কলকাতা: মুম্বাইয়ে সরকার বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র তৃতীয় বৈঠকের দিনে পাল্টা বৈঠক ডেকেছে, বিজেপি শরিক জোট ‘এনডিএ’। আসলে বিহারের পাটনায় প্রথম ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক সেভাবে জমেনি।
তাদের সঙ্গে ৩৮ দল আছে বলে ক্ষমতার জাহির করেছিল। আদতে দেখা গিয়েছে ৩৮ দলের মধ্যে ২৫ দলের কোন সাংসদ সদস্যই নেই। আর তাই মমতার নেতৃত্বে তৈরি হওয়া ‘ইন্ডিয়া’(ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়ান্স) জোটকে ‘ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন’ এবং ‘ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির’ সঙ্গে তুলনা করেছিল স্বয়ং মোদি। রাজনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরোধী জোটকে কিছুটা ভয় পাচ্ছেন মোদী। তাই তার মুখে এধরনের উক্তি! আর সেই ভীতি কাটিয়ে উঠতে না পারার কারণে সম্ভবত, ফের একই দিনে অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিজেপি পর্যালোচনা বৈঠকে বসছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ সিন্ধের বাসভবনে।
মূলত, জাতীয় কংগ্রেসকে বাদ দিলে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে তৃণমূল কংগ্রেস। জোটের নাম ঘোষণার পর থেকে বহুবার ইন্ডিয়ার পক্ষে স্লোগানও দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বিজেপি বদলের ডাক’ বহুবার শোনা গেছে নেত্রীর কন্ঠে। বেঙ্গালুরুর ২য় বৈঠকে জাতীয় কংগ্রেস ঘোষণা করেছিল যে, তারা প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে নেই। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কিছু নেই। আগের বৈঠকে মমতা সরাসরি বলেছিলেন, এ বিষয়ে তার ফেভারিট রাহুল গান্ধী।
ফলে ইন্ডিয়া জোট একপ্রকার বিজেপির ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। তবে এরজন্য প্রধান বিষয় হল শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ইন্ডিয়া নামক জোটকে একসাথে থাকতে হবে। তবেই বিজেপিকে হটানো কঠিন নয় বলেই মনে করছে বিশেজ্ঞরা। কিন্তু, ইন্ডিয়া জোটের এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। কারণ, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে এই ২৬ দলের রাজনৈতিক উদারতা অতীতে লক্ষ্য করা যায়নি। এখনও যে সকলে খুব উদার তাও জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। সেখানে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কংগ্রেসসহ বাকি আঞ্চলিক দলগুলি কতটা সফল হবে সেটাই মূল প্রশ্ন।
কারণ মমতা একদিকে যখন বলছেন, নির্বাচনে জয়লাভের পর জোট ঠিক করবে কে হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তাতে দলের প্রধানরা এ বিষয়ে একমত দিচ্ছেন, তখন তাদের নেতাকর্মী সদস্যরা মনে করছে মোদীর বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই বিরোধী দলের প্রধানমন্ত্রীর মুখ ভারতবাসীর সামনে আনা উচিত।
সে কারণেই সম্ভবত, ১৪ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ কলকাতায় এক কনক্লেভের আয়োজন করেছিল তৃণমূল দল। সেখানে মমতার দলের বার্তা ছিল ২০২৪ সালের নির্বাচনে দিল্লির মসনদের বসুক পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অর্থাৎ নেত্রীকেই তারা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। মমতাহীন সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূলের প্রথমসারির সকল নেতামন্ত্রী। ইতিমধ্যে শহরের রাস্তাজুড়ে বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন পোস্টার ফেলেছে তারা। তাতেও বড় করে লেখা রয়েছে তাদের স্লোগান। ‘বলছে বাংলার জনতা, প্রধানমন্ত্রী হোক মমতা। ’
ইন্ডিয়া জোট এবং মমতাকে উপেক্ষা করে দল যখন তাদের নেত্রীর কাছে এই বার্তা দিচ্ছে। তখন বসে নেই জোটের অন্যান্য দলগুলো। বিহারের ক্ষমতাসীন জনতা দল ইউনাইটেড। যার নেতৃত্বে আছেন দলের প্রতিষ্ঠাতা মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। তাদের নেতা মন্ত্রীরা ইতিমধ্যে বলতে শুরু করেছেন তারা নীতিশকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। অপরদিকে, দিল্লির আম আদমি পার্টির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সাঙ্গ-পাঙ্গরাও কেজরিওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাইছেন। যদিও এ বিষয়ে জাতীয় কংগ্রেস ধীরে চলো নীতি নিয়েছে। তবে তারাও যে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার লোভ সম্বরণ করতে পারছে না, সে তাদের চলন বলনে ধারণা করা যাচ্ছে। অর্থাৎ গাছে ফল না পাকতেই কাটার তোড়জোড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে জোটের মধ্যে।
যদিও বেঙ্গালুর বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন জানিয়েছিলেন, হতে চলা মহারাষ্ট্রের বৈঠক থেকে সমন্বয় কমিটি, প্রচার কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলো সদস্য নির্বাচন করা হবে। এর পাশাপাশি ইন্ডিয়া জোটের আহ্বায়কের নামও ঘোষণা করা হবে। জানা যাচ্ছে জোটের একটি স্লোগানও ঠিক করা হতে পারে এই বৈঠকে।
এমনিতে বর্তমানে ভারতের ২৩ রাজ্যের মধ্যে ১২ রাজ্যে বিজেপি ও তার জোট ক্ষমতায় আছে। বিরোধীরা আছে ১১ রাজ্যে। ফলে অঙ্কের হিসেবে বিরোধীরা বিজেপিকে চাপে রাখার সম্পূর্ণ রসদ আছে। তবে ভারতের নিরিখে বিধানসভা নির্বাচন অর্থাৎ রাজ্যের নির্বাচন এবং লোকসভা বা দেশের নির্বাচন একই ইস্যুতে হয় না। ফলে আগামী লোকসভা নির্বাচনে কি ফল হবে বা দেশবাসী কাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান? তা সম্পূর্ণ নির্ধারণ হবে দেশের জনগণের ওপর ভিত্তি করে। তবে এক কথা ঠিক ভারতের সক্রিয় রাজনীতিতে সকল রাজনৈতিক দল ভোটের ময়াদনে নেমে পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, ৩১ আগস্ট, ২০২৩
ভিএস/এমএম