কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে আগামী সপ্তাহে। তার আগেই বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সরগরম হয়ে উঠেছে রাজ্য রাজনীতি।
দক্ষিণ ২৪পরগনার নামখানা এবং কাকদ্বীপ থেকে যখন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনায় মুখর, তখন জেলার পৈলান থেকে এক কর্মীসভায় অভিষেক এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আক্রমণের জবাব দিচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ও তার ছেলে জয় শাহকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করে।
একইদিনে রাজ্যজুড়ে ‘রেলরোকো’ কর্মসূচি পালন করেছে বামেরা। গত ১১ ফেব্রুয়ারি বাম ছাত্র-যুবাদের ডাকা নবান্ন অভিযানে অংশ নেওয়া কর্মী মইদুল মিদ্দার মৃত্যুর প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করে বামেরা।
এদিন দক্ষিণ পৈলানের কর্মীসভা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আক্রমণের জবাব দেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে জয় শাহের আয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন করেন মমতা। অমিত শাহের প্রশ্নে মমতা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জন্য কোনো অর্থ দেয়নি কেন্দ্র। আবার গঙ্গাসাগর দেখতে গিয়েছেন একজন নেতা। তিনি নামেই বিজেপির দুই নম্বর। নাম (অমিত শাহ) বলব না। তিনি বলেছেন, গঙ্গাসাগর ইতনা খারাপ। কোথায় ছিলে এতদিন? একটা সময় লোক যাওয়ার যোগ্য ছিল না সেখানে। কেন্দ্রে ক্ষমতায় রয়েছ, একটা পয়সা দিয়েছে তার জন্য? নোটবন্দি করেছ, ঘরবন্দি করেছ, পেট্রলের দাম বাড়িয়েছ, দাঙ্গা করিয়েছ। আর খালি পিসি-ভাতিজা করছে। আগে আমার ভাতিজার সাথে লড়াই করে দেখাও। তারপর আমার সঙ্গে লড়বে। বলি তোমার ছেলে (জয় শাহ) কী করে ক্রিকেটের মাথায় বসল? কী করে কোটি কোটি টাকা করল?
অমিত শাহকে উদ্দেশ্য করে মমতা আরও বলেন, বলছে এখানে দুর্গাপূজো করতে দেয় না মমতা। ওদের নেতারা তো দুর্গা কে তাই জানে না। খালি বড় বড় কথা। হিন্দু ধর্ম দেখাচ্ছেন। আমাদেরও হিন্দু ধর্ম শেখাবেন? আমরা কি হিন্দু নই? কান ধরে হিন্দু ধর্ম কি শিখিয়ে দিতে পারি। এখানে স্বামী বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণ, সারদা মায়ের জন্ম। চোরের মায়ের আবার বড় গলা। সবচেয়ে বড় চোর নিজে। বলছে বাঙ্গাল জিতবে। কী করে জিতবে? শুধু কলা পাবেন। গত বিধানসভায় যত ভোটে জিতেছি তার চেয়ে বেশি ভোটে জিতব। মিলিয়ে নেবেন।
মমতা বলেন, অভিষেক আমার ভাতিজা কিন্তু ও বিশেষ গুরুত্ব পায় না আমার কাছে। ও একসময় কংগ্রেসের পতাকা নিয়ে আমার সাথে মিছিল করতো। তার জন্যই ওকে রাজনীতিতে এনেছি। আর তোমাদের ছেলেমেয়েরা তো বিদেশে চলে যায়। আমাদের ছেলেমেয়েরা এই মাটিতে থেকে লড়াই করে। সবকিছুতে অভিষেককে কেন জড়ান? কই আমি তো তাকে রাজ্যের উপ-মুখ্যমন্ত্রীও করিনি। এমনকি দলের সভাপতিও করিনি। আগুন নিয়ে খেলবেন না। আমার সঙ্গে পেরে উঠবেন না।
এদিকে যখন অমিত-মমতা একে অপরকে বাক্যবাণে বিদ্ধ করছেন তখন মইদুলের মৃত্যুর প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে ‘রেলরোকো’ কর্মসূচি পালন করলো বামেরা ছাত্র-যুবরা। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-যুবদের ডাকা নবান্ন অভিযানে পুলিশেরর বেধড়ক লাঠিচার্জে মৃত্যু হয় যুবনেতা মইদুল মিদ্দার।
অফিস টাইমে বিভিন্ন জায়গায় হাওড়া-শিয়ালদহগামী ট্রেন বন্ধ করে দেয় তারা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। ফলে দিনভর ভোগান্তি আর নেতাদের কথার যুদ্ধে কলকাতার আবহাওয়া ছিল গরম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০২১
ভিএস/এমজেএফ