এই লালকেল্লা থেকে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ভারত সরকার। এবারই শেষবারের মতো সরকারিভাবে এই স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ইন্ডিগোকে পরাস্ত করে নিলাম জিতেছে ডালমিয়া গ্রুপ।
রক্ষণাবেক্ষণ, টিকিটের হার নির্ধারণ, পরিষেবা প্রদান, সৌন্দর্য বর্ধন, সংস্কার, থ্রি ডি ম্যাপিং, পর্যটনবান্ধব পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদির দায়িত্ব ২৫ কোটি রুপির বিনিময়ে একটি কর্পোরেট গোষ্ঠীকে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। স্বাক্ষরিত হয়েছে সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি।
এই গোষ্ঠী লালকেল্লাকে আধুনিক প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। পরিষেবা প্রদান ছাড়াও এই বেসরকারি গোষ্ঠী ১ হাজার স্কয়ার ফুটের একটি ভিজিটর সেন্টার গড়ে তুলবে। আর লালকেল্লা দেখতে আসা পর্যটকদের থেকে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান বাবদ কত টাকা নেওয়া হবে সেটি স্থির করে অনুমোদন নিতে হবে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের কাছ থেকে।
তবে লালকেল্লার রক্ষণাবেক্ষণ তথা পরিষেবা প্রদান ও দেখভালের দায়িত্ব বেসরকারি কর্পোরেট গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রের এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন। মমতা বলেন, লালকেল্লাতেই প্রতি বছর ১৫ আগস্ট জাতীয় পতাকা তোলা হয়। আর সেই দায়িত্ব নিতেই সরকার অপারগ! আজ আমাদের ইতিহাসের এক কালো দিন।
পাশাপাশি, কংগ্রেসও সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে বলেছে, লালকেল্লার পর মোদী সরকার এবার কোন কোন ঐতিহাসিক স্থাপনার পরিচালনা বেসরকারি হাতে তুলে দেবে?
ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও মোগল সাম্রাজ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম ডারলিম্পল।
তিনি বলেন, লালকেল্লার মতো একটি ঐতিহাসিক কেল্লাকে সংস্কার ও সামগ্রিক পরিচালনার জন্য কর্পোরেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার থেকে বিকল্প ব্যবস্থার চেষ্টা করা উচিৎ ছিল।
উল্লেখ্য, কর্পোরেট গ্রুপ লালকেল্লাকে হাতে নিয়ে অনেক বেশি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করবে বলে অভিযোগ উঠেছে। তার কিছুটা আভাস পাওয়া গিয়েছে ইতোমধ্যে। দেখা যাচ্ছে, লালকেল্লায় আগামী দিনে এই ডালমিয়া গ্রুপ গড়ে তুলবে আধুনিক মানের ক্যাফেটেরিয়া, স্যুভেনির শপ, ডিজিটাল ইনটার অ্যাকটিভ কিয়স্ক, অ্যাপসের মাধ্যমে মাল্টি লিঙ্গুয়াল অডিও ভিজুয়াল ব্যবস্থা ও এলইডি স্ক্রিনিং।
ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির শাহজানাবাদে ১৬৩৯ সালে লালকেল্লা গড়ে তুলেছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান। তারপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দু’শো বছরের বেশি সময়। তৎকালীন লালকেল্লা ছিল মোগল সম্রাটদের প্রধান বাসস্থান। মোগলদের যাবতীয় অমূল্য সম্পদ এবং এই কেল্লার অঙ্গ হিসেবে অপূর্ব মহামূল্যবান পাথর ছিল বিশ্বের বিস্ময়।
সেই বিস্ময়গুলি দু’বার লুণ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবার ১৭৪৭ সালে নাদির শাহ দিল্লি আক্রমণ করেন। সেসময় সব থেকে বেশি ক্ষতি এবং লুটপাটের শিকার হয়েছিল এই লালকেল্লা। আর এরপর ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের সময় ব্রিটিশ সেনারা লালকেল্লায় তাণ্ডব চালায়। কার্যত ধ্বংস এবং লুণ্ঠিত হয় প্রচুর মূল্যবান সামগ্রী ও পাথর।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, ২৯ এপ্রিল, ২০১৮
ভিএস/আরআর