ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

স্বর্ণ পাচারের সময় বিএসএফের হাতে গ্রেপ্তার চার বাংলাদেশি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩

কলকাতা: ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে প্রায় ৩ কেজি স্বর্ণ জব্দ করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। স্বার্ণ পাচারের অভিযোগে চার বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।

মলদ্বারে করে তারা ভারতে ওইসব স্বর্ণ পাচার করছিলেন।  

শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিএসএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ১৩ অক্টোবর বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের অধীনে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার পেট্রাপোল সুসংহত চেকপোস্ট (আইসিপি)-এ দায়িত্বপ্রাপ্ত ১৪৫ ব্যাটালিয়ন বিএসএফ-এর সদস্যরা স্বর্ণ চোরাচালানের বড় প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করেছে। বাহিনীর সদস্যরা ২৩টি স্বর্ণের বার, ৪টি স্বর্ণের ব্রেসলেট ও একটি স্বর্ণের আংটি জব্দ করেছে, যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ কোটি ৮৬ লাখ রুপির বেশি।  

জানা যায়, শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনটি ভিন্ন ঘটনায় বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছ থেকে এই স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। বৈধ ভিসাধারী চার বাংলাদেশি নাগরিক পেট্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রবেশের সময়ে মেটাল ডিটেক্টরে শরীরে অনুসন্ধান চালানোর সময়ই এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণের হদিস মেলে।

বেলাল হোসেন, আজম খান ও মোহাম্মদ কবির নামে আগত তিন ব্যক্তির শরীরের নিচের অংশে মেটাল ডিটেক্টর দ্বারা ধাতব পদার্থের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ওই যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদে সবাই মলদ্বারে স্বর্ণের উপস্থিতি স্বীকার করে।

বেলাল হোসেন ও আজম খানের কাছ থেকে ৬টি করে স্বর্ণের বার এবং মোহাম্মদ কবিরের কাছ থেকে ১১টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। সেগুলো স্বচ্ছ টেপ দিয়ে মুড়িয়ে মলদ্বারে লুকিয়ে রাখা ছিল। পরে বিএসএফ তাদের আটক করে এবং স্বর্ণগুলি জব্দ করে।

চতুর্থ ঘটনায় বিকাল প্রায় ৩.৩০ নাগাদ যাত্রীদের রুটিন তল্লাশি করার সময়, বিএসএফ লক্ষ্য করে যে জুবিদা খানম নামে এক যাত্রীর হাতে ৪টি ব্রেসলেট অস্বাভাবিক আকারে ছিল। তল্লাশির সময় ওই নারীর কাছ থেকে বিকৃত আকারের একটি স্বর্ণের আংটিও পাওয়া যায়। ওই নারী যাত্রীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি এবং কোনও বৈধ নথি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীকালে ওই নারী যাত্রীকে আটক করা হয় এবং স্বর্ণের অলঙ্কার জব্দ করা হয়।

বিএসএফ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত চোরাকারবারি ৪০ বছর বয়সী বেলাল হোসেনের বাসা কুমিল্লার চান্দিয়ান থানার বাতাগাশী গ্রামে, ৪৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ কবিরের বাসা কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার নূরপুর এলাকায়, ৪৬ বছর বয়সী আজম খানের বাসা কুমিল্লার তিতাস থানার ইউসুতপুর গ্রামে। অন্যদিকে ৩৩ বছর বয়সী জুবিদা খানম ঢাকার সূত্রাপুরের ভজহরি সাহা স্ট্রিট এলাকার বাসিন্দা।

বেলাল হোসেন কুমিল্লা এলাকায় চালকের কাজ করেন, আজম খান ও মোহাম্মদ কবির কৃষকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। জুবিদা খানম ঢাকায় তার নিজস্ব পার্লারের বিউটিশিয়ান হিসেবে কাজ করতেন।

এও জানা যায়, বেলাল হোসেন গুলিস্তান এলাকায় ইব্রাহিম নামে এক বাংলাদেশি ব্যক্তির কাছ থেকে ৬টি স্বর্ণের বার সংগ্রহ করেছিলেন। আজম খান গুলিস্তান মসজিদের কাছে হোনুর নামে একজন বাংলাদেশির থেকে ৪টি স্বর্ণের বার পেয়েছিলেন এবং মোহাম্মদ কবির শাহিদাবাদ এলাকায় মোস্তফা নামে এক বাংলাদেশির থেকে ১১টি স্বর্ণের বার সংগ্রহ করেছিলেন। জুবিদা খানম ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে আমিনের কাছ থেকে ৪পিস স্বর্ণের ব্রেসলেট এবং একটি আংটি সংগ্রহ করেন।  

এসব স্বর্ণ কলকাতার নিউমার্কেটে এক অজানা ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এই স্বর্ণ পৌঁছে দেওয়া হলে তিন পুরুষ প্রত্যেকে ১০ হাজার টাকা এবং নারীটি ৫ হাজার টাকা পেত। আটক করা হয়েছে ওই চারজনকে। জব্দকৃত স্বর্ণ পেট্রাপোলে শুল্ক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক সীমান্তে এই বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধারের ঘটনায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিএসএফের সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (জনসংযোগ) একে আর্য। তিনি বলেছেন, বড়স্তরের চোরাকারবারিরা গরিব ও নিরীহ মানুষকে অল্প অর্থের প্রলোভন দিয়ে ফাঁদে ফেলে। চোরাচালানের সময় প্রত্যক্ষ রূপে রাঘববোয়ালরা জড়িত থাকে না, তারা এই কাজের জন্য গরিব মানুষগুলোকে টার্গেট করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২৩
ভিএস/নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।