কলকাতা: ১৬ ডিসেম্বর, বাঙালির বিজয় দিবস। দিনটি বাঙালির কাছে এক মুক্তির বার্তা।
বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৬ ডিসেস্বর) কমান্ডের সদর দপ্তর ফোর্ট উইলিয়ামের ইস্ট গেটে অবস্থিত ‘বিজয় সামারোখ’-এ (শহীদ বেদী) ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মো. হোসেন আলী মুর্শেদ এবং ৭১ জনের প্রতিনিধিদলের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী।
এসময় স্মৃতিস্তম্ভে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আরপি কলিটা, বিমান বাহিনীর এয়ার ভাইস মার্শাল রাহুল ভাসিন, ন্যাভাল অফিসার ইন চার্জ (পশ্চিমবঙ্গ) পি সশী কুমার, কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, ভারতের সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) অরূপ রাহা ও সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) শংকর রায় চৌধুরী।
পাশাপাশি হিন্দু , মুসলিম, শিখ ও খ্রিস্টান -চার সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ব্যক্তিত্বরা মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের উদ্দেশে প্রার্থনা করেন এবং সেনাবাহিনীর গৌরবময় বীরত্বের বিষয় তুলে ধরেন।
এরপর ফোর্ট উইলিয়াম মাঠে আয়োজিত মুক্তিযুদ্ধ ও ভারতের ভূমিকার বিষয়ে একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক ও বর্তমান সেনা সদস্যরা। অনেকেই সেই স্মৃতিদৃশ্য দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী এসময় বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। সেই যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশের মাটিতে উভয়ের রক্তস্রোত আর বলিদানে আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অর্জন করেছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীসহ স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ দুই দেশের সেনাদের স্মরণ করে মেজর জেনারেল মো. হোসেন আলী মুর্শেদ বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যেও একটা সুন্দর সম্পর্ক বিরাজ করছে। আমরা দুই দেশই চেষ্টা করি, এই সুসম্পর্ক যেন ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দুই দেশের সেনা সদস্য এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে ভারতের সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান আরপি কলিটা বলেন, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর কীভাবে এই সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা আপনারা সবাই জানেন। এরপর ১৪ দিন ধরে সেই সর্বাত্মক যুদ্ধ চলেছিল এবং তাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সর্বোতভাবে সহায়তা দিয়েছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। এই যুদ্ধে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ এবং আট হাজার ভারতীয় সেনা এবং মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম হয়। ওই যুদ্ধে সামনের সারিতে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী, আর সেই কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিজয় দিবস একটা আলাদা গর্বের জায়গা করে নিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একাত্তরের যুদ্ধের পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ও রাজনৈতিকভাবে উন্নতি করে চলেছে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় একটি অন্যতম বড় শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ এবং ভারত- উভয়ই তাদের নিজেদের মতো করে প্রবৃদ্ধির গতিপথ অনুসরণ করছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। যদিও এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থান-পতন রয়েছে, সেগুলি আমরা আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব।
কলকাতায় উপহাইকমিশনে বিজয় দিবস উদযাপন
এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনও। এ উপলক্ষে শনিবার দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটির শুরুতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন উপহাইকশিনার আন্দালিব ইলিয়াস। এসময় উপস্থিত ছিলেন মিশনের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী।
পরে মিশন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিব চিরঞ্জীব’ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এরপর বাংলাদেশ গ্যালারিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন কর্মকর্তারা। বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৩
ভিএস/এইচএ/