করোনা প্রতিরোধে মমতার প্রথম পদক্ষেপ ছিল, ১৬ মার্চ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত সরকারি, বেসরকারি সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। মাদ্রাসা, আইআইটি খড়্গপুর, বিশ্বভারতীর মতো উল্লেখযোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও এর আওতায় পড়ে।
এদিকে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসায় আগেভাগেই সরকারি হাসপাতালসহ বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষ আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। কোনো হাসপাতাল আক্রান্ত রোগীকে ফিরিয়ে দিলে তার লাইসেন্স বাতিল করার নির্দেশও জারি করা হয়েছে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র অতি ছোট নার্সিংহোমগুলোকে। পুরো বিষয়টির ওপর কড়া নজর রেখেছে রাজ্য সরকার।
এছাড়া পোস্টার, টেলিভিশন ও সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত ‘করোনায় করণীয় কী?’ নামে সচেতনমূলক বিজ্ঞাপন চালু করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় সরকার বাদেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিজ অর্থায়নে কলকাতা বিমান বন্দরে দুটি থার্মাল স্ক্যানার বসিয়েছে রাজ্য সরকার। কলকাতা পোর্টেও বাড়তি নজর রাখা হয়েছে।
এদিকে বিশেষ প্রস্তুতি হিসেবে করোনা আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে শহর থেকে দূরে, বিমান বন্দরের কাছে রাজারহাটে নবনির্মিত হাসপাতাল চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটকে আপাতত দখলে নিয়েছে মমতা সরকার। নির্দেশ অনুযায়ী, দমদম বিমানবন্দর থেকে সেখানে নেওয়া হচ্ছে বিদেশফেরত যাত্রীদের। চিকিৎসক, হাসপাতালের কর্মী ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী ছাড়া এ হাসপাতালে বাইরের কারও প্রবেশ নিষেধ। এখানে ২৪ ঘণ্টার জন্য আরএমও ও নার্সরা দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়া আছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও মেডিক্যাল টেকনিশিয়ানরা। এখানে দুটি শয্যার মধ্যে এক মিটারের বেশি ব্যবধান রাখা হয়েছে।
এখানেই শেষ নয় এরই মধ্যে এ খাতে ২০০ কোটি রুপির তহবিল গঠন করেছে মমতা সরকার। এছাড়া যে সমস্ত ডাক্তার, নার্স, সুইপার এ কেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত তাদের জন্য বাড়তি ৫ থেকে ১০ লাখ রুপির বীমাও চালু করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতাল ছাড়া এখন পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে নজরবন্দি আছেন প্রায় ১২ হাজার মানুষ। যাতে আতঙ্ক না ছড়ায় সে জন্য এসব ব্যাপারে বিস্তারিত খবর প্রকাশ করছে না সরকার।
এছাড়া রাস্তার মোড়ে মোড়ে চলছে করোনা প্রতিরোধে সচেতনাতমূলক প্রচার। বিলি করা হচ্ছে মাস্ক ও সাবান। ফেক নিউজ না করার ব্যাপারে নজর দেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিতদের সরাসরি সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বলা হচ্ছে।
এসবের বাইরেও গণজমায়েতের মধ্য দিয়ে যাতে করোনা ভাইরাস ছড়াতে না পারে সে জন্য জিম, সুইমিংপুল, সিনেমা হল, শুটিং, রাজনৈতিক জমায়েত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ধর্মীয় প্রার্থনার জায়গা- মন্দির, মসজিদ, গির্জা গুরুদুয়ারার মত স্থানগুলোও বন্ধ করার অনুরোধ করা হয়েছে। এরই মাঝে সে অনুরোধে সাড়া দিয়েছে সব ধর্মের মানুষ।
পশ্চিমবঙ্গে কেবলমাত্র গত ১৫ মার্চ লন্ডন থেকে ফেরা ১৮ বছর বয়সী একজনের দেহে করোনা ভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে ওই আক্রান্তের বাবা-মা ও তাদের গাড়ি চালককে শহরের একটি হাসপাতালের আইসোলেটেড ওয়ার্ডে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
বুধবার (১৮ মার্চ) পর্যন্ত ভারতে ১৫৩ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৫ জন বিদেশি নাগরিক। এছাড়া এখন পর্যন্ত এ রোগে দিল্লি, কর্নাটক ও মহারাষ্ট্র ৩ ভারতীয়র মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সরকারি খরব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০০ জন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে গেছেন। অন্যদিকে করোনা আশঙ্কায় সারা ভারতে ৬৯ হাজার ৪৩৬ জনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২০
ভিএস/এইচজে