কলকাতা: পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র দু-একদিন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ঈদুল ফিতর হওয়ার সম্ভাবনা শনি কিংবা রোববার।
তবে ঈদ যেদিনই হোক না কেন, তার আগে কেনাকাটির ধুম পড়েছে কলকাতার নিউমার্কেট, গড়িয়াহাট কিংবা নাখোদা মসজিদ চত্বরে। প্রবল তাবদাহ উপেক্ষা করেই অনেকেই সারছেন শেষবেলার কেনাকাটা।
ঈদের আগে শেষ মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) নিউমার্কেট এলাকাতেও ব্যাপক ভিড় লক্ষ করা গেছে। নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে শুরু করে সিম পার্ক মল কিংবা আশপাশের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকানগুলোতেও ছিল জনস্রোত। সদ্য শেষ হওয়া চৈত্র সেলেও এতটা ভিড় দেখা যায়নি। তবে এসব মার্কেটে এখন ভিড় বঙ্গবাসী তথা স্থানীয়দের। এ সময় বাংলাদেশিদের দেখা মেলে না।
কলকাতার লাগোয়া জেলা হাওড়ার আন্দুল থেকে এসেছেন মমতা মল্লিক নামে এক স্কুল শিক্ষিকা। সঙ্গে এনেছেন বোন এবং মাকে। প্রতিবছরই নিউমার্কেট এলাকার শ্রীরাম আর্কেড থেকে ঈদের কেনাকাটা করেন। এবারও এসেছেন।
তিনি জানান, স্কুল ছুটি না থাকায় আগে ঈদের বাজার করা সম্ভব হয়নি। তাই এই দিনটাকে বেছে নিয়েছেন তিনি। মূলত, তীব্র গরমের কারণে পশ্চিমবঙ্গ সরকার সোমবার (১৭ এপ্রিল) থেকে শনিবার (২২ এপ্রিল) এক সপ্তাহের ছুটি ঘোষণা করেছেন। তাপদাহের কারণে এই ছুটি পেলেও ঈদ উপলক্ষে অনেকেই ছুটিটা বাসায় বসে নষ্ট করতে চাইছেন না।
শ্রীরাম আর্কেডে নিত্য নতুন ডিজাইন পাওয়া যায়। নিউমার্কেট অঞ্চলে এই শিক্ষিকার পছন্দ শ্রীরাম আর্কেড। হাওড়াতেও প্রচুর পোশাকের দোকান রয়েছে, তবুও কেন কলকাতায়? শিক্ষিকা মমতার অভিমত, আসলে নিউমার্কেট এক ঐতিহ্যবাহী জায়গা। এখানে নিত্য নতুন সব ধরনের ডিজাইন মেলে। স্টকও প্রচুর। তাই ভালো লাগে নিউমার্কেট এবং শ্রীরাম আর্কেড থেকে শপিং করতে।
প্রসঙ্গত, কলকাতাবাসী যখন শপিং মল কাকে বলে জানতেন না। তারও আগে থেকে নিউমার্কেটে অবস্থিত এই শ্রীরাম আর্কেড। যেসব বাংলাদেশি কলকাতা থেকে কেনাকাটা করেন তারা এই মার্কেট সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। অনেকটা বাজার কলকাতা বা সিটি মার্টের মতো। এক ছাদের তলায় সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায়। মমতা নিজে রোজা রেখেছেন। বোন এবং মাও রোজা আছেন। কেনাকাটার মাঝে পথেই ইফতার সারবেন বলে জানান এই পরিবার।
মধ্য কলকাতায় কেনাকাটার জন্য যেমন জনপ্রিয় নিউমার্কেট। তেমন দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা গড়িয়াহাট। সেখানেও রয়েছে ব্যাপক ভিড়। সল্টলেকের তথ্য প্রযুক্তি বিভাগের কর্মী আসিফ ইকবাল। তিনি এসেছেন তার স্ত্রীকে নিয়ে। পরিবারের জন্য কেনাকাটা সারছেন। তার পছন্দ নিউমার্কেট নয়, গড়িয়াহাট। বছর দশেক হলো কলকাতার বাসিন্দা হয়েছেন আসিফ। গ্রামের বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলায়। গড়িয়াহাট থেকে পরিবার-পরিজনদের জন্য পাঞ্জাবী কিনছেন। ঈদে যাবেন গ্রামে।
তার অভিমত, কলকাতায় পাঞ্জাবীর সেরা কালেকশন মেলে নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিট এবং গড়িয়াহাটে।
দক্ষিণ কলকাতার শেষপ্রান্ত গড়িয়া থেকে এসেছেন রেহেনা খাতুন। তিনি একজন গৃহবধূ। সঙ্গে ১২ বছরের সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা সারছেন। তিনি বলেন, গড়িয়াহাটের অনেক সুবিধার পোশাক পাওয়া যায়। বিশেষ করে এ অঞ্চলে ফুটপাতে যে ধরনের পোশাক পাওয়া যায়, তা সচরাচর নিউমার্কেটেও মেলে না। তাই শেষবেলার টুকিটাকি কেনাকাটা সারছেন। এখান থেকেই কিনেছেন কয়েক ধরনের ওড়না, গরমের টিশার্ট এবং বাসায় ব্যবহার করার মতো থ্রিপিস।
কেনাকাটার পাশাপাশি একই সঙ্গে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে টেইলারিংয়ের দোকানগুলোয়। এসব দোকানে অর্ডার নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। রাতদিন কাজ করে অর্ডার শেষ করতে ব্যস্ত কর্মীরা। এক কর্মী জানান, একমাস কেউ বাসায় যেতে পারিনি। ঈদের অর্ডার থাকায় রোজার ইফতার থেকে সোহরি সবই কিনে করতে হচ্ছে এখানে। এখন এটাই আমাদের বাসা।
একইভাবে নাখোদা মসজিদ চত্বরে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে পাঞ্জাবী, থ্রিপিস, লেহেঙ্গা, লুঙ্গি, টুপি এবং আতরের।
তবে শহরের বিভিন্ন মার্কেটে এবারে ঈদের কেনাকাটার ভিড় লক্ষ্য করা গেলেও বড় বড় শপিংমলগুলোতে কেনাকাটার ভিড় লক্ষ করা যায়নি। বিশেষ করে নামি ব্র্যান্ডের শপিংমলগুলোতে। কলকাতার জনপ্রিয় শপিংমল সাউথ সিটির এক ব্র্যান্ডেড কোম্পানির আউটলেটের এক কর্মী জানান, ঈদ উপলক্ষে যেসব মানুষ শপিংমল থেকে কেনাকাটা করেন, তাদের কেনাকাটা এক প্রকার শেষ। তাই শেষ সময়ে ক্রেতাদের খুব একটা দেখা মেলে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৩০ ঘণ্টা, এপিল ১৯, ২০২৩
ভিএস/এনএস