কলকাতা: মুর্শিদাবাদ জেলার শহর বহরমপুর। কলকাতা থেকে বহরমপুরের দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার।
অপরদিকে, মুর্শিদাবাদ তৃণমূলের গড় বলে পরিচিত হলেও একবারও বহরমপুর আসনে জয়ের স্বাদ পায়নি। তবে এবারে তৃণমূলের বাজি সাবেক ভারতীয় দলের ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান। তিনি গুজরাটবাসী হলেও বাংলায় এই আসন থেকে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) তারকা সমাবেশের সাক্ষী হলো বহরমপুর। ইউসুফ পাঠানের হয়ে বহরমপুরে প্রচারে এসেছিলেন ইরফান পাঠান। দাদা ইউসুফের সাথে রোড শো করলেন ইরফান। দুই ক্রিকেটার ভাইকে কাছে পেয়ে আপ্লুত বহরমপুরবাসী। অনেকে সেলফি এবং ব্যাটে অটোগ্রাফের আবদার জানান। রোড শোয়ের মাঝে দুই ভাই সেই আবদারও মেটালেন।
দুই পাঠান ভাইকে দেখতে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ৬ কিমি রোড শো শেষে ইরফান বলেছেন, মানছি পাঁচবারের সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দাদার লড়াইটা কঠিন। তবে আমার দাদা অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং সৎ। কঠিন পরিস্থিতিতেও লড়তে জানে। চোট নিয়েও বিশ্বকাপে খেলেছে। দলকে জিতিয়েছে।
ইরফান আরও বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। দাদা এবং আমি দুজনেই দেশের হয়ে ক্রিকেট খেলেছি। খেলার মাঠে মানুষের উন্মাদনা থেকে আমরা অনুপ্রাণিত হই। এখানেও রোড শোতে মানুষের যা উৎসাহ দেখলাম, তাতে আমি নিশ্চিত, দাদা জয়ী হবেই।
আগামী ১৩ মে চতুর্থ ধাপের লোকসভা ভোট। ওই দিন বহরমপুরসহ ভোট অনুষ্ঠিত হরে কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বর্ধমান পূর্ব, আসানসোল, বোলপুর, বীরভূম ও বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে।
বহরমপুর বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, বহরমপুরে আমি হেরে গেলে রাজনীতি ছেড়ে দেব, প্রয়োজনে বাদাম বিক্রি করব।
অধীরের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জায়গায় বলছেন, প্রার্থী নয় আমাকে দেখে ভোট দিন। তাহলে বহরমপুরে তৃণমূল হারলে সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হার, তা নেত্রী মেনে নেবেন তো?
তবে রাজনৈতিক মহলের মতে, বহরমপুর মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা। এই প্রথম তৃণমূল প্রার্থী করেছে একজন মুসলিম তারকাকে। তার ওপর রাজ্যে এখন অনেকটাই জাঁকিয়ে বসেছে বিজেপি হাওয়া। বিজেপি এই আসনে প্রার্থী করেছে এলাকার জনপ্রিয় চিকিৎসক নির্মলচন্দ্র সাহাকে। ফলে হিন্দু ভোটের সাথে চিকিৎসক সহযোগী মুসলিম ভোটও বিজেপিতে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যার জেরে অধীর যতই বলুন, সহজ লড়াই। আসলে এবার ততটা সহজ নয়! তবে স্বস্তি এই যে, বামেরা এখানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। তারা কংগ্রেসের সাথে জোট বেঁধেছে।
১৯৯৯ থেকে ২০১৯ সাল এই পাঁচবার অধীর বহরমপুর থেকে জিতে সংসদ সদস্য হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই ভোটের ব্যবধান কমেছে। অধীর যে জয়ের সূচনা করেছিলেন সাড়ে তিন লাখ ভোট দিয়ে। তা ২০১৯ সালে ৮০ হাজারে নেমে এসেছিল। তার ওপর কোনোদিন অধীরকে মুসলিম প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বী হতে হয়নি। ফলে ২০২৪ সালের নির্বাচন অনেকটাই ভিন্ন।
অধীরের কথায়, ভারতে দুই দল এখন বিভাজনের রাজনীতিতে মেতেছে। বিজেপির তরুপের তাস হিন্দু ভোট হয় আর মমতার মুসলিম ভোট। তৃণমূল সংখ্যালঘু ভোট বিভাজিত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কংগ্রেস তা ভাবে না। রাজ্যের মানুষ সব বুঝতে পারছেন। আর আমার আসনে সচেতন নাগরিক বাস করেন। তাই এতদিন তাদের সমর্থন পেয়েছি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
রাজ্যে কয়েকটি আসনে বাম-কংগ্রেস জোটের বিষয়ে অধীরের অভিমত, চিরকালই বামেদের বিরুদ্ধে আমার লড়াই ছিল। কারণ তাদের একটা অংশে হার্মাদ বাহিনী (নিষ্ঠুর দল) ছিল। সেই হার্মাদেরাই এখন তৃণমূলের ছত্রছায়ায়। এখন বামেরা হার্মাদমুক্ত। তাই বামেদের হাত ধরেছি। জোট বেঁধে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। তার কথায়, রাজনীতিতে কিছুই চিরস্থায়ী নয়। রাজনীতিতে শত্রু-মিত্রও সব সময় এক থাকে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ