কলকাতা: ‘আমার শত্রুর শত্রু, আমার মিত্র’-এহেন রাজনৈতিক উক্তি ফের জানান দিলো ভারতীয় রাজনীতিতে ‘বন্ধু না হলেও শত্রু কেউ নয়’। তাইতো বিহার রাজ্যে এক মঞ্চ ভাগ করে নিলেন মোদি বিরোধী ১৭টা রাজনৈতিক দলের প্রধানরা।
উদ্দেশ্য- ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। সেই ভোটের আগে বিরোধী ঐক্যকে শান দিতে মহা-বৈঠকের চার সুর বেঁধে দিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নেত্রীর পরামর্শেই বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার শুক্রবার (২৩ জুন) পাটনায় বিরোধী দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানান।
স্পষ্ট ভাষায় বলা যেতে পারে, ফের মমতার নেতৃত্বে আরও একবার জোট বাধছে মোদি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো।
এমনিতে একে অপরের সঙ্গে রাজনৈতিক মিল তো দূরের কথা, মনের মিলটুকুও নেই। অবশ্য প্রকাশ্যে সৌজন্যটুকু রাখে সব দলই। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে সেই শত্রুরাই যেন এবার মিত্রতে পরিণত হয়েছে!
কে নেই সেখানে; বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল ইউনাইটেড (জেডিইউ) প্রধান নীতিশ কুমার এবং রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী ও রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) নেতা তেজস্বী যাদব। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টি (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী আপ নেতা ভগবন্ত মান, আপ সাংসদ রাঘব চাড্ডা, মহারাষ্ট্রের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদ যাদব, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী তথা ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম) নেতা হেমন্ত সোরেন, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) প্রধান শারদ পাওয়ার, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) প্রধান মেহেবুবা মুফতি, ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) নেতা ওমর আব্দুল্লাহ, উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি (সপা) নেতা অখিলেশ যাদব, দ্রাবিড়া মূনেত্রা কাযাগাম (ডিএমকে) নেতা টিআর বালু, সিপিআই নেতা ডি রাজা, সিপিআইএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
বৈঠক শেষে নেতাদের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আজকের বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ রূপ নিয়েছে। বৈঠকে চারটি বিষয়ে আমরা সহমত হয়েছি। তা হলো-
এক, আমরা সবাই একত্রে আছি।
দুই, লোকসভা ভোট আমরা জোটবদ্ধ লড়াই করব।
তিন, কেন্দ্রের মোদি সরকারের কালা আইন প্রয়োগ এবং অ-বিজেপি বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলোর উপর দমনপীড়নের ঘটনায় আমরা সবাই একজোট হয়ে লড়াই করব।
চার, পরের বৈঠক হবে আগামী মাসে সিমলায়।
বিজেপিকে হারাতে না পারলে আগামীতে মহাবিপদ মন্তব্য করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আবার যদি বিজেপি ক্ষমতায় আসে, তাহলে দেশে আর ভোটই হবে না। তাই আগামী নির্বাচনে স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের পতন চাই। জয় আমাদের হবেই।
আর, এ লক্ষ্যে বৈঠকে উপস্থিত নেতাদের সবাইকে উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছাড়ার আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, বিজেপি ভারতীয় সংস্কৃতির শিরদাঁড়ায় আঘাত করছে। যে নীতি এবং আদর্শের ওপর ভিত্তি করে ভারত স্বাধীন হয়েছিল, তার ওপরেই আঘাত করছে। আমরা এক সঙ্গে লড়াই করব, এই সিদ্ধান্ত হয়েই গেছে। এবার রাজ্যে রাজ্যে খোলা মনে, নমনীয় অবস্থান নিয়ে আলোচনা শুরু করতে হবে। আমরা একজোট এবং ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করব। ওরা (বিজেপি) মনে করে, ইতিহাস বদলে দিতে পারবে। আমরা বলতে চাই, বিহার থেকেই শুরু হবে ইতিহাস রক্ষার লড়াই।
ওই মঞ্চ থেকেই পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি বলেন, যেভাবে দেশবাসী বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে গান্ধীজির ভারত নয়, গডসের ভারত হয়ে যাবে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত ১৭টি রাজনৈতিক দল ক্ষমতার জন্য নয়, মতাদর্শের জন্য একজোট হয়েছে।
তবে আসন্ন লোকসভায় আসন বোঝাপড়া, একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে এবং কে হবেন প্রধানমন্ত্রী- তা নিয়ে এদিন মমতা কিছু বলেননি।
তবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছেন, সিদ্ধান্ত হয়েছে সব রাজ্যে আমরা একসঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করব। আশা করি, সিমলার বৈঠকেই ঠিক হয়ে যাবে কোন দল কোন রাজ্যে কত আসনে লড়াই করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
ভিএস/এনএস