নিরাপত্তার দাবিতে ধর্মঘটকারীদের নৈতিক সমর্থন জানিয়ে শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে গণইস্তফার ধুম পড়েছে রাজ্যের সরকারি চিকিৎসক ও প্রশাসকদের মধ্যে। শনিবার (১৫ জুন) পর্যন্ত প্রায় ৭০০ সরকারি চিকিৎসক সরাসরি পদত্যাগপত্র পেশ করেছেন।
এখন পর্যন্ত সরকারি হাসপাতাল পিজির ১৭৮ জন, এনআরএসের ১০৮ জন, আরজিকরের ১২৬ জন, কলকাতা মেডিকেলের ২৮ জন, বর্ধমানের ৩৬ জন, মুর্শিদাবাদের ৩২ জন, মালদহের ২৫ জন এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের অসংখ্য চিকিৎসক, বিভাগীয় প্রধান ও সিনিয়র অধ্যাপকসহ ১০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
এছাড়া কলকাতার ট্রপিক্যাল মেডিসিনের অধিকর্তাসহ ৩৩ জন এবং পাভলভ হাসপাতালের সাত চিকিৎসকও ইস্তফা দিয়েছেন। চলমান পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় বিশিষ্ট ফিজিশিয়ান ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যের পাঁচ বিশিষ্ট চিকিৎসক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিকর্তা (শিক্ষা) ডা. প্রদীপ মিত্র এনআরএসে চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চে যান। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা পৌঁছে দিয়ে তিনি ধর্মঘটকারীদের প্রতিনিধিদলকে রাজ্যের প্রশাসন ভবনে ডেকে পাঠান। তবে মুখ্যমন্ত্রীকেই এনআরএস হাসপাতালের ধর্নামঞ্চে আসতে হবে এবং তার যাবতীয় মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে হবে- এ দাবিতে অনড় থাকেন ধর্মঘটকারীরা।
ডা. সুকুমার মুখোপাধ্যায় জানান, শনিবার বিকেল ৫টায় ফের বৈঠক হবে।
মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম ডা. অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, যেভাবেই হোক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া দরকার। এদিন বিকেল পাঁচটায় শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ফের সময় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে আমরাও থাকব। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার আহত চিকিৎসকদের দেখতে হাসপাতালে যান রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি।
এদিকে চিকিৎসক নিগ্রহ ইস্যুতে শুক্রবার বিকেলে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাস্তায় নামেন কয়েক হাজার চিকিৎসক। তারা ছাড়াও মিছিলে পা মেলান তারকা অপর্ণা সেন, দেবজ্যোতি মিশ্র ও রূপম ইসলামসহ অনেকেই। পাশাপাশি বাংলার চিকিৎসক ধর্মঘটকে সমর্থন জানিয়ে সর্বভারতীয় আইএমএর ‘ধিক্কার দিবস’কে কেন্দ্র করে সরকারি হাসপাতালের আউটডোর বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান বিহার, উড়িশ্যা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, হায়দরাবাদ, গোয়া ও তামিলনাড়ৃসহ বিভিন্ন রাজ্যের চিকিৎসকরা। এছাড়া জাপানসহ অন্যান্য দেশের চিকিৎসকরাও পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে এক হয়েছেন।
সোমবার (১৭ জুন) এই ইস্যুতে সারা দেশে চিকিৎসক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে সর্বভারতীয় আইএমএ।
শুক্রবার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আউটডোর পরিষেবা পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন রোগীরা। এছাড়া বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাতে জুনিয়র চিকিৎসকেরা অবস্থান বিক্ষোভ তুলে নিলেও শুক্রবার বিকেল থেকে ফের তারা অবস্থানে বসেন। রাজ্যের মেদিনীপুর জেলার মেডিকেলে ওইদিন আউটডোর আংশিক খোলা ছিল। যদিও শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত ছিলো। তবে পরিষেবা ঠিকমতো না মেলায় অনেক রোগীই এদিন ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
অন্যদিকে শিক্ষানবিশদের বাঁধায় শুক্রবার বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর খোলা যায়নি। পাশাপাশি ইনডোরের পরিষেবাও ব্যহত হয়। এর প্রতিবাদে রোগী এবং তাদের আত্মীয়রাও হাসপাতালের সামনের রাস্তা অবরোধ করেন। এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে হাওড়ার সিউড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ৬৭ জন চিকিৎসকের ইস্তফা নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা ইস্তফাপত্র দেননি। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের ৫৫ জনের মধ্যে ৫০ জন চিকিৎসকই গণইস্তফা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর হুমকির প্রতিবাদে জেলা হাসপাতালের ৫০ জন চিকিৎসক গণইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। চিকিৎসক ধর্মঘটের জেরে শুক্রবারও দু’মাসের শিশুসহ দুই রোগীর মৃত্যুও হয়েছে।
এছাড়া কলকাতার পিজিতেও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুরের এক ব্যক্তির বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ফলে চিকিৎসা ব্যবস্থার নৈরাজ্য কবে কাটবে এখনই বলা মুশকিল। পাশাপাশি কলকাতার এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিকিৎসকদের মধ্যে ধর্মঘটের দানা বাঁধছে গোটা ভারতে। কিন্তু এখনও সে ভাবে দানা বাঁধেনি বেসরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে। তবে সরকার যদি বিষয়টা ভালোভাবে না মেটাতে পারে, তাহলে এ ধর্মঘট চলতেই থাকবে। যার ফলে বড় ধরনের সমস্যায় পড়বেন দেশি-বিদেশি রোগীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৯
ভিএস/এসএ