দার্জিলিং চা নিয়ে অশনি সংকেত দেখছেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা। পাহাড়ে গোলমাল এবার সরাসরি ধাক্কা দিতে শুরু করেছে চায়ের বাজারে।
দার্জিলিংয়ে বছরে চারবার চা ওঠে। সেগুলো হলো ফার্স্ট ফ্ল্যাস, সেকেন্ড ফ্ল্যাস, অটম ও রেনি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেকেন্ড ফ্ল্যাসের চা, যা এই সময় বাজারে আসার কথা। কিন্তু বাজার যে বড় মন্দা। যে পাতা চা বাজারে ৬শ’ রুপি থেকে ৭শ’ রুপিতে বিক্রি হতো, সেটির দর এখন হাজার রুপির কম নেই। দার্জিলিংয়ে বাগান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইতিমধ্যেই চায়ের জোগানে সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে আগামী অগাস্ট-সেপ্টেম্বরের শেষে দার্জিলিংয়ের চা আর আদৌ বাজারে পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ!
বাজার কতটা খারাপ, তা খোঁজ নিতে কলকাতার ডালহৌসীর একজন বিখ্যাত পাইকার এবং খুচরা বিক্রেতার ‘ধ্রুব টি হাউস’ কাছে গিয়ে দেখা গেল, পরিস্থিতি সেখানেও একই রকম। প্রায় সব ধরনের দার্জিলিং চায়ের পাইকারি দর গড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ রুপি বেশি বেড়ে গিয়েছে। যে চা ৫শ’ রুপির নিচে ছিলো, তা এখন রাতারাতি ৮শ’ রুপিতে পৌঁছেছে।
কলকাতার খুচরা ক্রেতারা এই দোকান থেকে সবচেয়ে বেশি যে চা পাতা কেনেন, তার দর ছিলো এক হাজার থেকে ১২শ’ রুপির মধ্যে, তা এখনই কেজি প্রতি দু’হাজার রুপিতে পৌছেছে। একেবারে নিচু মানের যে পাতা চা রয়েছে তার দর এখনও কেজিতে ১০ রুপি থেকে ১৫ রুপির বেশি হেরফের হয়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এখানে সংকট নেই। এই সব চা পাতারও আগামীতে দাম বাড়তে চলেছে। পাহাড় সমস্যার যদি সমাধান না হয়, তাহলে আর কিছুদিন পর থেকেই খোলাবাজারে তা টের পাওয়া যাবে।
এখনই টের না পাওয়ার কারন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে মাসখানেকের চা মজুত রয়েছে। সেই স্টক ফুরালেই বাজারের আসল চেহারা বেরিয়ে আসবে। তখন সত্যিই সংকটে পড়বেন দার্জিলিং চা প্রেমী মানুষ।
তবে সাধারণ ক্রেতারা কতটা ভুগবেন, সেই বিষয়ে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি কল্যাণ সুন্দর মণ। তিনি বলেন, গত বুধবার (১২ জুলাই) চায়ের নিলাম হয়েছে। তাতে যে চায়ের দর গত বছর ছিল কেজি প্রতি ৪৯১ রুপি, তা ওই দিন কেজি প্রতি ৫৭১ রুপিতে নিলাম হয়েছে। কিন্তু যেখানে ৫৬ হাজার কেজি চা ওই দিন নিলাম হয়েছে, সেখানে আগামী ১৮ জুলাই নিলামে উঠতে চলেছে বড়জোর দু’হাজার কেজি চা। এরপর আর চা মজুত নেই। কারণ ৯ জুন থেকে দার্জিলিং চা আসা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আর নিলাম হওয়া সম্ভব নয়। যদি দার্জিলিংয়ের অবস্থা স্থিতিশীল না হয়, তাহলে বাগান থেকে চা বাজারজাত হতে আরও মাস দেড়েক সময় লাগবে।
কল্যাণ সুন্দর বলেন, দার্জিলিংয়ের চায়ের পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে, তা এ থেকেই বুঝে নেওয়া সম্ভব।
অতএব পাহাড়ের সমস্যা না মিটলে বাঙালির কপালে দার্জিলিংয় চায়ের ঘ্রাণ যে আর জুটবে না তা এবার হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কলকাতাবাসী।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
ভিএস/বিএস