কলকাতা: এই ধরুন, খুলনার চুই ঝালের খাসির মাংস, মুন্সীগঞ্জের আদলে ইলিশের লেজের ভর্তা, চাপাইনবাবগঞ্জের বেগুন সিরাজী, পদ্মাপাড়ের ইলিশ পোলাও, ময়মনসিংহের চিংড়ি মাছ দিয়ে মাসকলাই ডাল, চট্টগ্রামের আইরচিংড়ি দোমাছা, মেহেররপুরের মিষ্টি কুমড়ার মালিশ, পুরান ঢাকার কুবুলি, সিলেটের আনারসী কাতলা, পুরান ঢাকার মোরগ মাসল্লাম, মিষ্টি আলুর খাটাই, ডেজার্টে সিরাজগঞ্জের পেপের পায়েস, রাজশাহীর হাঁড়িভাঙা কাচা আমের হালুয়া আর নয়নার ফিউশন লাচ্চা সেমাইয়ের লাড্ডু। খাস কলকাতায় বসে পাতে যদি পরে বাংলাদেশ! কেমন হবে?
কলকাতার আহেলি নামে এক রেস্তোরাঁয় এরকম ৩৯টি জেলাকে একপাতে এনেছেন কলকাতার কন্যা নয়না সেনগুপ্ত তথা বাংলাদেশি বউ নয়না আফরোজ।
এবার যেমন ২৪ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত, ‘ফ্লেভার অব বাংলাদেশ’ শিরোনামে নানা স্বাদের খাবার পাওয়া যাবে আহেলির ৩টি আউটলেটে- কলকাতার পিয়ারলেস ইন, শরৎ বোস রোড এবং রাজারহাটের এক্সিস মলের আহেলিতে। ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর—এই ৮ ডিভিশনের ৩৯ রকমের পদ মিলছে সেখানে।
তবে কয়েক বছর আগে তার জার্নিটা শুরু হয়েছিল কিছুটা জেদের বশে। নয়না জানান, কলকাতায় বাংলাদেশি খাবার বলে যা চালানো হয়, তা আদতে বহু অংশে বাংলাদেশের নয়। তিনি বলেন, কলকাতায় যে সব বাঙালি রেস্তোরাঁগুলো বাংলাদেশি রান্না বলে মানুষকে খাওয়াচ্ছে, আমার সন্দেহ আছে সেগুলো বাংলাদেশি কিনা। কারণ নাম হলেই তো হবে না। প্রিপারেশনটাও বাংলাদেশি হতে হবে। বাংলাদেশি উপাদান কলকাতার কয়টা রেস্তোরাঁ ব্যবহার করে?
নয়না বলেন, দেখুন কলকাতার মানুষ শেকড়ের টানে হোক বা আবেগের বশে হোক অথবা বাংলাদেশকে ভালোবেসে হোক, বাংলাদেশের নামের খাওয়ারগুলো খাচ্ছেন তো। কিন্তু, কলকাতার সিংহভাগ রেস্তোরাঁ বাংলাদেশের আদলে হয় না। আপনার তো রেস্তোরাঁ নেই? খাওয়াতে হলে রেস্তোরাঁ খুলতে হবে নাকি? আমি যখন কলকাতায় আসি। বিভিন্ন হোটেল বা রেস্তরাঁর শেফদের নিয়ে বাংলাদেশি একটা ফুড ফেসস্টিভ্যাল করি।
শুধু তাই নয়, বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) আহেলি সন্ধ্যাটায় নয়নার আয়োজন ছিল ‘ইফতার উইথ ডিনার’। রান্না করে খাওয়ালেন কলকাতা বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের। আর যে সব শহরবাসী রোজায় ছিলেন, এমনকি যারা রোজা রাখেননি তারা টের পেলেন বাংলাদেশিদের ইফতারের পাতে কী কী থাকে?
নয়নার মতে, আরে বাবা আমি যে অথেন্টিক বাংলাদেশি রান্না করছি এর সার্টিফিকেট কে দেবে? বাংলাদেশিরাই দিতে পারেন!
যেসব বাংলাদেশিরা এদিন নয়নার রান্নার স্বাদ নিলেন, তাদের মত অনেকদিন বাদে শহরের রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশের স্বাদ পেলাম। বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, এটা শুধু স্বাদ বলবো না, একটা নস্টালজিক ব্যাপার। বিশেষ করে আমার বাড়ি, শ্বশুরবাড়িসহ সব জায়গার রান্নার স্বাদ পেলাম বহু বছর বাদে।
শুধুই কি রান্না করলে বাংলাদেশি স্বাদ পাওয়া যায়? নয়নার কথায় শুধু রেসিপি জানলে তো হবে না। যে দেশের রান্নায় যা উপাদান ব্যবহার করা উচিত। যেমনটা আমি করেছি।
অবশ্য এখনই বানিজ্যিকভাবে শহরে রেস্তোরাঁ করার পরিকল্পনা নেই নয়নার। তিনি বলেন, এখন তো আমার আসল বাড়ি বাংলাদেশে। আমি কি করে ওখান থেকে কাজ করব?
তবে খাঁটি বাংলাদেশি রান্না পেয়ে বিষয়টা ভাবাচ্ছে কলকাতার আহেলির মার্কেটিং ম্যানেজার দিব্যজ্যোতি চৌধুরীকে। তারও মতে, রান্নার স্বাদ ও ঘ্রাণ স্থানীয় অঞ্চেলের উপাদান পেলেই সঠিক হয়। আমার ঠিক করেছি কালিজিরা চাল, মাসকালাইয়ে ডাল এবং সাতকড়া লেবু, চুইঝাল-সহ আরও কয়েকটি উপাদান বাংলাদেশ থেকে আনবো। সেক্ষেত্রে নয়নাদির সহযোগিতা লাগবে।
ফলে নয়না না ভাবলেও ব্যবসায়িকভাবে জড়িয়ে পড়তে চলেছেন? হাসতে হাসতে নয়নার অভিমত, ভালোই তো। এতে যেমন প্রত্যন্ত বাংলাদেশিদের উপকার হবে তেমন বাংলাদেশের স্বাদ পাবে কলকাতা। বহুবার শহরবাসীকে রান্না করে খাওয়ালাম। এবার নয় অন্যভাবে ভাববো।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০২৩
ভিএস/এমজেএফ