কলকাতা: তৃণমূলের সংসদ সদস্য মহুয়া মৈত্রকে লোকসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের এমপি।
মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ, এক সংস্থার থেকে ঘুষের বিনিময়ে সংসদ ভবনে দাঁড়িয়ে আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছিলেন। সেই অভিযোগে, লোকসভার এথিক্স কমিটি মহুয়ার সংসদ সদস্য পদ খারিজ করে দিল।
লোকসভার এথিক্স কমিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, মহুয়া যে অবৈধভাবে অর্থ নিয়েছেন, তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। সেটি অস্বীকার করার জায়গা নেই। এমপি হিসেবে তার আচরণ অনৈতিক। সেই কারণে লোকসভা থেকে মহুয়া বহিষ্কৃত করা উচিত বলে মনে করেছে এথিক্স কমিটি। পাশাপাশি তিনি যে অপরাধ করেছেন, সরকারের তরফে তার আইনি তদন্তও করা দরকার।
শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) এথিক্স কমিটির সেই সুপারিশ লোকসভায় পেশ করা হয়েছিল। তারপর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের জন্য বিতর্ক হয় লোকসভায়। এরপরই মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কার প্রস্তাবে সিলমোহর দেন স্পিকার ওম বিড়লা।
মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে পারিবারিক বিয়ের কারণে উত্তরবঙ্গ সফরে আছেন। কার্শিয়াং থেকে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, লোকসভায় যা হয়েছে, তা শুনে তিনি স্তম্ভিত।
মমতা বলেছেন, এই ঘটনা থেকে বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আরও একবার প্রমাণিত হলো। মহুয়াকে আত্মপক্ষ সমর্থন করে কিছু বলার সুযোগই দেওয়া হল না। আমি এর তীব্র বিরোধিতা করছি। মহুয়ার সঙ্গে দল ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে। লোকসভা ভোটের আর তিন মাস বাকি। তারপর মহুয়া আবার সংসদ সদস্য হয়ে যাবেন।
অপরদিকে সংবাদমাধ্যমের সামনে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন মহুয়া। তিনি বলেছেন, আদানিকে বাঁচাতে মোদি সরকার আদাজল খেয়ে নেমেছে। এই সরকার নারীবিদ্বেষী। কিন্তু এভাবে আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না। আমি আবার ফিরে আসব। এবং ওদের শেষ দেখে ছাড়ব।
কিন্তু, মহুয়া মৈত্র কি ফের আসন্ন লোকসভা ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন? জনপ্রতিনিধি আইন বলছে সম্ভব। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন এবং জয়ী হলে ফের লোকসভা অর্থাৎ সংসদ ভবনে যেতে পারবেন। ফলে সেই দিক থেকে মহুয়ার দুশ্চিন্তা নেই। আর দল যখন পাশে আছে তখন ধারণা করা হচ্ছে কৃষ্ণনগর থেকেই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ভারতের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে থাকেন, এবং তার কারাবাসের মেয়াদ যদি ২ বছরের বেশি হয়, তা হলে অন্তত ৫ বছরের জন্য তিনি আর ভোটে লড়তে পারবেন না।
কোন কোন বিষয়ে সাজাপ্রাপ্তরা ৫ বছরের জন্য ভোটে লড়তে পারবেন না তাও বলা রয়েছে জনপ্রতিনিধি আইনে।
এরমধ্যে নাগরিক অধিকার আইন, মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ আইন, বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ইত্যাদি রয়েছে। তাছাড়া বলা হয়েছে, দুর্নীতির কারণে কোনো রাজ্য বা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হলে তিনিও ৫ বছরের মধ্যে কোনো ভোটে লড়তে পারবেন না।
এ ক্ষেত্রে মহুয়া মৈত্র কোনো ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নন। এথিক্স কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে তাকে লোকসভা থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে আগামী লোকসভা ভোটে মহুয়া মৈত্রর পুনরায় ভোটে দাঁড়াতে কোনো বাধা নেই।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, ০৮ ডিসেম্বর ২০২২
ভিএস/এসএএইচ