ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

আগরতলায় গড়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় অর্কিডেরিয়াম

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
আগরতলায় গড়ে উঠেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় অর্কিডেরিয়াম ছবি: বাংলানিউজ

আগরতলা (ত্রিপুরা): বন সংরক্ষণ অধিনিয়ম তথা ফরেস্ট কনজারভেশন এক্ট (এফসিএ) অনুসারে ত্রিপুরায় গড়ে তোলা হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় অর্কিডেরিয়াম। যা বিরল প্রজাতির অর্কিড সংরক্ষণ, বৃদ্ধি ও গবেষণার পাশাপাশি নতুন নতুন হাইব্রিড প্রজাতির অর্কিড তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

প্রকৃতিতে অনন্য সুন্দর এক উদ্ভিদ হচ্ছে অর্কিড। এদের ফুল যেমন সুন্দর তেমনি তাদের পাতা কাণ্ডও দেখতে অনেক সুন্দর। তাই শখের বাগানিদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই অর্কিড। বিশ্বে বর্তমানে ৩০ হাজারের বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি প্রজাতিই বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। বাকিগুলো বন্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশে রয়েছে।

বিশ্ব জুড়ে যেভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বন ধ্বংস হচ্ছে, এর ফলে অন্যান্য গাছের সঙ্গে নষ্ট হচ্ছে অর্কিডের প্রাকৃতিক আবাসও। ত্রিপুরাসহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রচুর সংখ্যায় নানা প্রজাতির অর্কিড রয়েছে। তবে এই অঞ্চলেরও বিভিন্ন জায়গায় এখন অর্কিডের প্রাকৃতিক আবাসস্থল নানা কারণে নষ্ট হচ্ছে।

ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন জায়গার অর্কিডকে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকারের বনদপ্তর আগরতলায় একটি অর্কিডেরিয়াম গড়ে তুলেছে। রাজধানী আগরতলার শালবাগান এলাকার অক্সিজেন পার্কের মধ্যে বিশাল জায়গা জুড়ে এটি গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত, একটি অত্যাধুনিক সেডের ভেতরে রাখা হয়েছে দেশ বিদেশ থেকে সংগ্রহ করা অর্কিডগুলি।

সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে এই সেডটি। ভেতরের গাছগুলির জন্য দিনের কতটুকু সময় সরাসরি সূর্যের আলো পড়া প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু সময়ের জন্য ওপরের সেড নিজে থেকেই খুলে যাবে, তারপর নিজেই বন্ধ হয়ে যায়। ঠিক একইভাবে বৃষ্টি এলে যদি ভেতরে জলের প্রয়োজন হয়, তবেই নিজে থেকে সেড খুলে যাবে। একইভাবে ভেতরের আদ্রতাসহ অন্যান্য বাকি সবকিছু প্রোগ্রামিং করে দেওয়া আছে।

এগুলি স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা করে নিজে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানান বন দপ্তরের কনজারভেটর অব ফরেস্ট (সিওএফ) ড. ওয়াঙডাপ ভুটিয়া। তিনি বলেন, এটি উত্তরপূর্ব ভারতের মধ্যে আকারে সবচেয়ে বড় ইনহাউস অর্কিডেরিয়াম। এতে বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্কিড সংগ্রহ করে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত কম তাপমাত্রার পাহাড়ি অঞ্চলে যেসব অর্কিড জন্মে এগুলিকেও সংগ্রহ করা হচ্ছে এখানে। এই সব অর্কিডের জন্য সেডের ভেতরে আরও একটি কাঁচের ঘর তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে এয়ার কন্ডিশন মেশিনের মাধ্যমে তাপমাত্রাকে আরও কমিয়ে হিমালয় অঞ্চলসহ উঁচু পাহাড়ি এলাকার অর্কিডগুলি রাখা হয়েছে, যাতে ভালোভাবে বেঁচে থাকতে ও বেড়ে উঠতে পারে। এর মধ্যে বিরল প্রজাতির অনেক অর্কিড রয়েছে।

এই অর্কিডারিয়াম এক দিকে যেমন বিরল প্রজাতির অর্কিডগুলিকে বংশ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তেমনি একে সংরক্ষণ ও গবেষণার কাজে লাগানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন নতুন হাইব্রিড জাত তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। মূলত বাণিজ্যিক চাষাবাদের জন্য হাইব্রিড জাত তৈরি করা হবে। কারণ, বিশ্ব জুড়ে এখন নানা রঙ বেরঙের হাইব্রিড অর্কিডের চাহিদা রয়েছে। এগুলি চাষ করে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।

এই সেডের ভেতরে ভেন্ডা, ফেলেনোপসিস, সিম্বডিয়াম, ডেনড্রবিয়াম ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের রঙিন হাইব্রিড অর্কিড রয়েছে। সব মিলিয়ে এটি তৈরি করতে ও প্রথম তিনি বছর পরিচালনার খরচ ধরা হয়েছে তিন কোটি টাকা। সেডের বাইরেও স্থানীয় নানা জাতের অর্কিড সাজিয়ে রাখা হয়েছে। মূলত, যেগুলো অপেক্ষাকৃত বেশি তাপমাত্রায় টিকে থাকে এগুলিকে রাখা হয়েছে।

ড. ওয়াঙডাপ ভুটিয়া ত্রিপুরা রাজ্যে অর্কিড প্রজাপতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে জানান, এখন পর্যন্ত এ রাজ্যে ৬০টির বেশি জাতের অর্কিড চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে, যার তালিকা সেডের মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে তিনি যেভাবে ঘুরে দেখেছেন তাতে তার ধারণা এ রাজ্যের প্রাকৃতিক পরিবেশে ৩০০টি বেশি প্রজাতির অর্কিড রয়েছে।

তিনি জানান, এটি এখনও সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। নূন্যতম একটি প্রবেশ মূল্য নির্ধারণ করে একে খুলে দেওয়া হবে। এটি যেমন একটি দর্শনীয় জায়গা হয়ে উঠবে। তেমনি যারা অর্কিড চাষ করছেন বা চাষের সঙ্গে যুক্ত হতে চাইছেন তারা এটি ঘুরে দেখে ধারণ নিতে পারবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৩
এসসিএন/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।