ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক মমতা নষ্ট করছেন: মোদি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৫ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৪
বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক মমতা নষ্ট করছেন: মোদি

কলকাতা: রাত পোহালেই ভারতের লোকসভা নির্বাচনের চতুর্থ ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণায় এসেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

রোববার (১২ মে) উত্তর ২৪ পরগণা জেলার ব্যারাকপুরে অনুশোচনার সুরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় বাংলাদেশের অর্থ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখত এই পশ্চিমবঙ্গ। আজ তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের দুর্নীতির কারণে এই সিস্টেম পুরো নষ্ট করে দিয়েছে।

এর আগেও একাধিক নির্বাচনী প্রচরাণায় মোদির মুখে শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। বিভিন্ন জনসভায় প্রতিবেশী মোদি যেন বার্তা দিতে চাইছেন—পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বিষয়ে যে বিরূপ চিত্র বঙ্গবাসীর সামনে তুলে ধরতে চাইছে, তা আসলে ঠিক নয়। বাস্তবে ভারত পাশে আছে বাংলাদেশের।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল কোচবিহার থেকে মোদি বলেছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য আরও সহজভাবে করার জন্য বিজেপি সরকার কাজ করে চলেছে। দুই দেশের মানুষ যাতে অতি সহজে যাতায়াত করতে পারে, এর জন্যও আমরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার, বামদল আর কংগ্রেসের ইন্ডিয়া জোট মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে।

মূলত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জনসভায় বলছেন, নাগরিকত্ব সংশোধিত আইন অর্থাৎ সিএএ-এর মাধ্যমে এনআরসি আনতে চায় মোদি সরকার। সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ (যার কাছে বৈধ নাগরিকপত্র নেই) ছাড়া ভারতে এমন কোনো আইন নেই যে, সংশ্লিষ্টকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে দেওয়া হবে। ফলে সিএএ যেমন মোদির সরকারে রাজনৈতিক চাল তেমনি মমতার মুখে রাজনৈতিক বাণী ছাড়া কিছুই নয়। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মুহূর্তে বাংলায় জাঁকিয়ে বসেছে মোদি হাওয়া। আর তাই বাংলায় এসে এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্ট করছেন মোদি। ভোট প্রচারণা এবং প্রতিবেশী দেশের পাশে আছে ভারত—এই দুই বার্তাই তুলে ধরতে চাইছেন।

পঞ্চম ধাপে ভোট রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের শিল্পাঅঞ্চল নামে খ্যাত ব্যারাকপুরে। রোববার ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের সমর্থনে ভাটপাড়ার জগদ্দলে দিনের প্রথম সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ দিন তিনি বলেন, এক সময় বাংলা থেকে বড় বড় বিজ্ঞানীদের নাম শোনা যেত। এখন শোনা যায় জায়গায় জায়গায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা। বাংলা যেন এখন বোমা কারখানা তৈরি হয়ে গেছে। একটা সময় অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে এই বাংলা। আর আজ তৃণমূলের সমর্থনে এরা বাংলায় বেড়ে উঠেছে।

প্রসঙ্গত, জ্যোতিবাবুর আমলে মমতা সবচেয়ে সরব ছিলেন অনুপ্রবেশের বিষয়ে। তৎকালীন কংগ্রেস যুবনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বহুবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ হচ্ছে বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন। সেই সময় নেত্রীর দাবি ছিল, দুই লাখ অনুপ্রবেশকারী ভারতের ভোটার হয়েছে। এরা সিপিআইকে ভোট দেবে এই শর্তে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করেছে। সেই দুই লাখের নথি তৎকালীন স্পিকার সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের মুখে ছুড়েও মেরেছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা। এমনকি ভারতের ইতিহাসে তিনিই প্রথম, যে এই ক্ষোভে বিধানসভায় ভাঙচুর করিয়েছিলেন।

রোববার সেই বিষয়ে মোদি বলেছেন, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে বাংলার যে নেত্রী সরব ছিলেন, আজ তৃণমূলের সমর্থনে এরা বাংলায় বেড়ে উঠেছে।

তিনি আরও বলেন, ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে খনিজ, কয়লা, উর্বর জমি, সমুদ্রবন্দর পর্যটন সব ধরনের রসদ আছে। অথচ তা সত্ত্বেও পূর্ব ভারতের উন্নতি হচ্ছে না। কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূলের সরকার সেই উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

তাই বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলায় এবারে অন্যরকম পরিস্থিতি। গতবারের সাফল্যকে ছাপিয়ে যাবে বিজেপি।

শনিবার সন্ধ্যায় পশ্চিমবাংলায় এসে পৌঁছান মোদি। রাতে রাজভবনেই ছিলেন। এদিন রাজ্যে মেগা কর্মসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। শুরু করেন ব্যারাকপুর দিয়ে। তারপর হুগলির চুঁচুড়ায় লকেট চট্টোপাধ্যায়ের সমর্থনে নির্বাচনী জনসভা করবেন তিনি। সেখান থেকে আরামবাগের পুরশুড়ায় বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগড়ের হয়ে প্রচারনায় অংশ নেবেন। সেখান থেকে হাওড়ায় বিজেপি প্রার্থী রথীন চক্রবর্তীর সমর্থনে জনসভা দিয়ে শেষ করবেন কর্মসূচি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।