ঢাকা, বুধবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৩ মহররম ১৪৪৭

ভারত

পশ্চিমবঙ্গে নজরুল সংগ্রহশালা থেকে সরানো হচ্ছে কবির ব্যবহৃত জিনিস

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:২৯, জুলাই ৮, ২০২৫
পশ্চিমবঙ্গে নজরুল সংগ্রহশালা থেকে সরানো হচ্ছে কবির ব্যবহৃত জিনিস

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়ায় কবি নজরুল ইসলামের জন্মভিটেতে অবস্থিত 'নজরুল একাডেমী'র সংগ্রহশালা থেকে কবির সমস্ত সামগ্রী 'কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়'এ সরিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে নজরুল পরিবারের একাংশ।  

সোমবার (৭ জুলাই) এই নিয়ে চুরুলিয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন কবির ভ্রাতুষ্পুত্র কাজী আলি রেজা।

কাজী আলি রেজা বলেছেন, শুধু ভারতবর্ষ নয়, বাংলাদেশ থেকেও প্রতিবছর বহু মানুষ এই মিউজিয়াম দেখতে আসেন। নজরুলপ্রেমী সকলের কাছে এই মিউজিয়াম আগ্রহের বিষয়।

কিন্তু বর্তমানে সেই মিউজিয়ামটাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে। অর্থাৎ এই মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিস বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু, আমরা বলেছি এটা কোনমতেই সম্ভব নয়। ইতিমধ্যেই এক ট্রাক ভর্তি সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অন্য আরেকটি ট্রাক ভর্তি করে সরঞ্জাম নিয়ে যাওয়ার সময় আমরা সেটা বাধা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেছেন, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে একবার বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, নজরুল একাডেমি থেকে কোনো জিনিসই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে যাওয়া হবে না। বরং সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেন সংগ্রহ করে, আমরা তার জন্মভিটের মিউজিয়ামে রাখতে পারি। এখন দেখছি, সেগুলোই অন্যত্র চলে যাচ্ছে।

কবির ভ্রাতুষ্পুত্র বলেছেন, নজরুল মেলা উপলক্ষে কয়েকদিন আগেই আসানসোলের তৃণমূল সাংসদ সদস্য শত্রুঘ্ন সিনহা কবি নজরুলের বাড়িটি সংস্কারের জন্য ১০ লাখ রুপি আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছিলেন। পাশাপাশি পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীও আলাদা করে ৫ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ওই অর্থ আমরা পাইনি, কোথায় গেল, কি কাজ হয়েছে তা এখনো আমাদের জানা নেই।

এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকলেই তাদের দায় এড়াচ্ছেন। আমরা সাধারণ মানুষের মতামত নিচ্ছি, যাতে কোনভাবেই এই নজরুল একাডেমি বা এই সংগ্রহশালার কোনো জিনিস নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় না চলে যায়। কাজী আলি রেজার অভিমত, কবি তীর্থ চুরুলিয়া মানুষের কাছে একটি আবেগ। কবির মিউজিয়াম থেকে সেসব জিনিস বিশ্ববিদ্যালয় চলে গেলে এটা অন্ধকার হয়ে যাবে। তখন আর কোনো মানুষ এখানে আসবেন না।

এদিনের সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নজরুলের ভ্রাতুষ্পুত্র রেজাউল করিমের মেয়ে এবং নজরুল অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত থাকা সঙ্গীতশিল্পী সোনালি কাজী সহ স্থানীয় বাসিন্দারাও।  

অন্যদিকে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ড. চন্দন কোনার জানিয়েছেন, নজরুল একাডেমির এখন কোন অস্তিত্ব নেই। নজরুল একাডেমি, কবির বাস্তুভিটে, সংগ্রহশালা সবকিছুই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চুরুলিয়ায় একটি সংস্কারের কাজ চলছে। এর জন্য দেড় কোটি রুপি বরাদ্দ করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগ এই পুরো প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। তারই অংশ হিসেবে ধীরে ধীরে কবির ভিটেবাড়ি, সংগ্রহশালা সংস্কার হবে। আর সেই কথা মাথায় রেখেই সংগ্রহশালায় থাকা কবির পান্ডুলিপি সহ অন্য জিনিসপত্র সংরক্ষণ এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য সেগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আসা হচ্ছে। সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হলে ফের কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ওই সংগ্রহশালায় রেখে দেওয়া হবে। মূলত ওই কবির মিউজিয়ামকে বিশ্বমানের করে তোলার লক্ষ্যেই রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।

তার অভিমত, নজরুল কারো ব্যক্তিগত বিষয় নয়। সারা বিশ্বের লোক নজরুলকে নিয়ে কাজ করছেন। আমার মনে হয় কিছু মানুষ কবির পরিচয় দিয়ে এই সব বিষয়গুলি নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে রাখতে চাইছেন।

মূলত, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মস্থান পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম - বর্ধমান জেলার চুরুলিয়াতে অবস্থিত। কবির জন্মভিটে মাটির বাড়িটি ১৯৫৬ সালে ভেঙে ফেলে ১৯৫৮ সালে সেখানেই তৈরি করা হয় একটি বহুতল ভবন- যা নজরুল একাডেমি নামে পরিচিত। এই নজরুল একাডেমির নীচ তলায় রয়েছে একটি সংগ্রহশালা। এখানে রয়েছে কবির হাতে লেখা পান্ডুলিপি, প্রথম প্রকাশিত গল্প, কবিতা এবং গানের পত্রিকার কপি, তার ব্যবহৃত পোশাক, বাদ্যযন্ত্র, বিভিন্ন সময়ে পাওয়া সন্মাননা, রয়েছে প্রমিলা দেবীর ব্যবহৃত খাট। দেয়ালে রয়েছে কবির বিভিন্ন সময়ের ছবি। ওই সংগ্রহশালায়ে রয়েছে ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবির মৃত্যু ও পরবর্তী শবযাত্রার আলোকচিত্র। বছরভর তা দেখতে এই একাডেমিতে ভিড় জমান সাধারণ মানুষ।

কিন্তু কবির সেসব স্মৃতিচিহ্নগুলি ওই জেলারই আসানসোলে অবস্থিত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তুলে নিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ। বিষয়টি সামনে আসতেই একদিকে যেমন চুরুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্রোহী হয়ে উঠেছেন, তেমনি অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নজরুল একাডেমী কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, কোনও অবস্থায় সেই সমস্ত জিনিস গ্রামের বাইরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। যদিও বিতর্ক ওঠার পরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে মিউজিয়ামকে বিশ্বমানের করে তোলার লক্ষ্যেই সেটি সংস্কারের কাজে হাত দেওয়া হবে। তাই আপাতত মিউজিয়ামে থাকা কবির ব্যবহৃত জিনিসপত্র নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। সংস্কারের কাজ শেষ হলেই তা পুরনো জায়গায় রেখে আসা হবে।

ভিএস/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।