দিল্লি থেকে: সোমবার বরবাদ করে দিল দিনের শুরুটি। লালকেল্লা বা রেডফোর্ট নাকি বন্ধ।
অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো কেল্লার বাইরে থেকেই নেওয়া শুরু হলো সৌন্দর্যের নির্যাস। এ পাশটি আবার রাজনৈতিক ইতিহাসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কেল্লার উপর দাঁড়িয়ে প্রতিবছর ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। নেতাজী সুভাষ মার্গের এ কেল্লা সম্রাট শাজাহানের সুন্দর সৃষ্টিগুলোর একটি।
১০ বছর টানা কাজ করে ১৬৪৮ সালে উদ্বোধন হয় রেড ফোর্ট। আগে পড়েছি-শুনেছি কেল্লার ভেতরের ভবনগুলো সব মার্বেল পাথরের তৈরি। রংমহল, খাস-ই দেওয়ান দেখা হলো না। লাল বেলেপাথরের তৈরি বলেই নামকরণ হয়ে যায় লালকেল্লা।
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকাভুক্ত লালকেল্লায় ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করার পর ওঠে প্রথম স্বাধীন দেশের পতাকা। কেল্লায় থাকে না কেউ। অসংখ্য কবুতর ধরে রেখেছে। যেদিন দর্শনার্থী আসা বন্ধ থাকে সেদিন তারাই ঘুরে বেড়ায় কেল্লার লাল পাথরে।
ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম এখানে ইচ্ছেমতো ছবি তোলা ছাড়া আর কিছু করতে পারলো না। দেখা হলো না এর আসল রূপ, সম্রাট শাজাহানের সৃষ্টি।
কেল্লা থেকে কিলোমিটারখানেক এগোলেই বিখ্যাত সেই মসজিদ। দিল্লি জামে মসজিদ। এ মসজিদটিও সেই মুঘল আমলের। ভারতবর্ষের স্থাপত্যকলায় মুঘলদের যে সৃজনশীল ভাবনার প্রতিফলন পাওয়া যায় তার আরও একটি উদাহরণ এ মসজিদ। এটা পুরনো দিল্লিতে অবস্থিত। ১৮৫৭ সালে সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা মসজিদ দখল করে সৈন্যঘাঁটি বানায় বলে জানা যায় ইতিহাস থেকে। লাল বেলেপাথর ও মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি এ মসজিদে একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারে প্রায় ২৫ হাজার মুসল্লি।
সব ধর্মের মানুষের প্রবেশাধিকার রয়েছে এখানে। ঢুকতে পারে নারীরাও। নজরকাড়া স্থাপত্যের এ মসজিদে গম্বুজ রয়েছে তিনটি। মিনার দু’টি। মিনারে ওঠা যায় ৩০ রুপির টিকিট কেটে। ডেলিগেশন টিমের গ্রুপ ফটো সেরে ১২১টি চিপা সিঁড়ি বেয়ে তিন বিদেশির সঙ্গে উঠে দেখা গেল ভিন্ন এক দিল্লি।
১৬৪৪ সালে মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন সম্রাট শাজাহান। লালকেল্লাও তার স্থাপনা। এই মিনারের চূড়া থেকে পাখির চোখে দেখা যায় লালকেল্লা। ভেতরে না ঢোকার আক্ষেপ কিছুটা হলেও দূর হলো এ মিনারে উঠে কেল্লা দেখে। ১৩৫ ফুট উঁচু মিনার থেকে দিল্লি সিটির অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। মিনারের চূড়ায় তিন-চারজন দাঁড়ানোর মতো জায়গা রয়েছে।
জানা যায়, শাজাহানের উজির সাদ উল্লাহ খানের তত্ত্বাবধানে মসজিদটি নির্মিত হয়। ১৬৫৬ সালে উজবেকিস্তানের ইমাম বুখারী মসজিদটি উদ্বোধন করেন। মূল ভবনের সামনের চত্বরে রয়েছে ওজু করার খোলা জায়গা। মসজিদে মার্বেল ও লাল বেলে পাথরে কাজ সত্যি দেখার মতো। তিনটি গেট দিয়ে ঢোকা যায় মসজিদে।
আগ্রাফোর্ট থেকে বসে তাজমহল দেখা, মসজিদ মিনার থেকে রেডফোর্ট দেখা- সত্যি সম্রাট শাজাহানের চিন্তার প্রসারতা, রুচি ছিল বটে!
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬
এইচএ/এএ
** সান্ধ্য আলোয় যুদ্ধস্মৃতির ইন্ডিয়া গেট
** জাদুটানা দিল্লি জাদুঘর
** বাংলা উচ্চারণেই মুগ্ধতা ছড়ালেন রাষ্ট্রপতি প্রণব
** বাংলাদেশের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রণব মুখার্জির
** হিমালয় দেখতে দেখতে সোয়া ২ ঘণ্টায় দিল্লি!
** ভারতে বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম
** ভারত যাচ্ছে বাংলাদেশের ইয়ুথ ডেলিগেশন টিম