শিয়ালদহ থেকে পশু কিনতে এসেছেন শেখ আব্দুস সামাদ। তিনি বলেন, এবছর অনেকটা দেরিতে গরু কিনতে এলাম।
অপরদিকে নারকেলডাঙা হাটের বিক্রেতা রাজেশ রহমান জানান, প্রতিবারের তুলনায় এখানে হাট অনেক আগে থেকেই বসেছে। বেচাকেনাও ভালো। ফলে ভালো পশু দিন পনেরো আগেই শেষ হয়ে গেছে। এখন তো প্রায় ভাঙা হাট।
জানতে চেয়েছিলাম এবারে এতো তাড়াতাড়ি হাট শেষ হয়ে যাবার কারণ কি। যোগান কম বা রাজনৈতিক কোনো অস্থিতরতা! বিক্রেতা রহমান জানান, মোটেও না। পশ্চিমবঙ্গে কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অন্তত হাটে আমরা তা লক্ষ্য করিনি। বরং এটা বলা যায়, এবারে ক্রেতা একটু বেশী। না হলে এই সময়ও হাট ভর্তি গরু থাকে। তবে আজ রাতে আরও গরু আসবে।
কলকাতার বড় পশুর হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম হাতিয়ারপুর, রাজাবাজার, নারকেলডাঙা, খিদিরপুর, মেটিয়াব্রুজ ও গার্ডেনরিচ। এসব এলাকায় স্থায়ী বাজারের পাশাপাশি প্রতিবছরের মতো এ বছরও বসেছে পশুর হাট। চলছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দরদাম করে পছন্দ মতো কেনাবেচা। এসব অঞ্চলে কলকাতা এবং তার আশপাশের বিভিন্ন এলাকার মানুষের ভিড় জমিয়েছে হাটগুলোতে।
কোরবানির উদ্দেশ্যে হাট শুধু কলকাতায় নয়, বসেছে কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল বজবজ, ডাকঘর, আক্রা, সন্তোষপুর, বারুইপুর ইত্যাদি জায়গাগুলোয়।
পরব যত কাছে আসছে তত কমবেশি ভিড় জমছে হাটগুলোয়। যেমন গার্ডেনরিচ ও মেটিয়াব্রুজ অঞ্চলে দেখা গেলো গরু এবং উটকে কেন্দ্র করে হাট। অন্য দিকে রাজাবাজার খিদিরপুর এলাকায় দেখা গেলো খাসি ও দুম্বার জন্য জমজমাট হাট। মেটিয়াব্রুজের এক বিক্রেতা নুর আলম বলেন, অন্যান্য বছরের মত এবারও বাজার ভালো।
হাটগুলোয় কোথাও উট, কোথাও গরু আবার কোথাও খাসি বিক্রি হচ্ছে। কলকাতায় গরু দাম চলছে ২০ হাজার রুপি থেকে ১ লাখ রুপির মধ্যে। খাসী ১৫ হাজার রুপি থেকে শুরু। উট সর্বনিন্ম চল্লিশ হাজার। তবে উটের ক্রেতা এবারে খুবই কম। এক লাখ রুপি দামের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশী। গোস্ত মোটামুটি ছয় থেকে সাত মণ। অবশ্য প্রতি ক্ষেত্রেই দাম নির্ধারণ হচ্ছে স্বাস্থ্য ও ওজনের ওপর।
কলকাতার হাটগুলোতে গরু আসে বিভিন্ন জেলা থেকে। তবে তার মধ্যে এবার বর্ধমান জেলা থেকে বেশি সংখ্যায় গরু এসেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বাজারে যোগানের কোনো অভাব নেই বলে জানালেন, গার্ডেনরিচের বড় পশু ব্যবসায়ী আনোয়ার ও সুলেমান।
"সারা বছর কলকাতার বিভিন্ন গোস্তের দোকান এবং হোটেলে মাল সাপ্লাই দিই। কোরবানি এলে প্রতিবারই বাড়তি পশু তুলি, কিন্তু অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর চাহিদা একটু বেশী। "
কুরবানি নিয়ে কোন সমস্যা আছে কি?
এই প্রশ্নের উত্তরে, গরু বিক্রেতা আমিনুল হোসেন জানান, দীর্ঘ বছর ধরে তিনি ব্যবসা করে আসছেন। কোনদিনই কোন সমস্যা হয়নি। এ বছরও কোন সমস্যা নেই।
তিনি বলেন, আপনারা যা সমস্যা শোনেন ওগুলো অন্য কোথাও হতে পারে, পশ্চিমবঙ্গে হয় না। কোনোদিন হয় নি, আর হতেও দেবো না। আমরা মিলেমিশে থাকতে ভালোবাসি।
পশু হাটগুলোর সঙ্গেই বিক্রি হচ্ছে গোস্ত কাটার কাঠ এবং কোরবানির অন্যান্য যন্ত্রপাতি। সেসবের বিক্রেতারা জানান, তাদের বেচাকেনাও ভালো। প্রতিবছরের মত কোরবানির দিন যত কাছে আসবে, বিক্রি অনেকটাই বেড়ে যাবে সরঞ্জামের। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে দাম বেড়েছে আদা, পেয়াজ, রসুনের।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০১৭
ভিএস/জেডএম