কলকাতা: ভারতের লোকসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক হাওয়া উত্তপ্ত হচ্ছে। ঘর গোছাতে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো নেমে পড়েছে ভোটের ময়দানে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, এবারের লোকসভা ভোটে নওশাদ যদি ঠিকঠাক প্রচার করতে পারেন, তাহলে মুসলিম ভোটের সিংহভাগ হাতছাড়া হবে মমতার। এতে বিপদ বাড়বে তৃণমূলের। তবে একদা বাম জোটের শরিক আইএসএফ-কে সামনের সারিতে পেয়ে কিছুটা অক্সিজেন পাচ্ছে বামরা।
নওশাদ বরাবর বিরোধিতা করে আসেছেন রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে। এবার আরও সরব হয়েছেন তিনি। গত ২ এবং ৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্র সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে ধরনায় বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উদ্দেশ্য, রাজ্যের ১০০ দিনের কাজ (কেন্দ্রীয় প্রকল্প) সহ আর কয়েকটি কাজের টাকা তিন বছর ধরে দিচ্ছে না মোদি সরকার। অবশেষে শনিবার মমতা বলেছিলেন, বাংলার একুশ লাখ মজদুরের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। আমি দেব। আমি কথা দিচ্ছি আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাজ্য সরকার তাদের ব্যাংকে পাঠিয়ে দেবে।
যা নিয়ে সরব হয়েছেন নওশাদ। মুসলিমদের প্রিয় এই বিধায়ক বলেছেন, কেন্দ্রে সরকারকে দেখানো ২১ লাখ শ্রমিকের মধ্যে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ভুয়া। এই সরকার (মমতার প্রশাসন) ভুয়া জব কার্ড তৈরি করেছে। সেই টাকা তুলে তৃণমূল খেয়েছে। প্রাকাশ্যে নওশাদ দাবি করেছেন, আমি নাম ধরে বলছি, অভিষেক বাবুর (মমতার ভাতিজা) পিসির দলের যারা কর্মী, তারা সেই টাকা খেয়েছে। যদি আমি ভুল বলি, তাহলে অভিষেক বাবুর পিসি যেন আমার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওদের সাহস আছে আমার বিরুদ্ধে মামলা করার?
নওশাদ আরও বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ওরা (তৃণমূল) দুর্নীতি করে সাড়ে চোদ্দ লাখ ফেক জব কার্ড বানিয়ে, সেই টাকা ওরা খেয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় সরকার জানতে পেরেছে। যে কারণেই টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। একটা প্রবাদ আছে, সাপ হয়ে কামড়ায়, ওঝা হয়ে ঝাড়ে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন নিজেই সাপ হয়ে কামড়াচ্ছেন, নিজেই ওঝা হয়ে মলম দিচ্ছেন। বারে বারে লোক দেখানো দিল্লি যাচ্ছেন। রাজভবনের সামনে ১৪৪ ধারা ভেঙে, মাইক মঞ্চ বানিয়ে অভিষেক বাবুরা ধরনা করছেন। তারা সব করছেন, কিন্তু আসল কাজটাই করছেন না। ওরা এ নিয়ে আদালতে যাচ্ছেন না।
আইএসএফ নেতা বলেন, ভারতীয় সংবিধানের ১৩১ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, রাজ্যের সাথে কেন্দ্রের যদি কোনো বিষয়ে বিরোধ বা সংঘাত বাঁধে, তা নিরসনে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবে। কিন্তু ওরা যায় না। যেখানে সংবিধান আমাকে এই জায়গা খুলে রেখেছে, তাহলে কেন বারবার মোদির দিকে যাওয়ার দরকার পড়ছে। এতবার যখন দিল্লি যাচ্ছেন ওনারা, মোদির সাথে দেখা করতে। তা না করে সুপ্রিম কোর্টে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একটা মামলা করে দিলেই তো হয়। একবার মামলা হলে, মোদি সরকার দিতে বাধ্য। কিন্তু তা তারা করবে না। তাহলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বের হয়ে আসবে।
নওশাদ আরও বলেন, কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ১০০ দিনের টাকা বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু, সেই অর্থে কোনো অ্যাকশন নিচ্ছে না। বিজেপি যদি অ্যাকশনে যেত তাহলে সর্বপ্রথম ধরা পড়তো ১৪ লাখ ভুয়া জব কার্ডের বিষয়টা। এতে পিসির অনেক এমপি, বিধায়কের নাম বের হয়ে আসবে। তাদের তুলে নিয়ে জেলে ঢোকাবে। এই ভয়ে পিসির দল আদালতে যাচ্ছে না। পাবলিককে বোকা বানানোর জন্য বাংলায় মাঝেমধ্যে একটা করে মিছিল, ধরনা হচ্ছে। আর রাজ্যবাসী ভাবছে এই তো দিদি আমাদের হয়ে অনেক লড়াই করছেন।
জনগণের উদ্দেশে নওশাদ বলেন, এখন থেকে রাজ্য সরকার যদি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার কথা বলে, মুখের ওপর বলবেন শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রাজ্যের কত কোটি বকেয়া আছে? আর কী কারণে বা কোন গ্রাউন্ডে রাজ্য সরকারকে টাকা দিচ্ছে না। আমরা বলছি, রাজ্য সরকার প্রকাশ করুক এসব। সেটা উনি দেখালে, রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রের ওখানে গিয়ে বসে থাকতে হতো না, আমরা গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখাতাম। যতক্ষণ না বকেয়া পরিশোধ করছে আমরা সেখান থেকে উঠতাম না। তবে এতদূর যেতে হবে না। কারণ, ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকার কোনোদিন রাজ্য সরকারের টাকা আটকে রাখতে পারে না। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার যে টাকা দেয় তার ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট অর্থাৎ কোন খাতে কীভাবে টাকাটা ব্যবহার করেছে, সেটা ভারত সরকারকে বুঝিয়ে দিতে হবে। কিন্তু, আমাদের রাজ্য সরকার এ পথেই হাঁটবে না।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হয় ফুরফুরা শরিফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীর দল আইএসএফ-এর। জোট বাধে বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে। সেই ভোটে বামেরা শূন্য হলেও দক্ষিণ ২৪ পরগণার ভাঙড় আসন থেকে জয় পান আব্বাসের ভাই নওশাদ। এবারে সংসদ নির্বাচনে, রাজ্যের ডায়মন্ড হাববার আসনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হতে চলেছেন নওশাদ। ফলে এই আসনের দিকে নজর থাকবে সবার। কারণ, একে তো মমতার ভাতিজার বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়াবেন তিনি, অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় ফুরফুরার ভূমিকা রাজ্যের রাজনীতিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৫, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ