কলকাতা: কলকাতার বাঙালির কাছে দুর্গা পূজা মানেই একটা আবেগ। যাকে কেন্দ্র করে উঠে আসে অনবদ্য সব শিল্প-ভাবনা।
এর মধ্যে অন্যতম দক্ষিণ কলকাতার বেহালা অঞ্চলের বড়িশা ক্লাব। করোনাকালে এবার তাদের থিম ‘মারীর দেশে, ত্রাণের বেশে, অন্নপূর্ণা ভেলায় ভেসে’।
করোনাকালে পরিযায়ী শ্রমিকদের অসহায়তার রূপ দেখেছে ভারতবাসী। ভিন রাজ্যে কাজ এবং মাথার উপর ছাদ হারিয়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পার করে শ্রমিকরা পাড়ি দিয়েছিলেন গন্তব্যে। কেউ রাস্তাতেই প্রাণ হারিয়েছিলেন। অনেকেই আবার ক্লান্ত হয়ে রেললাইনের উপর শুয়ে কাটা পড়েছিলেন ট্রেনে। আবার অনেকে খিদের চোটে ছটফট করতে করতে রাস্তাতেই পড়েছিলেন। সন্তানের মুখে দুই মুঠো ভাত তুলে দেবেন বলে শ্রমিকদের কাতর স্বরে ভিক্ষা করতেও দেখা গিয়েছিল।
এসবই দেখেছিল ভারতবাসী। মানুষের সেই কষ্টকেই পূজার থিমে ফুটিয়ে তুলেছে বেহালার এই বড়িশা ক্লাব। এখানে দুর্গাকে দেখা যাবে দুই রূপে। দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নয়। তাই দেবীর হাতে কোনো অস্ত্র নেই। দেবী এখানে এক পরিযায়ী শ্রমিকের বেশে। যে খিদের জ্বালায় সন্তানকে কোলে নিয়ে ত্রাণের আশায় ঘুরছেন। অন্য রূপে দেখানো হয়েছে দেবী অন্নপূর্ণা রূপে সহযোগিতার জন্য সূর্যের মধ্যখান দিয়ে প্রকট হচ্ছেন।
পূজা উদ্যোক্তারা জানাচ্ছেন, এবারের বাজেট তাদের বেশি নয়। তাই বাঁশ ও চালের বস্তা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ। পূজার থিম ভাবনা শিল্পী রিন্টু দাসের। তিনি জানান, খবর খুললেই দেখতাম কত লোক করোনায় আক্রান্ত। কত লোক করোনায় মারা গেছেন। কত পরিযায়ী শ্রমিক খাবার পাচ্ছেন না। রাতের পর রাত এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য বাড়ি ফেরার তাড়নায় হাজার হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটেছেন। খেতে পাননি। দ্বারে দ্বারে খাবারের জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন কত শ্রমিক। সেখান থেকেই এই ভাবনা।
পূজার ক্লাব সভাপতি সুদীপ পল্লো বলেন, একটা সময় ভাবছিলাম এবারে পূজাটা কী প্রকারের হবে। লকডাউনের সময় শিল্পী রিন্টু দাসের সাথে প্রায়ই এই নিয়েই কথা চলতো। শিল্পীও বলতেন ক্লাবের সাথে আলোচনা করো কী পরিকল্পনা হয় দেখো। আমি বললাম, ত্রাণের জন্য আমরা ৩০ হাজার কেজি চাল কিনেছিলাম সেসব বস্তা আছে, তাই দিয়ে কি কিছু করা সম্ভব? তখন শিল্পী বলল যে ত্রাণই ফুটে উঠবে এবারের ভাবনায়। সেই ভাবনাতে এবারে আমাদের ক্লাবের এই থিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০২০
ভিএস/এমজেএফ