ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

মোহনীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়গান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৯
মোহনীয় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রীর জয়গান বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া-কে স্বাগত জানিয়ে ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক আয়োজন

নয়াদিল্লি থেকে: মঞ্চে চেয়ারে বসে প্রকট চাকমা বাঁশিটা হাতে নিলেন। ধাতস্ত হয়ে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে সুর তোলার আগে শ্রদ্ধাবনত স্বরে বললেন, ‘এই স্বাধীনতার মাসে বাংলাদেশের মুক্তির জন্য প্রাণ দেওয়া শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় এই সুর…’। বাঁশিতে তিনি ফুঁ দিতেই, বুকের কোথাও যেন টান পড়লো…‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/ আমরা তোমাদের ভুলবো না…।’

কয়েক লাইনের বাঁশির সুরের ইতি যখন তিনি টানলেন, তুমুল করতালিতে মুখর হয়ে উঠলো হোটেল দ্য সূর্যর বলরুম। বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া-২০১৯-কে স্বাগত জানিয়ে ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক এ আয়োজনকে যেন অনন্য রূপ দিলেন প্রকট।

বাঙালি জাতির স্বাধীনতার জন্য যে এক সাগর রক্ত দিতে হয়েছে, তাতেতো এই ভারতের অনেক সেনা-যোদ্ধারও রক্ত আছে। প্রকটের এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন ছুঁয়ে গেলো বাংলাদেশি ডেলিগেট, ভারতের স্বাগতিক- সবাইকে।

প্রকট শেকড়টা স্মরণ করিয়ে দিয়ে থামলেন না, আবার সুর ধরলেন, এবার তার বাঁশির সুর গাইতে থাকলো বাউল শাহ আবদুল করিমের গান, ‘কেন পিরিতি বাড়াইলারে বন্ধু…’। কেউ দু’হাতে মুখ ঠেস দিয়ে ডুবে যেতে চাইলেন সুরে, কেউ সেই বাঁশির সুরে সুরে ঠোঁট মিলিয়ে সরব করতে থাকলেন বলরুমকে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া-কে স্বাগত জানিয়ে ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক আয়োজনশুক্রবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এ আয়োজন এভাবেই সুরের মায়ায়, বাজনা-নৃত্যের তালে মোহিত করেছে অতিথি ও ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমের সদস্যদের। ২৮ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে সাত দিনের সফরে ভারতে এসেছে ডেলিগেশন টিম।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশ থেকে আসা শতযুবাকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা করেন ডেলিগেশন টিমকে আমন্ত্রণ জানানো ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিচালক এন রাজা।

তিনি বলেন, ভারত-বাংলাদেশের জনগণের মধ্যকার বন্ধুত্ব ও মৈত্রীর সম্পর্ক সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ভূমিকা অতুলনীয়। ইয়ুথ ডেলিগেশন টিমের এই সফর সেই সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে দু’দেশের জনগণের বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়াটা অনন্য পর্যায়ে পৌঁছাবে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া-কে স্বাগত জানিয়ে ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক আয়োজনবাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের মধ্যে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্য থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে এন রাজা আরও বলেন, আমাদের দু’দেশের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ প্রায় একই রকমের। তাই নিজেদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে আমরা সেই সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সহজেই সমাধান করতে পারি। আর মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মতো, বাংলাদেশ সবসময়ই ভারতকে পাশে পাবে।

এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ডেলিগেশন টিমের প্রধান সমন্বয়ক ঢাকায় ভারতের হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) নবনীতা চক্রবর্তী। অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন ডেলিগেশন টিম লিডার সৈয়দ তাসনীম মাহমুদ এবং কো-লিডার ও বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের তারকা জাহানারা আলম।

বক্তৃতা পর্ব শেষে শুরু হয় আয়োজনের বর্ণিল আকর্ষণ। প্রথমেই মঞ্চে ডাক পড়ে নুর ই রিজিয়া মম’র। বাঁশিতে প্রকট চাকমা আর গিটারে সায়েদুল হককে নিয়ে তিনি পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীত ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে…’। বাংলা ও হিন্দি মিলিয়ে গাওয়া এই গানের পর উপস্থিতির মুহুর্মুহু করতালি যেন উৎসবের শোর তুললো বলরুমে।
বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া-কে স্বাগত জানিয়ে ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আয়োজিত সাংস্কৃতিক আয়োজনএরপর ভারতের নৃত্যশিল্পী অরুপা পরিবেশন করেন ‘ভারতনাট্যম’। নিজের পূর্বসূরীদের অনেকে বাংলাদেশের জানিয়ে আগেই ডেলিগেটদের আপন বনে যান এই নৃত্যশিল্পী। সেই আপনজনের নৃত্য পরিবেশনের সময় ভিডিও রেকর্ড হচ্ছিলো বেশিরভাগ স্মার্টফোনেই।

এরপর প্রকট চাকমার সেই ‘বাঁশির জাদু’। তার জাদুর পর ভারতের তাপালি ও মেধা পরিবেশন করেন কত্থক নৃত্য। কোহিনুর আক্তার গোলাপী গিটারিস্ট সায়েদুল হককে নিয়ে মঞ্চে ওঠার পর যেন নামতেই পারছিলেন না ডেলিগেটদের একের পর এক আবদারে। ছেড়ে দে নৌকা মাঝি…দিল্লিতে নিজামউদ্দিন আউলিয়া এলো…এভাবে তিনটি গান গাইতে হলো তাকে। তার গানে গলা মিলিয়ে বলরুমে মুখরতা ছড়ালেন ডেলিগেটরাও।

মুগ্ধতা ছড়ানো সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার রঙিন শেষটা টানেন সংগীতশিল্পী জয় শাহরিয়ার। তারুণ্যের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা চিরসবুজ গান- ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো…' এর সুর তুলে বলরুমে মূর্ছনা ছড়ান জয়। তার গানের দ্যোতনায় মিলে যাচ্ছিলো দর্শক-শ্রোতার গলা।  

পেটে ক্ষুধা নড়েচড়ে না উঠলে যেন এই উপভোগ্য সন্ধ্যা শেষ করতে দিতেন না ডেলিগেটরা।

আরো পড়ুন:
** ভারতের সংসদে বাংলাদেশের শতযুবা
** মেঘের রাজ্যে মাথা উঁচিয়ে হঠাৎ হিমালয়
** নয়াদিল্লি পৌঁছেছে বাংলাদেশের শতযুবা
** ভারতের পথে ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ 
** ১০০ ‘বাংলাদেশি-বন্ধু’ ভারত যাচ্ছে বৃহস্পতিবার
** ভারত যাচ্ছে আরও ‘১০০ বাংলাদেশি-বন্ধু’​
**২৫শ বছরের ইতিহাসের জাদুঘরে বাজছে 'কারার ওই লৌহ কপাট'


বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৯
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।