করবেন।

মূলত, পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড় এবং সিকিম—এই ছয়টি রাজ্য কলকাতার বাংলাদেশ মিশনের ভিসা জোনের মধ্যে পড়ে। ফলে বছরে শুধু এই মিশন থেকেই কমবেশি এক লাখের বেশি ভারতীয় বাংলাদেশের ভিসা পেয়ে থাকেন। যে কারণে, কলকাতার পার্কসার্কস লাগোয়া ৯ নম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরণিতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন থেকে যে ভিসা দেওয়া হতো তা ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে সল্টলেক সেক্টর ফাইভে ডিইউ ডিজিটাল গ্লোবাল নামে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হয়েছে। তারা আবেদনকারীর পাসপোর্টসহ সমস্ত নথি সংগ্রহ করে থাকে। তবে সম্পূর্ণ বিষয়টি বাংলাদেশ মিশন মনিটরিং করে। আবেদন বাবদ ভিসা প্রসেসিং ফি হিসেবে ওই সংস্থাটি ৮৫০ রুপি করে নিয়ে থাকে।

পেশায় শিক্ষিকা মালতী সরকার মালদা থেকে কলকাতা স্টেশনে এসেছেন মৈত্রীর টিকিট কাটতে। তিনি বলেন, আমরা যারা কলকাতার বাইরে থাকি তাদের জন্য রেলস্টেশনে ভিসা তথ্যকেন্দ্রটা খুবই জরুরি ছিল। এই সাধু উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানাই।

মৈত্রীর টিকিট কাটতে আসা সুমন মুন্সী দাবি জানান, ভিসা প্রসেসিং ফি বন্ধ করুক বাংলাদেশ। কারণ, এই নিয়ম শুধু কলকাতা মিশনের আওতায় যারা পড়েন তাদের জন্য। অথচ দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই, আগরতলা, গোহাটি থেকে যারা ভিসা নিচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে কোনো প্রসেসিং ফি দিতে হচ্ছে না। বাঙালি হিসেবে একচোখা মনোভাবটা ভালো লাগছে না!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।