কলকাতা: করোনা ভাইরাস মহামারি একঘরে করে দিয়েছিল পুরো বিশ্ব। এখনও সেভাবে স্বাভাবিক হয়নি কোনোকিছুই।
কিন্তু এখনই কী সে সুবিধা পাওয়া যাবে এসে? কলকাতার হাসপাতালগুলো তো বলছে, এখন অর্থাৎ চলতি বছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বরে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা নিতে না আসাই ভালো হবে। ভালো হবে নতুন বছরে এলে। অবশ্য এর পেছনে যৌক্তিক কিছু কারণও দেখিয়েছে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলো।
কলকাতার বেসরকারি হাসপাতলগুলোর কর্তৃপক্ষদের মতে, বর্তমানে সব হাসপাতালে বেডের সংখ্যা একবারে নেই বললেই চলে। এছাড়া দুর্গাপূজার পর রাজ্যে করোনা ভাইরাস সুনামির মতো আকার ধারণ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে ‘ওনাম’ উৎসবকেই তুলে ধরছেন তারা।
সেপ্টেম্বরে কেরালায় ছিল সেখানকার প্রধান উৎসব ‘ওনাম’। এক উৎসবের কারণে গোটা রাজ্যের ওপর আছড়ে পড়েছে করোনা সুনামি। ৩০ জানুয়ারি কেরালায় প্রথম ধরা পড়েছিল করোনা। যা ভারতের নিরিখে ছিল প্রথম। তবে আবার কেরালাই করোনা নির্মূল হিসেবে গোটা ভারতের কাছে উদাহরণ হয়ে উঠেছিল সম্প্রতি। কিন্তু ওনাম উৎসবের মধ্য দিয়ে মহামারি ফিরেছে রাজ্যটিতে।
পশ্চিমবঙ্গেও এটাই হতে পারে, বলা যেতে পারে এরচেয়েও ভয়ঙ্কর হতে পারে। আর তার আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে পূজার আগে শপিংয়ের ভিড় দেখেই। এ মুহূর্তে নিউমার্কেট, গড়িয়াহাটে ক্রেতাদের যে কেনার বহর, এই রেশ বা ভিড় পূজার সময় বহাল থাকলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। যদিও সামাল দিতে ইতোমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছে রাজ্যের চিকিৎসকমহল। তাই এখনই বাংলাদেশি রোগীদের না আসা ভালো হবে বলে মনে করছেন তারা।
ভারতে করোনার থাবা চললেও লকডাউন নেই এখন। অনেকটা স্বাভাবিক হচ্ছে জনজীবন। পিছিয়ে নেই কলকাতাও। পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য চালু হয়েছে চিকিৎসা ভিসা। ধীরে ধীরে কলকাতার হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে।
সাধারণত চিকিৎসার কারণে প্রচুর বাংলাদেশি আসেন ভারতে। তথ্য বলছে, বছরে প্রায় চার লাখ বাংলাদেশি শুধু কলকাতায় আসেন চিকিৎসার জন্য। এর অন্যতম কারণ পূর্ব ভারতে কলকাতাতেই গড়ে উঠেছে মেডিক্যাল হাব। কলকাতার সল্টলেকসহ, ইএম বাইপাস থেকে মুকুন্দপুর সংলগ্ন এলাকায়। ছোট বড় হাসপাতালসহ ভারত সরকারের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সুপার স্পেশাল হাসপাতালও।
এরমধ্যে অন্যতম টাটা ক্যানসার, অ্যাপোলো, ফরটিস, ডিসান, রুবি, আরএন টেগোর বা আরএনটি, মেডিকা এবং পিয়ারলেস হাসপাতল। এর বাইরে কলকাতায় আরও কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে আসেন বাংলাদেশিরা। তারমধ্যে বেশি ভিড় থাকে বিএম বিড়লা, সিএমআরআই, উডল্যান্ড এবং নারায়ণীর মতো হাসপাতালগুলোতে।
আবার ট্যুরিজম স্ট্যাটেস্টিক বলছে, ভারতে আসা প্রতি পাঁচজন বিদেশির মধ্যে একজন বাংলাদেশি। গড়ে প্রতিবছর কম করে হলেও চার লাখ বাংলাদেশি ভারতে আসেন চিকিৎসার জন্য। ভারতের ইমিগ্রেশন তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৯২৯ বিদেশি এসেছেন ভারতে। এরমধ্যে দুই কোটি ২৫ লাখ ৬৭৫ জন ছিলেন বাংলাদেশি।
করোনা ভাইরাসের কারণে গত ছয়মাস আসতে পারেননি বাংলাদেশিরা। সবে আসতে শুরু করেছেন। তবে বাণিজ্যিক লাভ হলেও এখনই না আসুক বাংলাদেশিরা এমনই চাইছে হাসতালগুলো। আর যা-ই হোক কোয়ালিটির সঙ্গে কোনোভাবেই কম্প্রোমাইজড করা যাবে না বলে হাসপাতালগুলো অনেক বাংলাদেশির বুকিং ফিরিয়ে দিচ্ছে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০২০
ভিএস/টিএ