কলকাতা: বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচরণায় অংশ নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করছেন, ৪০০ আসন নিয়ে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসতে চলেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আবার দাবি করেছেন, তৃতীয় ধাপের ভোটেই বিজেপি ২০০ আসন ছুঁয়ে ফেলেছে।
তবে মোদি-শাহ’র এই সব দাবি মানতে নারাজ তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পাল্টা দাবি, এসব জুমলা কথা (ভুয়া)। বিজেপি এবার ২০০ আসনও পাবে না!
সোমবার (২১ মে) রাজ্যের বনগাঁ আসনে নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন মমতা। জনসভায় তিনি বলেছেন, এবারে লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া জোট ৩০০ থেকে ৩১৫টি আসন পাবে এবং দিল্লিতে সরকার গড়বে। আর বিজেপি টেনেটুনে ১৯৫ আসন পেতে পারে। ২০০ পার করতে পারবে না। বিজেপি বিরোধী ইন্ডিয়া জোটই এবার সরকার গড়বে।
যদিও ভারতের নির্বাচনে এই ধরনের দাবি এবং পাল্টা দাবি কেবলই কথার কথা। রাজনৈতিক বিশেজ্ঞদের মতে, বিজেপি এবার লোকসভা ভোটের আগে থেকে এই ধারণা চাউর করে দিতে চেয়েছে যে, তারাই ক্ষমতায় আসছে। যাতে সেই প্রচারের মাধ্যমে তারা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে ফ্লোটিং ভোটার। অর্থাৎ যাদের দল-মত বলে কিছু থাকে না, হাওয়া যেদিকে সেদিকেই গা ভাসিয়ে থাকে। তারা অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের প্রচারে প্রভাবিত হয়ে যায়। আর এ কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা ধারণা তৈরি করতে চাইছেন।
যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতজুড়ে বিজেপি হাওয়া থাকলেও শতকরা ভোটের হার এবং আসন এবার গেরুয়া শিবিরে কমবে। যদিও তাদেরই ক্ষমতায় ফেরার সম্ভবানা প্রবল।
এ বিষয়ে ভারতের কিষাণ মোর্চা সংগঠনের বহিষ্কৃত কৃষক নেতা যোগেন্দ্র যাদব দাবি করেছেন, বিজেপির ৪০০ আসন কোনোভাবেই হচ্ছে না। তার হিসাবে গত লোকসভার তুলনায় ৭০টি আসন কম পেতে পারে। বিজেপি একক ক্ষমতায় পেতে পারে ২৩৩টি আসন। আর তাদের জোট এনডিএ পেতে পারে ২৬৮টি আসন।
৫৪৫ আসনের নির্বাচনে সরকার গঠন করতে দরকার ২৭২ আসন। তার আশপাশেই থাকতে পারে বিজেপি। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে সংসদীয় নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবাংলা যে রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় থাকবে তাদের সরকার গঠনে কেউ ঠেকাতে পারবে না। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির যোগী আদিত্যনাথ। তার ওপর সেই রাজ্যে রামমন্দির হিন্দুদের মধ্যে প্রভাব ফেলবে। আবার বিহারে সম্প্রতি ইন্ডিয়া জোট ভেঙে জেএনইউ প্রধান নীতিশ কুমারকে বের করতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি। সেখানে বিজেপি সমর্থন দিয়ে ফের নীতিশকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। বাকি থাকলো বাংলা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার বর্তমানে নানা দুর্নীতিতে জর্জরিত। আর সেই আবহে বিজেপি তাদের প্রচরণায় তেজ বাড়াচ্ছে। এককভাবেই প্রধানমন্ত্রী মোদিই বাংলায় এসেছেন প্রায় দশবারের মতো। সাথে অমিত শাহসহ আরও কেন্দ্রীয় নেতারা বাংলায় প্রচারণায় জোর দিচ্ছেন।
যদিও শেষ রায় দেবে দেশবাসী। আর তা কোনদিকে যাবে তা ৪ জুন ফল ঘোষণার পর বোঝা যাবে। তবে এবারের লোকসভা নির্বাচনে বড়সড় কৃতিত্ব অবশ্যই পেতে পারে দেশটির নির্বাচন কমিশন। কারণ ভারতের নিরিখে বরাবরই নির্বাচনী প্রতিহিংসায় নাম ওঠে পশ্চিমবঙ্গের।
সোমবার শেষ হলো চতুর্থ ধাপের ভোট। বিক্ষিপ্ত অশান্তি ছাড়া একপ্রকার শান্তি বজায় রেখেই ভোট করাতে পেরেছে কমিশন। রাজ্যে এদিন ভোট পড়ছে ৭৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গোটা ভারতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৬২ শতাংশ। যদিও তারপরে আরও এক ঘণ্টা ভারতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য পাওয়া যায়নি।
তবে বাংলার নিরিখে যতই প্রার্থী থাকুক না কেন, এবার রাজ্যে ভোট হচ্ছে মোদি এবং মমতা—এই দুই মুখ দেখে। যে যত বেশি ভোট প্রচারণায় সক্রিয় হতে পারবেন, তার প্রভাবই ব্যালটবাক্সে পড়বে।
ইতোমধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর, আসানসোল, রানাঘাট, বীরভূম, বোলপুর, বর্ধমান পূর্ব, বর্ধমান-দুর্গাপুর, কৃষ্ণনগর—এই আট আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম ধাপের ভোট হবে আগামী ২০ মে। ষষ্ঠ ও সপ্তম দফার ভোট হবে যথাক্রমে ২৫ মে ও ১ জুন। একযোগে ফলাফল প্রকাশ হবে আগামী ৪ জুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫২ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০২৪
ভিএস/এমজেএফ