কলকাতা: হেমন্তকালের ক্যালেন্ডার এখন তৃতীয় সপ্তাহের পা রেখেছে। নতুন ধানের সঙ্গে নতুন সবজি ওঠার সময়।
পশ্চিমবঙ্গের বাজারের মাসখানেক আগেও এককেজি ভালো মানের পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ রুপি কেজিতে পাওয়া যেত। কোথাও বিশ রুপিতেও মিলতো। অথচ কার্তিক মাসের শুরু থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে ৬৫ থেকে ৭০ রুপি, কোথাও পেঁয়াজের দাম ছুঁয়েছে কেজিপ্রতি ৮০ রুপিতে। বর্তমানে রাজ্যে পূজার মৌসুম চলছে। এরপরই শুরু হবে বিয়ের সিজন। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অনেকে মনে করছেন, পেঁয়াজের সরবরাহ না বাড়লে খুচরা বাজারে পেঁয়াজের দর ১০০ রুপি ছুঁতে বেশিদিন সময় লাগবে না।
ব্যবসায়ীরা অনেকেই তাই মজা করে বলছেন, মোদী স্টেডিয়ামে ফাইনালে ক্রিকেট বল পড়ার আগেই ভারতে পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি করতে পারে। ১৯ নভেম্বর আমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল। পাইকারি ব্যবসায়ীদের একাংশ মনে করছেন, বিগতবারের মত এবারও নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহের আগেই সেঞ্চুরি হাঁকাতে পারে পেঁয়াজ।
ভারতের কৃষি মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, পেঁয়াজের দাম নিয়ে এখনই মাথা গলাতে চাইছে না কেন্দ্রীয় সরকার। ব্যাপারটা এখনও বাজারের উপরে ছেড়ে রাখতে চাইছে। পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ভবনের এক কর্তার কথায়, পেঁয়াজ নিয়ে এটা প্রতি বছরের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। রবি মৌসুম (মার্চ- এপ্রিল যে ফসল ওঠে) অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বাজারে পেঁয়াজ প্রায় শেষ হয়ে আসে, অথচ তখনও খারিফের ফসল(বর্ষাকালীন ফসল) পুরোপুরি বাজারে আসে না। চাহিদার সঙ্গে যোগানোর ফারাক তৈরি হয়। তখনই দাম বেড়ে যায়।
অপরদিকে, ভারতের মনিপুরে জাতীয় দাঙ্গার পর থেকে আদার দামও বেড়েছে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গ পেঁয়াজের জন্য যেমন নির্ভর করে মহারাষ্ট্রের উপর ঠিক তেমন সিংহভাগ আদা আসে মণিপুর থেকে। পেঁয়াজের পাশাপাশি আদার ঘাটতি হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের চাষ হওয়া কাঁচাআদা এখন ২০০-৩৫০ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একই অবস্থা রসুনের ক্ষেত্রেও। কয়েক মাস আগে যে রসুনের দাম ছিল ৮০ থেকে ১০০ রুপি। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ রুপি। টমেটো ৫০ রুপি কেজি।
দাম বড়েছে আলু, পটল, ঝিঙে, বেগুন, কুমড়োর, মটর, বিনস, গাজর বাঁধাকপি মত সবজির। আলু কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ রুপি। এছাড়া সাধারণ মাছ যা কয়েকমাস আগে কেজিপ্রতি আড়াইশো রুপিতে মিলত এখন তা বেড়ে কমপক্ষে ৪০০ রুপি কেজিপ্রতি। এমনকি চালও বর্ধিত মূল্যে কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। এক কেজি মাঝারি মানের চাল ৫০ থেকে ৬০ রুপি কেজিতে বিক্রি হচ্ছে বলে, বাজার সূত্রে জানা যাচ্ছে। যদিও চালের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে একটি সুবিধা হল রেশন ব্যবস্থা। মাথাপিছু মাসিক ২ কেজি চাল বিনামূল্যে পেয়ে থাকেন সাধারণেরা। এছাড়া নিম্নআয়ের ভারতীয়রা পেয়ে থাকেন এর দ্বিগুণ। তবে যে আটা ২৫ থেকে ২৬ রুপিতে মিলতো তা এখন ৪০ থেকে ৫০ রুপি। দাম বেড়েছে মুগ ডাল, মসুর ডাল, চিনিসহ প্রায় সমস্ত রকম খাদ্যদ্রব্যের।
ভোক্তাদের বক্তব্য, বর্ষা মৌসুমে ক্ষেতে পানি জমে যাওয়ার কারণে চাষবাসে পচন ধরে। যে কারণে বর্ষাকালে পশ্চিমবঙ্গে সবজির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এরপরে শরৎকাল শুরু হতেই অর্থাৎ আশ্বিনের মধ্যে সবজির দাম কমে আসে কিন্তু, এবছর শরৎ শেষ হয়ে হেমন্তকালের কার্তিক মাস তৃতীয় সপ্তাহে পা রাখলেও মূল্য হ্রাস তো দূরে থাক, আরও দাম বাড়ছে। অথচ এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের টাস্কফোর্স নীরব দর্শক হয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে রয়েছে।
কলকাতার খুচরা সবজি বিক্রেতাদের বক্তব্য আনাজপাতির দাম পাইকারি বাজারে বেড়ে যাওয়াতেই সবজির দাম কমছে না। অন্যদিকে কৃষকদের বক্তব্য, পাইকারি বাজারের তারা যে দামে ফসল বিক্রি করছে খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুনদামে। অভিযোগ, সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় দপ্তরের কর্মীদের নির্লিপ্ততার কারণে কালোবাজারি রমরমা। মুর্শিদাবাদ জেলার হটিকালচার দপ্তরের সহ কর্মকর্তা প্রভাস মন্ডল এর বক্তব্য, মাঠ থেকে বর্তমানে পর্যাপ্ত সবজি বাজারে আসছে। কিন্তু, মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি চুপ থাকলেও প্রতিনিয়ত পশ্চিমবঙ্গে দাম বাড়ছে সবজিসহ নিত্য খ্যদ্যপণ্যের। আর সে কারণে নাজেহাল অবস্থার মধ্যদিয়ে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন সাধারণ পশ্চিমবঙ্গবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ৮ নভেম্বর ২০২৩
ভিএস/এমএম