আগরতলা: শ্রাবণের অবিরাম বর্ষণের রাতে বা কার্তিকের হাল্কা শীতে কাঁথা জড়িয়ে ঘুমানোর মজাই আলাদা! গ্রামের মা ঠাকুরমারা নিত্যদিনের যাবতীয় কাজ সেরে দিনে বা রাতে সেলাই করতেন কাঁথা। এমন কি কাঁথা সেলাই নিয়ে মা ঠাকুরমাদের মধ্যে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতাও হতো, কে কার চেয়ে বেশি সুন্দর নকশা তুলতে পারেন।
কাঁথায় উঠে আসতো গ্রাম বাংলার প্রতিদিনের চালচিত্র, এমনকি নিজের জীবনের সুখ-দুঃখের কাহিনীও উঠে আসতো রঙিন সূতার কাজে।
তবে শহরাঞ্চলে সেই নকশি কাঁথার জায়গা দখল করেছে চীনা কম্বল। একইসঙ্গে এই নকশি কাঁথা সাধারণ মানুষের বিছানা ছেড়ে উঠে গেছে ধনীদের ড্রয়িং রুমের শো কেসে।
হারিয়ে যেতে বসা এই গ্রামীণ শিল্পকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে এসেছে ত্রিপুরা সরকারের সমাজকল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দফতর।
সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দফতরের দিক থেকে রাজ্যের পশ্চিম জেলার অন্তর্গত পটুনগরের হাতিপাড়া অঙ্গণওয়াড়ী কেন্দ্রে স্থানীয় গ্রামীণ নারীদের নকশি কাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি দফতরের উপ-পরিচালক পূর্ণেন্দু ভূষণ দত্ত বাংলানিউজকে জানান, রাজ্যের গ্রামীণ নারীদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যেই নানা ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন। এ ধরনের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে পশ্চিম জেলার জন্য ৯ লাখ ২০ হাজার রুপি মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ শেখানো হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, দফতর থেকে আধিকারিকরা এলাকায় গিয়ে জেনে নেন কোনো এলাকার বেশিরভাগ নারীরা কি কাজে দক্ষ। সেই মতো কাজে তাদের আরও দক্ষ করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। যেমন হাতিপাড়ার নারীদের নকশি কাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
হাতিপাড়া অঙ্গণওয়াড়ী কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিতে আসা গ্রামের নারী কল্পনা দেবনাথ জানান, ঘরের কাজের পাশাপাশি যদি নকশি কাঁথা তৈরি করা যায় তবে তা বিক্রি করে যে রুপি আসবে তা সংসারের কাজে লাগানো যাবে। তাই এখানে প্রশিক্ষণ নিতে আসা।
প্রশিক্ষণ নিতে আসা আরেক গৃহবধূ অনিতা রাণী দাস বলেন, এখন বাজারে নকশি কাঁথার খুব চাহিদা। এগুলো বিক্রিও হয় ভালো। তাই মন দিয়ে শিখছি।
প্রশিক্ষক প্রতিমা দেবনাথ বাংলানিউজকে বলেন, গ্রামীণ নারীরা নকশি কাঁথা তৈরির প্রশিক্ষণ নেওয়ায় একদিকে যেমন হারিয়ে যেতে বসা গ্রামীণ শিল্পের পুনরুজ্জীবন ঘটছে, অন্যদিকে এর মধ্য দিয়ে নারীরা স্বনির্ভর হতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৬
এটি