ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভারত

অভিজিতের নোবেল জয়ে গর্বিত কলকাতার বাঙালিরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৯
অভিজিতের নোবেল জয়ে গর্বিত কলকাতার বাঙালিরা

কলকাতা: অমর্ত্য সেন, মুহম্মদ ইউনুস-এর পর এবার অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন আরেক বঙ্গসন্তান অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে তার স্ত্রী এস্থার দুফলো ও মাইকেল ক্রিমার। 

দারিদ্র্য দূরীকরণ নিয়ে গবেষণার জন্যে তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দ্য রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই ত্রয়ীর গবেষণা গোটা বিশ্বে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়ার নতুন হাতিয়ারের সন্ধান দিয়েছে।

স্বভাবতই খুশি অভিজিতের মা নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছেলে আজ বিশ্বজয় করেছেন। দক্ষিণ কলকাতার হিন্দুস্থান পার্কের বাড়িতে বসে তার মা নির্মলা বললেন, আমার ছেলে নয়, দেশের ছেলে অভিজিৎ।  

স্পষ্টতই ছেলের সাফল্যে গর্বিত মা অর্থনীতির অধ্যাপক নির্মলা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, প্রথমে সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পড়তে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয় অভিজিৎ। কিন্তু পরবর্তীতে পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য বেছে নেন অর্থনীতিকে।

বাঙালি সন্তানের ফের নোবেল জয়। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নোবেল জয়ের খবর পাওয়া মাত্র-ই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইটারে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, অর্থনীতিতে নোবেল জয়ের জন্য অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন। আরেক বাঙালি দেশকে গর্বিত করলেন। আমরা উচ্ছ্বসিত। জয় হিন্দ। জয় বাংলা।

বাঙালি হিসেবে অভিজিতের অর্থনীতিতে নোবেল জয়ের খবরে নিজের উচ্ছ্বাস চেপে রাখেননি পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও।  

তিনি বলেন, আমরা গর্বিত। অমর্ত্য সেনের পর ভারতের দ্বিতীয় বাঙালি হিসেবে অর্থনীতিতে নোবেল জয়। অবশ্যই গর্বের বিষয়।

বাঙালির নোবেল জয়ে ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক তথা গোয়েঙ্কা কলেজ অব কমার্সের শিক্ষক প্রফেসর ইমানুল হক বলেন, বাঙালি হিসেবে যথেষ্ট গর্ববোধ করছি। অভিনন্দন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হলেও অর্থনীতি চর্চার যে উন্নতি হচ্ছে, অভিজিৎ তার-ই প্রমাণ।

পড়ুন>>চতুর্থ বাঙালির হাতে এবার অর্থনীতির নোবেল

শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, আমি বাঙালি হিসেবে নিশ্চয়ই গর্বিত। তার গবেষণা মনুষ্যের মনিহার নতুন সংযোজন। বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বড় সমস্যা। নোবেল পাওয়া মানে মানুষের জ্ঞানকেই সমৃদ্ধি করছে। ভারতে অর্থনীতি জ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে। এও কম গর্বের কী একজন ভারতীয় হিসেবে।  

‘প্রশাসন যদি অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সূত্র ধরে চলতে পারে আগামীতে ভারতের দরিদ্রতা মুক্তি পাবে বলে আমার বিশ্বাস। ’

ইতিহাসবিদ মহম্মদ সাদউদ্দিন বলেন, এ আনন্দ মুখে প্রকাশ করার নয়। বাঙালি সন্তান হিসেবে অমর্ত্য সেন, মুহম্মদ ইউনুসের পর অভিজিৎ। আমি বাঙালি তাই গর্বিত। মোদী সরকারের নোট বাতিল, জিএসটি, এফডিআই (ফরেন ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট) এবং বেসরকারিকরণ নীতিতে অমর্ত্য সেনের পাশাপাশি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ও প্রকাশ্যে বিরোধিতা করেছিলেন। ’

‘তিনি বলেছিলেন, খুব শিগগিরই ভারতের অর্থনীতি পড়বে। আজ অমরা টের পাচ্ছি। ’

একই সুর শোনা গেলো লেখক ও গবেষক সুকুমার দেবনাথের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, অভিজিৎবাবু ভারতের নোট বাতিলের চরম বিরোধিতা করেছিলেন। তার আশঙ্কা ছিল এতে ভারতের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে। সেটা কিন্তু  সত্যি প্রমাণ হলো। জিডিপি বিগত ছয়বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আর্থিক বৃদ্ধিতে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।  

এই মুহূর্তে ফোর্ড ফাউন্ডেশনের আন্তর্জাতিক অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৯৬১ সালে মুম্বইয়ে তার জন্ম। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছিলেন কলকাতার সাউথ পয়েন্ট স্কুলে। ১৯৮১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক হন তিনি। সেই বছরই স্নাতকোত্তর পড়তে যান দিল্লির জেএনইউ-তে (জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়)। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তার গবেষণার বিষয় ছিল ইনফরমেশন ইকোনোমিক্স।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় জাতিসংঘেও গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। অর্থনীতি বিষয়ে তার লেখা চারটি বই বিশ্বজুড়ে সমাদৃত। তার মধ্যে ‘পুওর ইকোনোমিকস: অ্য র‌্যডিক্যাল রিথিংঙ্কিন অব দ্য ওয়ে টু ফাইট গ্লোবাল পোর্ভাটি’ বইটি গোল্ডম্যান স্যাকস বিজনেস বুক সম্মানে ভূষিত হয়।  

এছাড়া এবার এই বইটির দিল্লিতে পরবর্তী সিরিজ প্রকাশ হবে বলেই জানালেন নোবেলজয়ী অভিজিৎ-এর মায়ের কথায়।  

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
ভিএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।