১৯৪৫-১৯৪৬ শিক্ষাবর্ষে কলকাতার তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
কলকাতার তালতলার লাল রঙের বাড়িটি ঘিরে রয়েছে অনেক ইতিহাস। হোস্টেলটির চওড়া সিঁড়ি দিয়ে উঠলে একটি লম্বা করিডোর। করিডোরের দু’পাশে ছাত্রদের ঘর। সদ্য রং করা হলুদ দরজাগুলোর পেছনে আজও থাকেন বহু ছাত্র।
ব্রিটিশ আমলে নির্মিত বাড়িটির তৃতীয় তলায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ২৪ নম্বর কক্ষটি। তৃতীয় তলায় উঠলেই বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কারাজীবনের কথা পাথরে খোদাই করে লিপিবদ্ধ করা রয়েছে সাদা মার্বেল ফলকে।
১৯৯৮ সালে ২৪ নম্বর কক্ষটিকে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি রক্ষার্থে সংরক্ষণ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কক্ষটির সঙ্গে ২৩ নম্বর কক্ষটিও জুড়ে দেওয়া হয়। ২৩ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধু পড়াশোনা করতেন আর ২৪ নম্বর কক্ষে তিনি ঘুমাতেন।
ওই বছরের ৩১ জুলাই স্মৃতিকক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত তৎকালীন বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনার শেখ আহমেদ জালাল, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তৎকালীন উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্য সাধন চক্রবর্তী, আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ ড. সত্যব্রত ভট্টাচার্য প্রমুখ।
২৪ নম্বর কক্ষে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর পড়ার চেয়ার-টেবিল, কাঠের আলমারি ও খাট। টেবিলের ওপরে বঙ্গবন্ধুর একটি চিত্র। রয়েছে মুজিব কোট পরিহিত মার্বেল পাথরে তৈরি বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যও। এখানে প্রতি বছর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হয়।
পাশের ২৩ নম্বর কক্ষটিকে সাজানো হয়েছে ভিন্নভাবে। সেখানে আছে কাঠের ফ্রেমে বঙ্গবন্ধুর একটি আলোকচিত্র এবং বেশ কিছু বই। বইগুলোর বেশিরভাগই বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা।
প্রতিদিনই বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকক্ষটি দেখতে। হোস্টেলের কর্মীরা সানন্দে সাহায্য করেন তাদেরকে।
বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু বেশ কিছু সভাও করেছেন। সেই সময়ে হোস্টেল সুপার ছিলেন অধ্যাপক সাঈদুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার আলাদা স্নেহ ছিল বলে শোনা যায়। একবার হোস্টেল ছাত্র সংসদের নেতা হিসেবেও মনোনীত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
কলকাতার বেকার হোস্টেল ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে গেলে ইতিহাসকে জানা যায়। প্রতিনিয়ত বহু মানুষকে শেকড়ের সন্ধান দিচ্ছে এই স্মৃতিকক্ষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৭
ভিএস/আরআর/এএসআর