ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩২, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ভারত

অশান্তির মাঝেই কলকাতায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
অশান্তির মাঝেই কলকাতায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন

কলকাতা: বৈশাখের শুরুতেই মাথার উপর চড়া রোধ। রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভাজনের রাজনীতি বিশেষত সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে জ্বলছে মুর্শিদাবাদ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়।

ঘড়ছাড়া হয়েছে বহু বাসিন্দা, থমথমে বাংলা, নাজেহাল কলকাতাবাসী। এরই মধ্যে বিভেদ ভুলে বাংলার নতুন বছরকে বরণ করে নিল কলকাতা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পহেলা বৈশাখ পালন করল বাঙালিরা। শহরের নানা প্রান্ত থেকে বের হয় শোভাযাত্রা।

সোমবার নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) পহেলা বৈশাখ। ১৪৩২ বঙ্গাব্দকে বরণ করে নিতে কলকাতার রাজপথ ছিল আনন্দমুখর। আনন্দযাত্রায় পা মেলান বাংলার সকল ধর্মের মানুষ। শামিল হন কলকাতার নবীন থেকে প্রবীণ। শোভাযাত্রায় পা মেলায় শহরের শিক্ষার্থীরা। নাচে গানে ছন্দে, বিভেদ ভুলে সম্প্রীতির বার্তা দিলেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ।

কলকাতা থেকে যেন হারিয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষা, বিলুপ্ত বাঙালিয়না। তবে সারা বছর যেন এমনই বাঙালিয়ানার মানসিকতা থাকে, সেই বার্তাই দিলেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার। তিনি বলেন, বাঙালিকে সম্প্রীতি ধরে রাখতে হলে আরও সচেতন হতে হবে। তবেই অপশক্তি ঠেকানো যাবে। তবে তার জন্য বাঙালির যে বাঙালিয়ানা সংস্কৃতির আছে তার আরও প্রসার ঘটাতে হবে।

নাট্যব্যক্তিত্ব সঞ্জীব সরকার বলেছেন, গোটা উপমহাদেশ এবং ভারতজুড়ে যে সাম্প্রদায়িকতা চলছে, তার বিরুদ্ধে মিলনের বার্তা দিচ্ছে কলকাতার পহেলা বৈশাখ।

জাতীয় নববর্ষ উৎসব নামে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ভাষা ও চেতনা সমিতি কলকাতার বুকে পহেলা বৈশাখ পালন করে আসছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সংগঠনটি ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামের পাশ থেকে বের করে একটি বর্ণিল শোভাযাত্রা। শেষ হয় রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন রানু ছায়া মঞ্চে। এরপর দিনভর বাংলা গান, নাটক, কবিতা আর সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা বর্ষবরণ উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়াতেও রয়েছে বাঙালিয়ানা। রয়েছে পান্তা ভাত, শুটকি, ভর্তা, আম পোড়া শরবত, ভাত, ডাল, আলু পোস্ত, মাছ ইত্যাদি।

ভাষা ও চেতনা সমিতির সম্পাদক ইমানুল হক বলেছেন, সম্প্রীতি যেন ভুলে যাচ্ছে বাংলার মানুষ। তার ওপর দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়ছে বাংলা ভাষা। কলকাতা শহরে বাংলা হরফ দেখা দুর্লভ হয়ে যাচ্ছে। বাংলায় নামফলক উঠে যাচ্ছে। বহু জায়গায় হিন্দিতে কথা বলতে হচ্ছে। বাংলায় কথা বললে অনেক জায়গায় বাংলাদেশি শুনতে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে দীর্ঘ বছর ধরে লড়াই চলছে। সেই সচেতনতাকে এগিয়ে রাখতে এই দিনটি আমরা বড়ভাবে পালন করছি।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “নতুন বছরের আগমনে প্রসন্নতা এবং প্রফুল্লতায় ভরে উঠুক বাংলা। সকলকে জানাই শুভ নববর্ষের শুভনন্দন (শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন যুক্ত করে মমতা বলেন শুভনন্দন)। শান্তি ও সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ থাকুক বাংলার প্রতিটি মানুষ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। ”

তার বিপরীতে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন, “রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। রাজ্যে যখন সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুন জ্বলছে, আপনিও গান গাইবেন সেটাই স্বাভাবিক। তবে গানের সুরটা বেসুরো হয়ে গেলো।

নাগরিকদের ‘শুভনন্দন’ জানানোর আগে যে সকল ‘বরাহ-নন্দন’ দাঙ্গা করছে, সরকারি সম্পত্তি পোড়াচ্ছে, খুন করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলে রাজ্যে নাগরিকরা নিজেদের সুরক্ষিত মনে করতো। ”

ভারতে সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাস হওয়ার পর থেকে কয়েকদিন ধরেই অশান্ত পশ্চিমবঙ্গ। নয়া আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদে বিক্ষোভ এবং পরবর্তী সহিংসতায় মৃত্যু, সব মিলিয়ে থমথমে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলা। বিক্ষোভের জেরে সেখানকার ৭০০ পরিবার পার্শ্ববর্তী জেলা মালদহে আশ্রয় নিয়েছে। চলছে পুলিশ-বিএসএফের রুটমার্চ। তার ওপর গতকাল থেকে নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়  এলাকা। সেখানেও চলছে পুলিশের টলহ। ফলে সব মিলিয়ে কিছুটা হলেও পশ্চিমবঙ্গে তাল কেটে পহেলা বৈশাখ উদযাপন হচ্ছে। কলকাতায় স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া থাকলেও সংশ্লিষ্টজেলাগুলো এবার সেভাবে দিনটি উদযাপিত হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।