কলকাতা: কলকাতার নিউমার্কেট। কেনাকাটার সবচেয়ে জনপ্রিয় অঞ্চল।
রিয়াজুল হোসেনের ছোট্ট দোকান নিউমার্কেটের ভেতর। লকডাউনের আগেও চুটিয়ে থ্রি-পিসের ব্যবসা করেছেন। লকডাউন কার্যত পেটের ভাত মেরেছে। ঈদ ও পূজায় কাপড়ের ব্যবসায় লাভ হয়নি। ভরসা এখন বড়দিনে। এসময় থ্রি-পিসের ব্যবসা ভালো হয় না। তাই পেট চালাতে ক্রিসমাসে পসরা পেতেছেন জিংগেল বেল, ক্রিসমাস ট্রি, নানা রকমের স্টার ও ঘর সাজানোর জিনিসে। কিন্তু ক্রেতা কই! তাই বিক্রি নেই। জমছে না বড়দিনের ব্যবসাও।
একই অবস্থা বাবলু হালদারের। ক্রিসমাস উপলক্ষে নানা ধরনের কেক, লজেন্স, সান্তাক্লজের আদলে পুতুল, সান্তা টুপির পসরা নিয়ে বসেছেন। বিক্রি হলেও এখন লাভের মুখ দেখতে পাননি বাবলু। বড়দিনের নিউমার্কেটও কার্যত ফাঁকা এবং ফিঁকে।
নিউমার্কেটে বড়দিনের বাজার সাজিয়ে বসা বিক্রেতাদের কমবেশি ওই বাবলু, রিয়াজুলের মতোই অবস্থা। কেকের দোকান হোক কিংবা ক্রিসমাসে ঘর সাজানোর সরঞ্জাম, বিক্রিবাট্টা তেমন নেই এবার।
রিয়াজুল বলেন, এবার ঈদের বাজারও জমেনি, পূজার বাজারও জমেনি। করোনা ভয় কাটিয়ে মানুষজন বের হচ্ছেন পথে। ভেবেছিলাম ক্রিসমাসে মার্কেট ভালো হবে। কিন্তু কোথায় আর কী! সবকিছুর দাম বেড়েছে। কিন্তু, বাড়তি দাম চাইলে ক্রেতারা দরাদরি করেন। লাভ কিছুই হচ্ছে না! পুরোটাই লোকসান!
ক্রিসমাসে কেক আর ঘর সাজানোর পাশাপাশি কলকাতায় প্রতিবছর বড়দিনে ডিমান্ড থাকে টার্কির মাংসের। বিশেষ ধরনের বিশালাকার এই প্রজাতির মুরগির মাংস খুবই সুস্বাদু হয় খেতে। এই সময় শহরে ঢোকে প্রচুর টার্কি। উত্তরপ্রদেশ থেকে আসে টার্কি বোঝাই গাড়ি। করোনা পরিস্থিতিতে তাও আসছে না। যা আসছে তার দামও বাড়তি।
নিউমার্কেট, কলকাতা করপোরেশন লাগোয়া ফুটপাতে দেখা মেলে এই বিশেষ মুরগি প্রজাতির। কিন্তু এবছর সে বাজার সেভাবে বসেনি। তবে নিউমার্কেটের ভিতর মুরগী পট্টিতে হাতেগোনা কয়েকটি টার্কি বিক্রি হচ্ছে। তাও ফার্মের। তাই মন ভালো নেই রহমানের। অন্য বছর বড়দিনের আগে তিনি টার্কির ব্যবসা করেছেন। কিন্তু এবছর আর করে উঠতে পারেননি। তাই ফলের উপর ভরসা রেখে ডালা সাজিয়ে বসেছেন রহমান।
রহমানের কথায়, গতবছর ৬শ রুপি কিলো দরে উত্তরপ্রদেশ থেকে টার্কি কেনা হয়েছিল। তারপর নিউমার্কেটে নিয়ে আসতে সব খরচ মিলিয়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ রুপি লেগে যায়। বিক্রি হয় এক হাজার রুপি কিলো দরে। এবার আমদানি করতেই প্রায় হাজার রুপি কিলো লেগে যাচ্ছে। বিক্রি করতে গেলে ১৫শ রুপির মতো পড়ে যাবে। তাই তল্লাটে সেভাবে কেউ টার্কি তোলেনি। হোটেলে বা রেস্তোরাঁর প্রয়োজনে কিছু নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ কিনছে না।
ঈদ, দুর্গাপূজায় এবার ব্যবসা হয়নি এখানকার বিক্রেতাদের। আশা ছিল বছরের শেষ অনুষ্ঠান ক্রিসমাসে বাজার জমবে। কিন্তু করোনাকালে বড়দিনের নিউমার্কেট একপ্রকার জৌলুসহীন। বাজারে কোথাও নেই উৎসবের আমেজ। ‘আগামীবছর সুদিন ফিরবে’, এখন এই আশায় দিন গুনছেন কলকাতার নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২০
ভিএস/এএ